যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও দক্ষিণ গাজার রাফায় তীব্র গোলাবর্ষণ চালাচ্ছে ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনারা যদি রাফার ওই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রবেশ করে, তা হলে তাদেরকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গিলার্ড এরডান বাইডেনের ওই বিবৃতিকে ‘অত্যন্ত হতাশজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি সম্প্রচার মাধ্যম কান রেডিওকে গিলার্ড এরডান বলেন, যুদ্ধের শুরু থেকে আমরা কৃতজ্ঞ এমন একজন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এটি শোনাটা অত্যন্ত কঠিন ও হতাশজনক।’
তিনি আরও বলেন, যদি ইসরায়েল রাফার গুরুত্বপূর্ণ ও কেন্দ্রীয় এলাকায় প্রবেশ না করতে পারে, যেখানে হাজারো সন্ত্রাসী, জিম্মি ও হামাস নেতারা রয়েছে, তা হলে ঠিক কীভাবে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করব।’
রাফায় রাতভর ইসরায়েলি হামলা হয়েছে– এমন অভিযোগও সামনে এসেছে। তবে এ বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। বার্তা সংস্থা এএফপির সাংবাদিকরা রাফা শহরে ভারী গোলাবর্ষণ হওয়ার কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, শহরের পশ্চিমে হওয়া হামলায় আট ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
ওয়াফার খবরে আরও বলা হয়েছে, রাফা সীমান্ত পারাপারে হামলা হয়েছে। ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) শুধু প্রকাশ্যে জেইটোন নামের একটি অভিযানের কথা জানিয়েছে। ওই অভিযানটি মধ্য গাজার উত্তরাংশে পরিচালিত হচ্ছে। তারা বলেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিমান হামলা চালিয়ে ২৫টি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর স্কট অ্যান্ডারসন বলেছেন, যুদ্ধ শহরের কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
বাইডেনের মন্তব্যের একদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র জানায় যে তারা ইসরায়েলে বোমার চালান স্থগিত করেছে। মূলত রাফায় কী ঘটতে পারে, সে শঙ্কা থেকেই চালান পাঠানো থেকে সরে এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলছেন, ইসরায়েলের নিজেকে প্রতিহত করার মতো প্রস্তুতি যে রয়েছে তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র কাজ অব্যাহত রাখবে।
কায়রোতে আলোচনা
যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ইসরায়েলকে আর ছাড় দেবে না বলে গত বুধবার জানিয়েছে হামাস। কায়রোতে গত মঙ্গলবার থেকে হামাস, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসছেন।
পুরো বিষয়টির সঙ্গে জড়িত এক সূত্রের বরাত দিয়ে মিশরের আল কাহেরা টিভি বৃহস্পতিবার প্রথম ভাগে জানিয়েছে, অমতের জায়গাগুলো নিয়ে কাজ চলছে। চুক্তিতে দুই পক্ষ পৌঁছাতে পারে এমন আভাসও দেখা যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি ওই সূত্র।
তবে হামাসের কাতারে অবস্থিত রাজনৈতিক দপ্তরের সদস্য ইজ্জাত এল-রেশিক গত বুধবার শেষ ভাগে জানান, গত সোমবার হামাস যে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছে, সেটির বাইরে নতুন করে আর কিছু গ্রহণ করবে না তারা।
রেশিক বলেন, ‘ইসরায়েল চুক্তিতে আসার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে না এবং রাফায় অনুপ্রবেশ ও সীমান্ত পারাপার দখলে নেওয়ার বিষয়গুলোকে আড়ালে রাখতে এ আলোচনাকে ব্যবহার করছে।’
গত সোমবার ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাস যে তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়েছে তা মেনে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। কারণ ওই চুক্তির শর্ত অনেকটাই শিথিল করে উল্লেখ করা হয়েছে। হামাসের বিবৃতি নিয়েও তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা কোনো মন্তব্য করেনি তারা।
যুক্তরাষ্ট্র গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, হামাস তাদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সংশোধন করেছে। এই সংশোধনী অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে পারে। হামাসের সর্বশেষ বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা আগেও ওয়াশিংটন বলেছে, দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতি থেকে খুব একটা দূরে নেই। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স