একজন শিশু যার তিন বছর বয়স থেকে অটিজম শনাক্ত হয়েছে। স্বভাবতই শিশুটিকে নিয়ে কারও চিন্তার কমতি নেই তার ওপর সে কথা বলে না। পাঁচ বছর বয়সে সে প্রথম শব্দ উচ্চারণ করল ‘কাগজ’। তবে কথা কম বললেও সেই শিশুটি বেশ সূক্ষ্মভাবে সবকিছুর ছবি আঁকত। পরে দেখা গেল শিশুটি সবার থেকে অনেকটাই আলাদা। কেননা সে খুব অল্প সময়ে দেখা যেকোনো কিছুকে এত সূক্ষ্মভাবে এঁকে প্রকাশ করত, যা দেখলে কারও পক্ষে বিশ্বাস করা সম্ভবই হবে না যে অতি অল্প সময়ে দেখা কোনো দৃশ্যের প্রতিচ্ছবি এটি, তার ওপর সে শিশু।
বলছি ব্রিটেনের বিখ্যাত আর্টিস্ট স্টিফেন উইল্টশিরের কথা যিনি বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত তার চমৎকার ছবি আঁকার দক্ষতার জন্য। ছেলেবেলায় একবার স্টিফেনের বড় বোন এনেট তাকে তার বন্ধুর বাসায় বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল।
যেটি ছিল ১৪ তলার ওপরে। সেখানে নেওয়ার একমাত্র কারণ ছিল স্টিফেন যেন ওপর থেকে খুব সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারে। কিন্তু সেখানে গেলে দেখা যায় স্টিফেন এত ওপর থেকে দেখা সবকিছু পরবর্তীতে খুব সুন্দর করে এঁকে ফেলতে পারছে। এভাবেই শুরু হলো তার নিয়মিত আঁকিবুঁকি। এ যেন এক অদ্ভুত নেশা।
মাত্র আট বছর বয়সে ব্রিটিশ প্রাইম মিনিস্টারের কাছ থেকে কমিশন পান তিনি। যার মুখে সহজে ভাষা আসেনি সে ১৩ বছর বয়সে তার আঁকার প্রথম বই প্রকাশ করেছিল। জনসাধারণ এবং মিডিয়া সেই কিশোরের অবিশ্বাস্য স্মৃতিশক্তিতে মুগ্ধ হয়ে ওঠে। স্টিফেন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন নিউইয়র্কে।
তিনি মাত্র ২০ মিনিটের হেলিকপ্টারে যাত্রা করেছিলেন এবং তারপর ১৯ ফুট লম্বা কাগজের টুকরোতে যা দেখেছিলেন তা স্কেচ করেছিলেন, যা দর্শকরা ওয়েবক্যামের মাধ্যমে লাইভ দেখেছিল। ছবিটি দেখে মনে হচ্ছিল যেন হেলিকপ্টার থেকে নিচের দৃশ্য সবাই দেখছেন।
২০০৬ সালে প্রিন্স চার্লস শিল্প জগতে তার অবদানের জন্য স্টিফেনকে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।
সে বছর তিনি সেন্ট্রাল লন্ডনে তার নিজস্ব গ্যালারি খোলেন। আজ তার ছবি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে দর্শকদের স্বাগত জানায়।
অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের আইকিউ লেভেল বাকিদের থেকে বেশ উন্নত হয়ে থাকে। সমাজব্যবস্থা বা পারিবারিক নিগ্রহতা তাদের সবার থেকে পিছিয়ে রাখে।
স্টিফেনের বোন এনেট সেদিন তার বন্ধুর বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই মূলত আঁকিবুঁকির প্রতি আগ্রহ বাড়ে এবং সেই থেকে এনেট সবসময় তার ভাইয়ের পাশে। বর্তমানে আর্ট গ্যালারির সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন তিনি। এনেট যদি এভাবে পাশে না থাকতেন তাহলে বোধহয় চিত্রশিল্পী স্টিফেনকে কেউ চিনত না। এনেট বলেন, স্টিফেনের শিল্প সেই ভাষাতে কথা বলে যেই ভাষা সবাই বুঝতে পারে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া, ডয়চে ভেলে
কলি