দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ নির্বাচনি ইশতেহারে ১১টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম বলেছেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
রবিবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে ‘আনপ্যাকিং দ্য ইকোনমিক মেনিফেস্টো অব দ্য আওয়ামী লীগ: ট্রেন্ডস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ফর টুমরোস বাংলাদেশ’ শীষর্ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত দুই পর্বের এই সেমিনারে বিভিন্ন প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষকরা।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেনের সঞ্চালনায় প্রথম পর্বের সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। দ্বিতীয় পর্বের সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নির্বাচনি ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর্থিক খাত সংস্কারেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসডিজি অর্জনেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন সুবিধার কথাও বলা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) অনেকে বলেছিল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। তাদের নেতা অন্ধকারে থেকে যা করছেন, তা মোটেই কাম্য নয়। আমরাও চাই তাদের নেতা লন্ডনে না থেকে দেশে আসুক। গত সংসদে অফশোর ব্যাংকিং আইন হয়েছে। ক্যাম্পেইন শুরু হয়ে গেছে। তাতে সাড়া-শব্দ পাচ্ছি। পাচার করা অর্থ ফিরে আসবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অল্প সময়ে যা করতে পেরেছি তাতে ভালো অবস্থানে উঠে এসেছি। দেশে নতুন করে ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে। জার্মান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরবসহ অনেকে এগিয়ে আসছে। কাজেই ওটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। এখন বাংলাদেশ সামনের দিকে নজর দিচ্ছে।’ সুদ মওকুফে জনগণের উপকার হচ্ছে কি না, তা দেখা দরকার
ড. মশিউর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। অর্থনীতির বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ট্যাক্স আদায়ের সিস্টেম যে পর্যায়ে এসেছে তাতে সমস্যা রয়ে গেছে। তা সংস্কার করতে হবে। কারণ যারা ট্যাক্স দেয় তারা বলে ট্যাক্স রেট বেশি। আবার এটা জিডিপির অনুপাতে কম। তা বাড়াতে হবে। সুদ মওকুফে জনগণের উপকার হচ্ছে কি না, তা দেখা দরকার। শিল্প ও রপ্তানি খাত আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, তা দেখা দরকার।
ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীলতায় অনেক কিছু জড়িত। যুদ্ধের নামে ডাকাতরা অতিরিক্ত ১৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছে। এটা না গেলে কেউ বড় কথা বলার সুযোগ পেত না। জিও-পলিটিক্সের কারণে জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার যা বলেছিল তার চেয়ে বেশি কিছু করেছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা দরকার মায়েদের স্বাস্থ্যে। কারণ বাচ্চারা সুস্থ হলে সম্পদে পরিণত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার কার্যকর হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা দরকার।
ড. বিনায়েক সেন তার প্রবন্ধে বলেন, নানা উৎস থেকে নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়ন করা হয়েছে। এটা শুধু নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি নয়, অর্থনীতির স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি বিষয় জড়িত। অর্থনীতির চালচিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, করোনাকালে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৩ শতাংশে নেমে যায়। বাকি সময়ে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। মূল্যস্ফীতি ভালো করলেও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তা বেড়ে গেছে। স্ট্রাকচারাল ট্রান্সফরমেশন হয়েছে। রপ্তানি বাড়লেও তা আশানুরূপ হয় না। ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত কম। সিঙ্গেল ডিজিটে রয়েছে। তা ১৫-১৭ শতাংশে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ১০ বছরে ৫ শতাংশ আনা সম্ভব হবে।
সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত বাড়াতে পারছি না। সমস্যা কোথায় রয়ে গেছে। তাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর আদায় করতে হবে। আর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের মাধ্যমে নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য শেখর দত্ত বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি যমজ ভাইয়ের মতো। একটার সমস্যা হলে অন্যটায়ও ফাটল দেখা দেয়। এখন অর্থনীতিতে অনেক দূর এগিয়েছি। কিন্তু রাজনীতিতে পিছিয়ে আছি। আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন করা হয়েছে রাজনীতির গতিধারায়। এখানে যা তুলে ধরা হয়েছে এর বাইরে কেউ কিছু বলতে পারে না।