ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

বঙ্গবাজারসহ ৪ প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪, ১১:০৫ এএম
আপডেট: ২৫ মে ২০২৪, ১২:২২ পিএম
বঙ্গবাজারসহ ৪ প্রকল্প উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের স্থানে ১০ তলা বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতান, নজরুল সরোবর, শাহবাগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

শনিবার (২৫ মে) সকাল ১০টার দিকে তিনি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেন।

এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম উপস্থিত ছিলেন।

১০ তলা বিশিষ্ট বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতানে পাঁচটি সাধারণ সিঁড়ি ও ছয়টি অগ্নি প্রস্থান সিঁড়িসহ পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ভবনের ভূমিতলে ১৬৯টি গাড়ি ও ১০৯টি মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে।

পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আট লেনের হবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণি। ৯৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের আওতায় ১০ কিলোমিটার নর্দমা (ড্রেন), ১০ কিলোমিটার পথচারী হাঁটার পথ (ফুটপাথ), তিনটি উড়াল সেতু (ভেহিকেল ওভারপাস), তিনটি পথচারী পারাপার সেতু (ওভারব্রিজ), দুই কিলোমিটার সংরক্ষণকারী দেয়াল (রিটেইনিং ওয়াল), তিনটি মসজিদ, ছয়টি যানবাহন বিরতির স্থান (বাস-বে) ও ছয়টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে ধানমন্ডি লেকে নজরুল সরোবর নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে ‘নজরুল সরোবর’ নামে উন্মুক্ত বিনোদন মঞ্চে একটি ঘাট, উন্মুক্ত মিলনায়তন, হাঁটার পথ, গণপরিসর, রেস্তোরাঁ, বসার স্থান (বেঞ্চ), দৃষ্টিনন্দন বাতি, পর্যাপ্ত সবুজায়ন ও সাউন্ড সিস্টেম স্থাপনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নজরুল ইসলামের স্মৃতিময় মুহূর্ত ও সাহিত্যকর্ম সংবলিত ফলক স্থাপন করা হবে।

শাহবাগে জিয়া শিশু পার্কের নতুন নাম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান করা হয়েছে। প্রায় ৬০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই শিশু উদ্যানের আধুনিকায়নের কাজ করা হবে।

ইসরাত চৈতি/অমিয়/ 

ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র থেকেই এই তাণ্ডব: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৩২ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৩২ এএম
ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র থেকেই এই তাণ্ডব: প্রধানমন্ত্রী

দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে আবার ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত করার ষড়যন্ত্র থেকেই এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সহিংসতায় আহতদের দেখতে আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন-নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতেই এই ষড়যন্ত্র করেছে বিএনপি-জামায়াত। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, এবারও একইভাবে তাণ্ডব করেছে।’

এ সময় শেখ হাসিনা আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে বলেন।

হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সহিংসতায় আহতদের দেখতে যান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলে আহতদের সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

অমিয়/

আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; ফাইল ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞে আহতদের দেখতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন (নিটর) পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার(২৭ জুলাই) সকালে তিনি পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। সরকার প্রধান এ সময় চিকিৎসাধীন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।

এ সময় তিনি আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।

নিটর পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শামীম উজ্জামান আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আহতদের অবস্থা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

শেখ হাসিনা আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেন। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান।

এরআগে শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসিএইচ) হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সন্ত্রাসি হামলায় আহতদের খোঁজ-খবর নেন সরকার প্রধান।

ইসরাত চৈতী/

শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৮ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৮ এএম
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি: প্রধানমন্ত্রী
রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে (বিটিভি) চালানো ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

 

এদিকে হামলায় আহতদের যথাযথ চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে, যাতে কেউ আর দেশবাসীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

তিনি বলেন, ‘ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসতাকারী অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে দেশের মানুষের জীবন নিয়ে কেউ আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’ 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় হামলার শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। খবর বাসস ও ইউএনবির।

যারা এই ধরনের জঘন্য কাজ করেছে, তাদের খুঁজে বের করার জন্য দেশবাসীর প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। 

জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করার লক্ষ্যে সাম্প্রতিক দেশব্যাপী নৃশংসতার জন্য দায়ী অপরাধীদের যথাযথ শাস্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি। শেখ হাসিনা আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এটি একটি খুব বেদনাদায়ক পরিস্থিতি। অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘এমন মৃত্যুর মিছিল হবে আমি কখনোই চাইনি। কিন্তু আজ বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমি কখনো চাইনি এ দেশে কেউ তাদের প্রিয়জনকে হারাবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং জনগণের উন্নত জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হলো তারা এটা থেকে কী অর্জন করেছে? অথচ কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে! কত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে!’

