চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল গত শনিবার। সেদিন ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা ছিল দেশের কয়েকটি স্থানে। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রাও ছিল ৪০ ডিগ্রিতে। কিন্তু সপ্তাহের বাকি দিনে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কম রেকর্ড হয়েছে। ফলে গরমের অনুভূতি কিছুটা কম ছিল। তবে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) থেকে আবারও তাপমাত্রা ধাপে ধাপে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও হতে পারে। ফলে গরমের তীব্রতা আবারও বাড়বে। তবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় পর্যায়ক্রমে দেশের অধিকাংশ স্থানে স্বস্তি মিলতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক খবরের কাগজকে বলেন, আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা ধাপে ধাপে বাড়তে পারে। ২৯ এপ্রিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৩ ডিগ্রির মধ্যে থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাতের বিষয়ে তিনি বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবর্তন হয়। তবে ১ মে সিলেট অঞ্চলে বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এরপরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। মে মাসের ২ ও ৩ তারিখের পরে ঢাকায়ও বৃষ্টি হতে পারে। এরপরে দেশের অধিকাংশ বিভাগে তাপমাত্রা কমার মতো বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
৪২ জেলায় তাপপ্রবাহ, পঞ্চম দফায় হিট অ্যালার্ট
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের ৪২ জেলার ওপর দিয়ে বিভিন্ন মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৪২ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা থাকায় চুয়াডাঙ্গা (৪২.৪) ও যশোর (৪২.২) অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে থাকায় ১৬ জেলায় তীব্র এবং তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে থাকায় ২৪ জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া রাজশাহীতে জেলার চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (৪১.৯) ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৯.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের কোথাও বৃষ্টিপাতের রেকর্ড নেই।
অপরদিকে, তাপমাত্রা অব্যাহতভাবে বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় পঞ্চম দফায় ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট বা তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সতর্কবার্তায় বলা হয়, দেশে চলমান তাপপ্রবাহ ২৫ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যা আছে
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দিনের তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৫ দিনের পর থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
হিট স্ট্রোকে ট্রাফিক পরিদর্শকসহ ৪ জনের মৃত্যু
অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে ঢাকার ডেমরার ইস্টার্ন হাউজিংয়ের বাসিন্দা মেহেদী হাসান (২৩) নামে এক যুবক মারা গেছেন। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েকবার বমি করার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের খালা ইসরাত জাহান দিবা জানান, ‘আমার ভাগনে মেহেদী হাসানের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন, হিট স্ট্রোকেই মারা গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর মতিঝিলে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় (৪৫) এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে লোকটি অসুস্থ হয়ে পড়ে যান। এ বিষয়ে মতিঝিল থানার এসআই মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকে রুহুল আমিন নামে এক ট্রাফিক পরিদর্শকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি যশোরের বেনাপোল পৌরসভার কোরবান আলীর ছেলে। তিনি সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সরকারি ট্রাফিক পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, স্থলবন্দরে ডিউটি শেষে অফিস কক্ষে এসেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন রুহুল আমিন। তাকে অফিসের গাড়িতে করে চিকিৎসার জন্য শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্তি গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে করে তার মৃত্যু হয়েছে।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় হিট স্ট্রোকে ফাতেমা বেগম (৫৭) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার রাতে ১১টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে বুধবার দুপুরে প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমণ্ডল কৃষ্ণানন্দবকসী গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।