গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির নতুন প্রস্তাব মেনে নিয়েছে হামাস। সংস্থাটি এ বিষয়ে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদেরও জানিয়েছে। তাদের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গোটা বিষয়টিই এখন ইসরায়েলের হাতে।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস যে প্রস্তাবে রাজি হয়েছে তা ‘ইসরায়েলের মৌলিক শর্তগুলো থেকে অনেক দূরে’। এ নিয়ে আলোচনা চলবে। মূলত জিম্মি ও বন্দি মুক্তি ও যুদ্ধে বিরতি দেওয়া নিয়েই সাজানো হয়েছে নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি।
গত সোমবার সন্ধ্যায় হামাস এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানায়, তাদের রাজনৈতিক শাখার নেতা ইসমাইল হানিয়া কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও মিসরের গোয়েন্দা প্রধানকে নিজেদের অনুমোদন সম্পর্কে জানিয়েছেন।
নতুন ওই প্রস্তাব সম্পর্কে অবহিত এক জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, শর্ত পূরণ হলে হামাস ‘সারা জীবনের জন্য শত্রুতামূলক কার্যকলাপ’ বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। হামাস যে আগামীতে তার সশস্ত্র সংগ্রাম সমাপ্তির কথা বিবেচনা করতে রাজি, সেদিকেই ইঙ্গিত করছে বিবৃতির ওই অংশটি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
বিবিসির খবর বলছে, এবারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি দুই ধাপের। প্রতিটি ধাপ ৪২ দিন স্থায়ী হবে। প্রথম ধাপে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা নারী ইসরায়েলি যোদ্ধাদের মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ৫০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। সেসব বন্দির কেউ কেউ যাবজ্জীবন সাজার আওতায় রয়েছেন।
জিম্মি ও বন্দিবিনিময়ের সময় ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজায় থাকবে। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ১১ দিনের মধ্যে ইসরায়েল গাজা ভূখণ্ডের কেন্দ্রে যেসব সামরিক স্থাপনা গড়ে তুলেছে, সেগুলো ভেঙে ফেলার কাজে হাত দেবে। এ ছাড়া গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে যে উপকূলীয় প্রধান সড়ক সালাহ-আল-দীন রয়েছে, সেটি থেকেও সেনা প্রত্যাহার করে নেবে ইসরায়েল। এরপর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, গাজার অবরোধ সম্পূর্ণ তুলে নেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়টি শেষ হওয়ার কথা বলা হয়েছে চুক্তিতে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, সব সিদ্ধান্ত এখন ইসরায়েলের নিতে হবে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হবে না কি এতে বাধা দেবে, তা তাদেরই জানাতে হবে।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, হামাসের বিবৃতির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গাজায় মানুষকে উদযাপন করতে দেখা গেছে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি আদৌ হবে বলে মনে হচ্ছে না। উল্টো ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা রাফায় অভিযান চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা বলেছে যে, যুদ্ধের লক্ষ্যগুলোকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হামাসের ওপর সামরিক চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি ট্যাংক প্রবেশ করতে দেখা যায়। ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, তারা রাফার পূর্বের এক এলাকায় হামাস সন্ত্রাসীদের নির্মূলের জন্য সুনির্দিষ্ট একটি অভিযান পরিচালনা করছে। পরে জানা যায়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা ও মিসরের মধ্যকার রাফা সীমান্ত পারাপারের এলাকাটি নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। এর আগে রাতভর তারা অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে বলেছেন, হামাস যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে তা আসলে মিসরীয় প্রস্তাবের এক ‘দুর্বল’ সংস্করণ, যা ইসরায়েল মেনে নিতে পারেনি।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির চুক্তি প্রত্যাখ্যানকারী পক্ষ হিসেবে দেখানোর একটি কৌশল বলে মনে হচ্ছে এটিকে।’ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘যদিও হামাসের প্রস্তাবটি ইসরায়েলের মৌলিক শর্ত থেকে অনেক দূরে, তারপরও ইসরায়েলের জন্য যে যে শর্তে চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব, সেগুলো নিয়ে আলাপের জন্য মধ্যস্থতাকারীদের একটি প্রতিনিধি দলকে পাঠাবে ইসরায়েল।’ সূত্র: বিবিসি, আরটি