প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার চিরশান্তি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

তিনি বলেন, ‘আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা তা করব, যাতে তাদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি না ঘটে।’ তিনি বলেন, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আহত রোগীদের দেখতে গিয়ে তাদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করছেন। আহতদের চিকিৎসার কোনো ঘাটতি হয়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আহতদের চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে। চিকিৎসা শেষে তাদের অন্তত আয়-রুজির ব্যবস্থা যাতে হয়, সেটাও আমরা করব।’

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি আরও হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন, যেখানে আহতরা এখন চিকিৎসাধীন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য আমি কাজ করি। আমি যা করি সব মানুষের জন্য করি। কে আমাকে সমর্থন করে, কে করে না আমি সেটা চিন্তা করি না। কারণ আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে তাদের সেবা করতে। সেভাবেই আমি সেবা করি।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সেদিন রাজাকার বলেননি। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের রাজাকার বলিনি। তারাই স্লোগানে নিজেদের রাজাকার পরিচয় দেয়।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, সংবাদ সম্মেলনের ৬-৭ ঘণ্টা পর হঠাৎ করেই তারা নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়ে স্লোগান দিতে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে (বিটিভি) চালানো ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ও শিবির দেশের উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্যই দেশব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে সহায়তা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মেট্রো রেলস্টেশন, বিটিভি ভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ধ্বংসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, সারা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যে যেখানে আছে, তাদের খুঁজে বের করুন। তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতা করুন। আমি দেশবাসীর কাছে এই আহ্বান জানাচ্ছি।’ 

বিএনপি-জামায়াতের দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবলীলায় ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ মেট্রো রেলস্টেশন গত বৃহস্পতিবার সকালে পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল পরিদর্শন করলেন লণ্ডভণ্ড বিটিভি ভবন।

১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর সরকারে এসে এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে তার সরকার বিটিভির প্রভূত উন্নয়ন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে এত বছর পর এসে দেখা গেল সেই একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে নারকীয় তাণ্ডব, তারই যেন একটা বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ দেখছে। 

প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালে তথাকথিত আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবলীলা ও ধ্বংসযজ্ঞে ৩ হাজার ৮০০ যানবাহন, ২৮টি ট্রেন ও ট্রেনের বগি, লঞ্চ ও সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে পুঁজি করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলো।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘তবে এবারের আগুন লাগানোর ধরন আগেরগুলোর তুলনায় আলাদা। তারা এবার আগুন লাগাতে গানপাউডার ব্যবহার করেছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিন্তু টেলিভিশনের ওপর হাত দেয়নি বা কেউই কখনো দেয়নি। কিন্তু আজকে এই টেলিভিশন সেন্টারকে যারা এইভাবে পোড়াল, একটা কিছু নেই যে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাহলে এরা কারা? এরা কি এ দেশেরই মানুষ? এদের কি এই দেশেই জন্ম? একটা দেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার চিন্তা নিয়েই যেন তাদের এই আক্রমণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশ আমরা অনেক কষ্ট করে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে স্বাধীন করেছি। আজ বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। সেই মর্যাদাকে ধ্বংস করার জন্যই এই ধ্বংসযজ্ঞ।’

শেখ হাসিনা বিটিভির ধ্বংসযজ্ঞ আর আগুনে পোড়া অবস্থা দেখে স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘আজ অতীতের কথা মনে পড়ে আমি কতবার এখানে এসেছি। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এখানে ভাষণ দিতে এসেছি। নানা অনুষ্ঠানে এসেছি। আজ যে ধ্বংসযজ্ঞ দেখলাম এরপর এটা আবার কবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা যাবে, জানি না।’
বিটিভির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও অনেক চেষ্টা করেছেন। এই সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে পার পাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর ছিল। তবু আপনারা এই জাতীয় সম্পদকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় অত্যন্ত আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘এইগুলো দেখে আমি আসলে আর কথা বলতে পারছি না। একেকটি জিনিস যখন গড়ে তুলতে অনেক কষ্ট করতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করি। সেটা আমার দেশের মানুষেরই জন্য। একটা জিনিস এমনভাবে তৈরি করার চেষ্টা করি, যাতে এইগুলো শুধু দেশে নয়, বিদেশিদের কাছেও দৃষ্টিনন্দন হয়। আমরা দেশের যে উন্নতি করছি তার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই জায়গাগুলো একে একে ধ্বংস করা হচ্ছে। এত দিনের কষ্টের ফসল সব শেষ করে দিতে চাচ্ছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কষ্টের। দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই, আমি তাদের সহযোগিতা চাই।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকাল ৯টা ১৩ মিনিটের দিকে বিটিভি ভবনে প্রবেশ করেন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্রের তাণ্ডবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সব বিভাগ পরিদর্শন করেন।

