![গাছ কাটলেই বের হয় রক্ত!](uploads/2024/03/09/1709964553.be-jabe-3.jpg)
আমাদের চারপাশে যা কিছু আমরা দেখতে পাই, সেই সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ। কিন্তু পরিবেশকে বুঝতে পারা খুব কঠিন। কারণ আমাদের চারপাশে পরিবেশে এমন অনেক কিছুই আছে যার ব্যাখ্যা এখনো অধরা। মানুষ মরণশীল হলেও পরিবেশ তার সঙ্গে যুগ-যুগান্তর ধরে বহন করে চলেছে হাজারো ইতিহাস এবং রহস্য। আজ আপনাদের জানাব এমনই এক রহস্যময় গাছ সম্পর্কে। তবে তার আগে জানাচ্ছি গাছ নিয়ে কিছু তথ্য।
আমাদের এই পৃথিবীকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণতা দান করেছে সবুজ বৃক্ষরাজি। মানুষের জীবনধারণের জন্য খাদ্যসহ যেসব মৌলিক চাহিদা রয়েছে গাছ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সবগুলো পূরণ করে থাকে। অক্সিজেন তৈরি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, খরা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি থেকে আমাদের রক্ষা করে।
পৃথিবীতে অনেক ধরনের গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে স্বাভাবিক উচ্চতার গাছ যেমন রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে আকাশচুম্বী গাছও। আবার এমন গাছও দেখতে পাওয়া যায় কোনো ডালপালাই থাকে না।
১৯৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর তারক মোহন দাস একটি গাছের অবদানকে অর্থমূল্যে পরিবর্তন করে দেখান। তার হিসাব অনুযায়ী ৫০ বছর বয়সী একটি গাছের অর্থনৈতিক মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৮ হাজার ডলার। এই গাছ থেকে বছরে ২১ লাখ ডলার সমমূল্যের অক্সিজেন পায় মানুষ। প্রাণিসম্পদের জন্য প্রোটিন জোগাড় করে ১ লাখ ৪০ হাজার ডলারের।
মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বরতা বাড়ায় ২১ লাখ ডলারের। পানি পরিশোধন ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে ২১ লাখ টাকার এবং বায়ুদূষণ রোধ করে প্রায় ৪২ লাখ ডলারের। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ ১০ জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ১ বছরের অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করে থাকে। অর্থাৎ আমাদের জীবনধারণের প্রতিটি ক্ষেত্রে গাছ উপকার করে যাচ্ছে। এবার বলছি সেই রহস্যময় গাছ সম্পর্কে।
একটাই কাণ্ড। যার মাথাটা দেখতে অনেকটাই ছাতার মতো। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন সারি সারি বিশালাকার ছাতা মাটিতে পুঁতে রেখেছে কেউ। এই গাছের নাম ড্রাগন ব্লাড ট্রি। বছরের পর বছর ধরে নাকি ড্রাগনের রক্ত বহন করে চলেছে এ গাছগুলো। সে কারণে এদের এমন অদ্ভুত নাম। আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে ক্যানারি দ্বীপে মূলত এদের দেখা যায়। শুষ্ক স্থানে জন্ম বিধায় কাণ্ড আর ডালপালাগুলো প্রসারিত করে বাতাস থেকে আর্দ্রতা গ্রহণ করে বেঁচে থাকতে হয় এদের। তাই এই গাছগুলো ছাতার আকৃতি ধারণ করে।
কেন এদের ড্রাগন ব্লাড ট্রি বলা হয়? গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী, হারকিউলিসকে হেসপেরাইডসের বাগান থেকে তিনটি সোনার আপেল ফিরিয়ে নিয়ে আনতে হতো। এই আপেল পাহারা দিচ্ছিল শতমুখী ড্রাগন ল্যান্ডন। ড্রাগনকে না মেরে আপেল ফিরিয়ে আনা অসম্ভব ছিল।
হারকিউলিসের সঙ্গে যুদ্ধে ড্রাগনের মৃত্যু হয়। ড্রাগনের গাঢ় লাল রক্ত ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। সেই রক্ত থেকেই নাকি এই ড্রাগন ট্রির জন্ম। আর সেই থেকেই ড্রাগনের রক্ত বুকে করে বয়ে নিয়ে চলেছে এই গাছ।
‘ড্রাগন ব্লাড ট্রি’ লম্বায় প্রায় ১৮ মিটার (৬০ ফুট) এবং প্রস্থে ৬ মিটার (২০ ফুট) পর্যন্ত হয়। মজার বিষয় হলো সাধারণ গাছের মতো এই গাছে কোনো বর্ষবলয় তৈরি হয় না। তাহলে কীভাবে বয়স নির্ধারণ করা হয়? জানা যায়, কাণ্ডের সংখ্যা দেখে এর বয়স নির্ধারণ করা হয়।
‘ড্রাগন ব্লাড ট্রি’ ৬৫০ থেকে ৭০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। গাছটি বছরে মাত্র একবার ফুল দেয়। এই গাছে ছোট কুলের মতো টকটকে লাল রঙের ফল হয়। গবাদিপশুকে স্বল্প পরিমাণে তা খাওয়ালে তাদের স্বাস্থ্যের উল্লেখজনক উন্নতি হয়। তবে বেশি খেলে স্বাস্থ্যহানিও হতে পারে।
ড্রাগন ব্লাড ট্রি কাটলে ‘রক্তে’র ধারা বইতে থাকে। তবে যেটাকে রক্ত বলে মনে করা হতো, পরীক্ষা করে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওটা আসলে রেজিন। গাছের এক ধরনের উপক্ষার। গাছের এই রক্তবর্ণ উপক্ষারের উপকারিতা অনেক। এর ঔষধি গুণ রয়েছে।
প্রাচীনকালে এই ‘রক্ত’ দিয়েই পেটের নানা রোগের ওষুধ তৈরি হতো। তাছাড়া বিভিন্ন রঞ্জক হিসেবে, টুথপেস্ট তৈরি করতেও কাজে লাগানো হতো। একটা সময় বিভিন্ন দেশে এই উপক্ষার রপ্তানি করা হতো। মনে করা হয়, বিশ্বখ্যাত স্ট্র্যাডিভ্যারিয়াস বেহালা রাঙাতেও তা ব্যবহার করা হতো।
সেগুনগাছের কচি পাতা ঘসলেও কিন্তু রক্তের খোঁজ মেলে! ক্ষুদে বড়লা নামের আরেকটি গাছ থেকেও এমন লাল রং নিঃসৃত হয়। তবে আমাদের দেশে গাছটি বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় বলা চলে। অন্যদিকে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ‘ড্রাগন ব্লাড ট্রি’ রয়েছে বিলুপ্তির পথে।
কলি