![খুলনায় দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল](uploads/2024/02/28/1709092639.Awami-league.jpg)
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও প্রার্থিতা নিয়ে এখন দ্বন্দ্বে ভুগছে খুলনা আওয়ামী লীগের তৃণমূল। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল ও চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
গত দুই দিনে খুলনা-৪ আসনে রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সহসভাপতির পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে পরিস্থিতি উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ায় উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের ‘মীর জাফর’ বলে মন্তব্য করার অভিযোগ করেছেন রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. কামালউদ্দিন বাদশা।
অন্যদিকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কামালউদ্দিন বাদশাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যাপক ফ ম আব্দুস সালাম।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন পোশাক রপ্তানিকারক আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা। দুই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তখন বিভক্ত হয়ে পড়েন। ওই নির্বাচনকে ঘিরেই এলাকায় বিভক্তির রাজনীতি শুরু হয়েছে বলে নেতা-কর্মীরা জানান।
রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামালউদ্দিন বাদশা বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বিঘ্নে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের সুযোগ দেওয়া হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচারাভিযানে নির্বাচন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী গণভবনে স্বতন্ত্র নির্বাচিত প্রার্থী ও বর্ধিত সভায় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিলেও খুলনা-৪ আসনে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোর্ত্তজা রশিদী দারা প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৪২ শতাংশ ভোট পান। তবে ফলাফলে নৌকার প্রার্থী সালাম মুর্শেদী বিজয়ী ঘোষিত হন। বিজয়ী ঘোষণার পরপরই সালাম মুর্শেদীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে খুলনা-৪ আসনের বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অত্যাচার, নির্যাতন, রক্তাক্ত জখম এবং তাদের সম্পদ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুট করা হয়।
একই সঙ্গে দলের যেসব নেতা-কর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছেন, তাদের পদপদবি কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে আইচগাতি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বভার বদল করা হয়েছে। গত সোমবার খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে কামালউদ্দিন এসব কথা বলেন। অন্যদিকে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে খুলনা-৪ আসনে সংসদ সদস্যসহ দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার প্রতিবাদে কামালউদ্দিন বাদশাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি অধ্যাপক ফ ম আব্দুস সালাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদীর রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে থেকেও মো. কামালউদ্দিন বাদশা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার মনোনয়নকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষাবলম্বন করেন। একইভাবে গত জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ফলে তার এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর ফলাফল আশানুরূপ হয়নি।
তিনি বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী শুধু রূপসা উপজেলায় ১০২৯২ ভোটে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের মতো বিজয় লাভ করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর নামে যে ভোটের হিসাব দেখানো হয়েছে, তা মূলত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের কাল্পনিক অভিযোগ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বক্তব্যের মাধ্যমে কামালউদ্দিন বাদশা মূলত আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শকেই ভূলুণ্ঠিত করেছেন।
এদিকে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী বলেন, বিভিন্ন উপজেলায় সংসদ সদস্যের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ব্যক্তিগত পছন্দের লোক নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরির রাজনীতি করায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।