বিটিভি ভবনে ধ্বংসযজ্ঞ দেখে কর্মকর্তারা তাদের চোখের পানি ধরে রাখার চেষ্টা করার সময় বাতাস ভারী হয়ে উঠলে শেখ হাসিনাকেও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়।

বিটিভির সদর দপ্তর ও ভবনে ভাঙচুরের একটি ভিডিওচিত্রও প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হয়।

বিটিভির পরিসংখ্যান অনুযায়ী তাণ্ডবে বিটিভির বিভিন্ন অবকাঠামো, সম্প্রচার সরঞ্জাম, নকশা বিভাগ, অফিস ভবন এবং বিভিন্ন কক্ষ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশ থেকে বিএনপি-জামায়াত, বিশেষ করে শিবির কোটাবিরোধী আন্দোলকারীদের ওপর নির্ভর করে এই ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। তিনি সারা দেশের তাণ্ডবলীলার খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, সেখানে পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া পুলিশ সদস্যকে হাসপাতাল থেকে টেনে বের করে রাস্তায় ফেলে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। র‌্যাবের গাড়ির ভেতরে র‌্যাব সদস্যকে হত্যা, সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গাজীপুরে এক কর্মীকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখে। বাড়ি বাড়ি খুঁজে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে হত্যা, যাত্রাবাড়ীতে তার মোটর শোভাযাত্রার এক চালকও বাদ যাননি। এইভাবে একদিকে হত্যাকাণ্ড, একদিকে জ্বালাও-পোড়াও। এরা কি বাংলাদেশের নাগরিক? দেশের স্বাধীনতা বা উন্নয়নে বিশ্বাসী, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকারের কোটা বাতিলের জারি করা পরিপত্র বাতিলে হাইকোর্টের রায় যেখানে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল এবং সরকারের আপিলের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল, সেখানে কোটাবিরোধী আন্দোলনের কী ছিল সে প্রশ্ন তিনি শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের উদ্দেশে ছুড়ে দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “ধৈর্য ধরে তাদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, বারবার বলেছি, মন্ত্রীরা পর্যন্ত দিনের পর দিন বৈঠক করেছেন। কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ করলাম, ওই মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতিই তাদের যেন বেশি ক্ষোভ। তার একটি কথাকে বিকৃত করে নিজেদের রাজাকার আখ্যায়িত করে কতদিন তারা প্রতিবাদ করল। যার প্রতিবাদ প্রত্যেকটি শ্রেণি-পেশার মানুষ, এমনকি ছাত্রলীগ, যুবলীগ থেকে শুরু করে প্রগতিশীল সংগঠনগুলো পর্যন্ত করেছিল। তখন তারা স্লোগান পরিবর্তন করল- ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চারদিকে যখন আগুন, এই টেলিভিশন ভবনে যখন আগুন লাগানো হলো, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসেছেন তাদের ঢুকতে দেবে না। তাদের গাড়িতেও আগুন দেওয়া হলো। পুলিশ, র‌্যাব কাউকে ঢুকতে দেবে না, আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তখন তিনি হেলিকপ্টারে করে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিলেন। অনেক ভবনে আগুন দেওয়ায় অনেকে ছাদে গিয়ে হাহাকার করায় হেলিকপ্টার দিয়েই তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু আজ টেলিভিশন ভবনে এসে যে ধ্বংসযজ্ঞ আমি দেখলাম, এটা কারও পক্ষেই সহ্য করার নয়। আজ বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হলো। যদিও যারা আগুন দিয়েছে তাদের কিছু আসে যায় না। কারণ লন্ডন থেকে নির্দেশ দেয় যেখানে যেখানে বাঙালি আছে তাদের আন্দোলন করতে হবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, লন্ডনে আওয়ামী লীগের ওপর হামলা করা হলো। সেখানে পুলিশ এসে বিএনপির ৩ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বিক্ষোভ করায় ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১৬ জনের ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। অন্যদের সেখানে রাখা হবে না। দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারা যে রুটি-রুজির পথ হারাল শুধু তা-ই নয়, যেসব বাঙালি সেখানে থাকে, তাদের মুখটা আজ কোথায় গেল! কারণ ওই দেশে আইন আছে, কেউ মিছিল করতে পারে না; কিন্তু তাদের উসকে দেওয়া হয়েছিল লন্ডন থেকেই।

শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে আর বাংলাদেশিদের নেওয়া হবে না জানতে পেরে তিনি তাৎক্ষণিক সেখানকার দূতাবাস এবং সে দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন। সৌদি আরবও কঠিন আইন প্রয়োগকারী দেশ। সেখানেও ২০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। 

তাহলে এই গ্রেপ্তার হওয়া লোকজন ও আমাদের লাখ লাখ কর্মীর ভবিষ্যৎ কী- সে প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানেও তিনি মেসেজ পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাদের আইন তো তাদের নিজস্ব গতিতেই চলবে। এখনো বিভিন্ন দেশে ফোন করে আন্দোলনের জন্য উসকে দেওয়া হচ্ছে, এতে সেখানকার বাংলাদেশিদের রুটি-রোজগারও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে এখন দেশ ধ্বংসে নেমেছে, সঙ্গে আছে জামায়াত-শিবির, যারা সব সময়ই স্বাধীনতাবিরোধী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানে তার সরকার কারফিউ দিতে এবং সেনাবাহিনী নামাতে বাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের জানমাল রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আজকে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।’

মোবাইল ইন্টারনেট রবি-সোমবার চালু

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৪ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৪ এএম
মোবাইল ইন্টারনেট রবি-সোমবার চালু

বন্ধ থাকা মোবাইল ইন্টারনেট সেবা রবি-সোমবারের দিকে চালু হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। 

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সংস্থাটির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এখনো মোবাইল ইন্টারনেট চালুর বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। যেসব সঞ্চালন লাইন এবং ডেটা সেন্টার রিপেয়ার করা হয়েছে, ইমপ্যাক্টটা কেমন পড়ছে এবং তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে রবি-সোমবার মোবাইল ইন্টারনেট চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার মধ্যেই গত ১৭ জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ৫ দিন পর ২৩ জুলাই রাতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কূটনীতিকপাড়া, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ, ফ্রিল্যান্সিং, প্রযুক্তি ও রপ্তানিমুখী খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে এ ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়। এরপর গত ২৪ জুলাই রাত থেকে আবাসিক এলাকায়ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু তা ধীরগতিতে মিলছে।

গত বৃহস্পতিবার গুগল ক্যাশ সার্ভার দিয়ে গতি কিছুটা বাড়ানোর ফলে নিরবচ্ছিন্নভাবে ইউটিউব দেখা যাচ্ছে। চালু হয়েছে ই-মেইল। তবে হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট আদান-প্রদান করা গেলেও এখনো কল করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে বন্ধ আছে ফেসবুক ও টিকটকের ক্যাশ সার্ভার। 

নাশকতার পৈশাচিক চিত্র

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:১৯ এএম
নাশকতার পৈশাচিক চিত্র
কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষ হলেও দেশজুড়ে রয়ে গেছে সংঘাত আর সহিংসতার ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন। ছবি: খবরের কাগজ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর সারা দেশে শুরু হয় বীভৎস নাশকতা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস, নির্মম হতাহতের ঘটনা। এতে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান স্থাপনা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ হয়েছে। ঘটেছে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড। বিশেষ করে রাজধানীর শনির আখড়ায় একাধিক পুলিশকে হত্যা করে ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা এবং গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত সহকারীকে উত্তরায় হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনায় নাশকতার নির্মম পৈশাচিক চিত্র ফুটে উঠেছে। কোনো ধরনের হত্যা কখনোই কাম্য নয়। আর কাউকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা মানবতার মর্মস্পর্শী আর্তনাদকেই তাড়িত করে। 

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কোটা আন্দোলন শুরু হয় চলতি মাসের ৫ তারিখে। এ আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয় ১৬ জুলাই। পর দিন সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে আবাসিক হল ছাড়েন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা ঘোষণা দেন, তারা কোনো ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িত নন। এর পরও ১৮ জুলাই থেকে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, মাদারীপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক নাশকতার ঘটনা ঘটে। 

