![এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের প্রার্থী হতে নিষেধ আ.লীগের](uploads/2024/04/19/1713500308.AL.jpg)
উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা। যা গড়িয়েছে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত। তাই প্রভাব বিস্তারকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এমপি-মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদের উপজেলা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিষেধ করেছেন শেখ হাসিনা। তার পরও কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে।
ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারকারী দলীয় কয়েকজন এমপি ও মন্ত্রীকে চিঠির মাধ্যমে সতর্ক ও নির্বাচন থেকে স্বজনদের সরে দাঁড়াতে চিঠিও দিয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম খবরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কার্যালয়ের ভেতরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এমন নির্দেশের কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে যেসব এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা উপজেলা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার একটি তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে মাদারীপুর সদরের সংসদ সদস্য ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এবং নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এ সময় নাটোর-৩ আসনের এমপি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিবের বিষয়ে কথা ওঠে। হাবিবেব বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীসহ তিনজনকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল।
এ বিষয়ে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, একটি সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জানিয়েছেন। আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে তালিকা তৈরি হচ্ছে। দলের মধ্যে ঐক্য রাখতেই দলীয় প্রধানের এমন সিদ্ধান্ত।
তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে অন্তত ১৪ জন মন্ত্রী-এমপির পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে ভোটের মাঠে রয়েছেন। আর এমপি-মন্ত্রীর কাছের লোক হওয়ায় তারা প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চেয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক দলীয় নির্দেশ অমান্য করে নিজের খালাত ভাইকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। দলের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খানের ছেলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়নকাজ না করার হুমকি দিয়েছেন এমপি একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। দলীয় নেতারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ক্ষুব্ধ হন সভাপতি শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দৈনিক তৃণমূল নেতারা স্থানীয় এমপি ও দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে উপজেলায় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগের চিঠি দিচ্ছেন। তাই মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর এই নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক খবরের কাগজকে বলেন, ‘দলীয় সভাপতির পরিষ্কার নির্দেশ, দলের সবাইকে মেনে চলতে হবে। যারা বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশ মানবেন না তারা যতবড় এমপি-মন্ত্রী বা প্রভাবশালী নেতা হোক না কেন, তাদেরকে আওয়ামী লীগের আর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।