![উপজেলা নির্বাচন: সংঘাত এড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ আ.লীগের](uploads/2024/04/17/1713325376.Awami-league.jpg)
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে দলের মধ্যে নতুন করে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত বন্ধ করা আওয়ামী লীগের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে দলীয় প্রতীক ও সমর্থন ছাড়াই করার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। উদ্দেশ্য হলো, বেশিসংখ্যক প্রার্থী যাতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। কারণ, প্রার্থী বেশি হলে তারা নিজ উদ্যোগে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন। এর ফলে ‘একদলীয়’ নির্বাচনের কথিত দুর্নাম থেকে রক্ষা পাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, এমন কর্মকৌশল নিয়ে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিপরীতে দলেরই স্বতন্ত্রদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মাধ্যমে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে আওয়ামী লীগ। যার ফলে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচন অংশ না নিলেও নির্বাচন তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একই কৌশল হিসেবে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়াই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে বেশির ভাগ উপজেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমেছেন। অর্থাৎ তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিপরীতে আওয়ামী লীগের নেতারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই অবস্থায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের অপহরণসহ মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত।
ঈদের দিন দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে শেখ হাসিনা বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে কোনো কারচুপি করা হবে না। দলীয় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করা হবে না, মন্ত্রী-এমপিরা এবং আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের নিজের প্রার্থীকে যদি জিতিয়ে আনার জন্য কোনো রকম অবৈধ উপায় অবলম্বন করেন বা কারচুপি করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনেক উপজেলায় দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও শীর্ষ নেতারা নিজের আত্মীয়-স্বজন অথবা পছন্দের নেতাদের নির্বাচনে দাঁড় করাচ্ছেন বলেই শেখ হাসিনা এমন বক্তব্য দিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ধানমন্ডির শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের কতজন প্রার্থী, আমরা সেটা হিসাব করে দেখার তাগিদ অনুভব করিনি। আমরা সবাইকে সুযোগ দিয়েছি।’ প্রথম ধাপের ভোট নিয়ে ওবায়দুল কদের বলেন, ৮ মে প্রথম দফার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার না করতে। নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে হয় এবং কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ যাতে না হয়। প্রশাসন কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।
জানা গেছে, বেশ কিছু উপজেলায় একাধিকবার সতর্ক করে দেওয়ার পরেও আওয়ামী লীগের বিরোধ কমেনি। বরং ঈদের আগে ও পরে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে হতাহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধ ও সংঘর্ষ আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। তাই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিরোধ ও সংঘর্ষ এড়ানোকে প্রধান টার্গেট হিসেবে নিয়েছেন। একই সঙ্গে গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করতে দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব ঠেকাতে দিচ্ছেন হুঁশিয়ারি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধ মেটাতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের ঢাকায় এনে পরামর্শ দিচ্ছেন। ঈদের আগে থেকেই দলের নেতারা এমন সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা ও রংপুর বিভাগের দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ঢাকায় ডেকে বিশেষ বর্ধিত সভাও করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলের নেতাদের সমস্যার কথা শুনেছেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়েছেন। এরপরেও যেসব উপজেলায় কোন্দল ও সংঘর্ষ বেশি হবে, সেখানে প্রয়োজনে সাংগঠনিক সফরে যাবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
দলের নেতারা মনে করেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূলে বিরোধ বেড়েছে। মাঠ পর্যায়ে যা এখনো মেটেনি। নৌকার প্রার্থীর ও দলের স্বতন্ত্রদের সঙ্গে বিবাদ এখনো চলমান। প্রার্থীরা এক দলের নেতা হলেও একে অন্যের প্রতি প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও বাদ যাননি। সংসদ নির্বাচনের তিন মাসের মাথায় শুরু হতে যাচ্ছে উপজেলা নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিরোধ ও সংঘাত বাড়লে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। তাই তৃণমূল পর্যায়ে দলের বিরোধ মেটানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজ্জাম্মেল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হবে। দলের নেতারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এত কোন্দল ও সংঘাত এড়াতে কিছু কিছু উপজেলায় দলের নেতাদের আমরা সতর্ক করছি। কিছু উপজেলায় সমস্যা হতে পারে। তবে পরিবেশ যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে।’