এসব নাশকতায় ব্যাপক হতাহতের মধ্যে অন্যতম রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে দুই পুলিশ সদস্যকে মেরে শনির আখড়ার ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা। ডিবি পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সেদিন ছিল ১৯ জুলাই। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় এক মোটরসাইকেল আরোহীকে তাড়া করে দুর্বৃত্তরা। তাড়া খেয়ে ওই মোটরসাইকেল আরোহী রাস্তার পাশে পড়ে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা ওই ব্যক্তির ব্যাগ তল্লাশি করে পুলিশের পোশাক ও আইডি কার্ড দেখতে পান। এ সময় তারা পুলিশ, পুলিশ বলে চিৎকার শুরু করে। চিৎকারে আশপাশের আরও কিছু দুর্বৃত্ত ছুটে এসে তাদের হাতে থাকা হকিস্টিক, বাঁশ, লাঠি দিয়ে তাকে মারতে থাকে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তারা লাশ নিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে। মোটরসাইকেলটিও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর তার লাশ শনির আখড়া ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয়। 

পরের দিন ২০ জুলাই সকালেও একই এলাকায় ঘটে একই ধরনের ঘটনা। ওই এলাকায় মোটরসাইকেলে সাদাপোশাকে একজন ব্যক্তিকে আসতে দেখে দুর্বৃত্তরা ধাওয়া করে। কিছুদূর যেতেই তাকে ধরে ফেলে। আইডি কার্ড দেখে পুলিশ বুঝতে পেরে হকিস্টিক, বাঁশ, লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। তারও মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। মোটরসাইকেলটিও একইভাবে আগুনে পোড়ানো হয়।

এদিকে ১৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর উত্তরার হাউস বিল্ডিং এলাকায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত সহকারী জুয়েল মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তাকেও ঝুলিয়ে রেখে উল্লাস করে দুর্বৃত্তরা। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওয়ামী লীগের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন জাহাঙ্গীর আলম। গাড়িবহর উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকা পার হওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা গতিরোধ করে। একপর্যায়ে তারা হামলা চালায়। এ সময় আন্দোলনকারীদের ইটপাটকেলের আঘাতে জাহাঙ্গীর আলমের মাথা ফেটে যায়। তার মাথায় ১৭টি সেলাই দিতে হয়। অনেকেই আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিগত সহকারী জুয়েল মোল্লাও গুরুতর আহত হন। তাকে সেখান থেকে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আবারও তার ওপর হামলা করা হয়। একপর্যায়ে তাকে গাছে ঝুলিয়েও পেটানো হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হলে লাশ ঝুলিয়ে রেখেই হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। 

ঢাবিতে বিভিন্ন হলের ৩০০ কক্ষ ভাঙচুর
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে প্রায় ৩০০ কক্ষে ভাঙচুরের ঘটনায় ঘটেছে। ইতোমধ্যে হলগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণও করা হয়েছে। শিগগিরই হলগুলো সংস্কার করে খোলার পরিকল্পনা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোকেয়া হল এবং স্যার এ এফ রহমান হল পরিদর্শন করেছেন ঢাবি উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এ সময় তিনি ভাঙচুর হওয়া বিভিন্ন হলের কক্ষ পরিদর্শন করেন। 

পরিদর্শন শেষে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিভিন্ন হলে প্রায় ৩০০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ডিভিশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছ থেকে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে হলগুলোর কক্ষের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত অনেক স্থাপনা সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্কার শেষে দেশব্যাপী স্থিতিশীলতা বিরাজ করলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত হলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে।’ 

কবে নাগাদ খুলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে একটি অর্থ প্রাপ্তির বিষয় রয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে ইউজিসিকে এই আর্থিক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হবে। সেখানে আবার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বিষয় রয়েছে। পরবর্তী সময় টেন্ডার ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) অনুসরণ করে কাজগুলো সম্পাদন করতে হবে। এখন টেন্ডার দেওয়ার পর সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব কবে কাজ শেষ হবে। এরপর আমরা খোলার সিদ্ধান্ত নেব।’

 এ সময় অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, সিন্ডিকেট সদস্য আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান এবং সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।

