রাজনৈতিক দলগুলো নিজস্ব নীতি-আদর্শ নিয়ে টিকতে না পারলে ‘অস্বাভাবিক রাজনীতি মাথাচাড়া’ দিয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। বিরোধী দলগুলো যেন স্বাভাবিক রাজনীতি পরিচালনা করতে পারে, তার বন্দোবস্ত করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বুধবার (২০ মার্চ) দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘যদি কোনো দল তাদের নীতি-আদর্শ নিয়ে রাজনীতিতে টিকতে না পারে, তবে সামনের দিকে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অস্বাভাবিক রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই স্বাভাবিক রাজনীতি চলতে দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। বিরোধী দলকে কাজ করতে দেওয়া সরকারেরই দায়িত্ব।’
দেশের প্রায় ২৬ ভাগ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘এক থেকে দেড় কোটি পরিবার বা ৪ কোটি মানুষ এমন বাস্তবতা মোকাবিলা করছে। তারা বছরে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা ঋণ করছে খাবার ক্রয় করতে। ঋণ না করলে তারা খাবার পাচ্ছে না। দেশ এখন আংশিকভাবে দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত। দেশে আংশিকভাবে দুর্ভিক্ষ চলছে। যারা কারও কাছে ধার পায় না, এমন অন্তত আরও ১০ কোটি মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে।’
জাপার প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্মরণে তার ছোট ভাই জি এম কাদের বলেন, ‘এরশাদ সাহেব সুশাসন দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। তার সময়ে সবাই আইনের মধ্যেই ছিলেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে ছিলেন না। এরশাদ সাহেবের সময় বিরোধীদলীয় কর্মকাণ্ডে কোনো বাধা দেওয়া হতো না। নব্বই-পরবর্তী যেকোনো সময়ের চেয়ে পল্লিবন্ধু এরশাদের সময় বেশি গণতন্ত্র ভোগ করেছে দেশের মানুষ। ইতিহাস একদিন সাক্ষ্য দেবে।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘যারা বলছেন, জাতীয় পার্টি ভেঙে যাচ্ছে, তারা ভুল বলছেন। জাতীয় পার্টি ভেঙে যাচ্ছে না। রাজনীতি হচ্ছে একটি চলন্ত ট্রেনের মতো। চলার পথে কেউ নেমে যাবে আবার কেউ নতুন করে উঠবে, এভাবেই রাজনীতি চলছে। আমরা গুটিকয়েক লোক চলে গেলেও জাতীয় পার্টির ক্ষতি হবে না। জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে নিজস্ব গতিতে।’
অন্যদিকে রাজধানীর গুলশানে রওশন এরশাদের বাসভবনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মদিন উদযাপন করেন রওশন এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির (রওশন) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, সাহিদুর রহমান টেপা যোগ দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, বিএলডিপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন আল আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে রওশন এরশাদ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি যদি হারিয়ে যায় তাহলে এ দেশ থেকে উন্নয়ন সমৃদ্ধির ইতিহাস মুছে যাবে, পল্লিবন্ধু এরশাদের নাম হারিয়ে যাবে। তিনি যে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার এবং প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের সংস্কার কর্মসূচি প্রণয়ণ করেছিলেন তা আর বাস্তবায়িত হবে না। আমরা তা হতে দিতে পারি না। আর তাই আমাকে আজ জাতীয় পার্টির হাল ধরতে হয়েছে। আমার মধ্যে কারও প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ নেই। পার্টির যারা দশম কাউন্সিলের বাইরে ছিলেন তারাও ফিরে আসুন জাতীয় পার্টির সঙ্গে। আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টিকে জাতির সামনে উপহার দিতে চাই।’
এর আগে বুধবার সকালে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে এরশাদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন নেতা-কর্মীরা। সকাল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোরআন তেলাওয়াত ও বিকেলে জাতীয় পার্টি মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক জহিরুল আলম রুবেলের সভাপতিত্বে দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রংপুরেও নানা আয়োজনে এরশাদের জন্মদিন পালন করছে জাতীয় পার্টি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল ১০টায় পাবনা জেলা জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর জাপা নেতা চিশতি খায়রুল আবরার শিশিরের নেতৃত্বে রংপুরের পল্লি নিবাসে এরশাদের কবরে গিলাফ ও ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় সেখানে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।