বেছে বেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর
গত ১৭ জুলাই রাত ১২টার দিকে অভিযোগ ওঠে রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকা বিনতে হোসাইনসহ ৯ ছাত্রলীগ নেত্রী হলের কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করছে। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে, সেখানে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা এবং ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ নেত্রীদের টেনেহিঁচড়ে হল থেকে বের করে দেন। পরে রোকেয়া হলে ‘সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ’- এই মর্মে একটি বিবৃতি প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে স্বাক্ষর করে নেন। একে-একে রাতের বিভিন্ন সময়ে শামসুন নাহার, কবি সুফিয়া কামাল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হল ত্যাগ করতে বাধ্য করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এরপর ভোরে ছাত্রলীগ উৎখাত করে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান, এরপর সকাল ৭টা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হল, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কবি জসীম উদ্‌দীন হল, বিজয় একাত্তর, মাস্টার দা সূর্যসেন, মুহসীন, স্যার এ এফ রহমান এবং সবশেষ সলিমুল্লাহ মুসলিম হল নিয়ন্ত্রণে নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় হলে থাকা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের তাড়িয়ে দেন, কেউবা আগেই সটকে পড়েন। একেবারেই ছাত্রলীগশূন্য হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। পরে আন্দোলনকারীরা বেছে বেছে পদধারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর এবং জিনিসপত্র বাহিরে ফেলে দেন। এ এফ রহমান হলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের ৩১৮ নম্বর কক্ষ, কবি জসীম উদ্‌দীন হলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের কক্ষ, বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের পদ্মা-৭০১০ কক্ষ ও সূর্যসেন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়নের ৩৪৪ নম্বর ভাঙচুর করা হয়। 

এ ছাড়া স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে একটি এবং সূর্যসেন হলের সামনে আরেকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন আন্দোলনকারী। পরবর্তী সময়ে ওই দিন সকালেই জরুরি সিন্ডিকেটের সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত আসে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধে হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এর পরপরই পুরোপুরিভাবে হল ছাড়তে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যদিও এর আগে গত ১৫ ও ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, শহীদুল্লাহ হল এনং ফজলুল হক হল দখলে নেন আন্দোলনকারীরা।

পৈশাচিক তাণ্ডব
দুর্বৃত্তরা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবন, সেতু ভবন ও ভবনের অর্ধশতাধিক দামি গাড়ি, পুষ্টি ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশন ভাঙা, ফার্মগেট মেট্রোরেল ডিপোতে হামলা, শনির আখড়ায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজা, বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র, ধানমন্ডি পিবিআই অফিস, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, মহাখালীতে বিটিআরসির ডেটা বেজ সেন্টারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছেন। 

এদিকে রাজধানীর বাড্ডা, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। রামপুরা থানা কার্যালয় ও রামপুরা পাম্প হাউসে অগ্নিসংযোগ, উত্তর সিটি করপোরেশনে উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, মিরপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে হামলা করেছে। বর্জ্য পরিবহনের গাড়ি ও কীটনাশক ওষুধ পুড়িয়ে দিয়েছে। মেরাদিয়া পিআইবি অফিস ভাঙচুর, উত্তরায় রেললাইন তুলে ফেলেছে। মৌচাক পুলিশ বক্সে আগুন, বছিলায় সিটি হাসপাতালে ভাঙচুর, কদমতলী, মোহাম্মদপুর থানায় হামলা, রমনা ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর, ফকিরাপুল পুলিশ বক্সে আগুন, উত্তরা পুলিশের ডিসি কার্যালয়, টিএনটি আঞ্চলিক অফিস, বসুন্ধরা চৌরাস্তা পুলিশ বক্স, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জোনাল অফিসে ২০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসে অগ্নিসংযোগ, গাজীপুরের টঙ্গী ডেসকো বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ, টঙ্গী পূর্ব থানায় হামলা, দুর্যোগ ভবন আক্রমণ করে শতাধিক গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়ানো হয়েছে। 

সেতু ভবনের অর্ধশতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ। নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস, পিবিআই অফিস, জেলা হাসপাতাল ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হামলা, নারায়ণগঞ্জে একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি পুড়িয়েছে। নরসিংদী কারাগারে হামলা করে ভয়ঙ্কর জঙ্গি, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। বরিশালে র‌্যাবের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে, গাড়ির ভেতরে থাকা র‌্যাব সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। টাঙ্গাইল আওয়ামী লীগ কার্যালয়, কালিহাতী উপজেলা কার্যালয়, গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়েছেন। গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের অফিসে ভাঙচুর ও ১১টি মোটরসাইকেল পুড়ানো, রেললাইন উপড়ে ফেলা, বগুড়া জেলার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর, জাসদ কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সাংস্কৃতিক জোটের কার্যালয়, পুলিশ বক্স, ভূমি অফিস, সিটি অফিস, ন্যাশনাল ব্যাংক, রেল স্টেশন, সরকারি শাহ আজিজুল হক কলেজ, সদর থানায় হামলা, বগুড়া পৌরসভা, হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী নাজমুল হোসেন, সুমন এবং যুবলীগ কর্মী রোমানকে হত্যা করা হয়। মাদারীপুরে বাস পোড়ানো হয়েছে।