উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ফলাফলে অনেকটা হতাশ ভোটের মাঠে থেকে যাওয়া বিএনপি নেতারা। বিশেষ করে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে যারা এখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন, তাদের অনেকের মধ্যে ভর করেছে বাড়তি টেনশন। কারণ যে আশা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, বেশির ভাগেরই কপালে তা জোটেনি। বরং একদিকে দল থেকে বহিষ্কার, অন্যদিকে নির্বাচনে হেরে যেন কপাল পুড়েছে তাদের। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়েও দুশ্চিন্তায় তারা। এমন বাস্তবতায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অনেকটা একূল-ওকূল হারানোর শঙ্কায় এসব নেতা। যদিও ভোট থেকে পিছু্ও হটতে পারছেন না তাদের অনেকেই।
৮ মে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির ৮০ জন বর্তমান ও সাবেক নেতা। তাদের মধ্যে ২৮ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ২৮ জন নেতা। শেষ পর্যন্ত জয় পান মাত্র ৭ জন। পরাজিত হন ২১ প্রার্থী। যদিও তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ও এলাকার নানা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে এগিয়ে থেকেও জিততে পারেননি। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানরাও হেরে যান। প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল করতে পারেননি অনেক ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। যার প্রভাব দেখা দিয়েছে দ্বিতীয় ধাপে লড়াইয়ে থাকা একাধিক প্রার্থীর মাঝে।
দ্বিতীয় ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন নাটোরের লালপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি আরিফ। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ভরসা। এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো দেখছি। তবে দল থেকেও বহিষ্কার হয়েছি। সব মিলিয়ে প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে সবকিছু ওভারকাম করার চেষ্টা করছি। স্থানীয় নেতারা বিপক্ষে থাকলেও আমি আমার নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ নিয়ে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি।’
অনেকটা একই বক্তব্য কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী, উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ইন্দোনেশিয়া শিতুর। এর আগে দুবার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনকারী এই নারী নেত্রী বলেন, ‘আপনারা দোয়া করবেন, যা হয় কপালে। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমি আশাবাদী। একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছি, আল্লাহ যা করেন।’
বিএনপির পাঠানো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দলীয় সিদ্ধান্ত না মানায় দ্বিতীয় ধাপে ৬৪ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বহিষ্কৃতদের মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২১ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১৬ জন।
দলের ১০ সাংগঠনিক বিভাগের মধ্যে সিলেটের সর্বোচ্চ ১৫ জন, রংপুরে ১২ জন, ঢাকার ৭ জন, ময়মনসিংহের ৭ জন, খুলনা বিভাগের ৬ জন, রাজশাহীর ৫ জন, চট্টগ্রামের ৫ জন, বরিশালের ৩ জন, ফরিদপুরের ২ জন, কুমিল্লার ২ জন রয়েছেন।
দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে ২১ মে।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ঘিওরে নির্বাচন করছেন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত মো. আবদুল মান্নান।
খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করছি চ্যালেঞ্জ নিয়েই। জন্ম থেকেই স্থানীয় রাজনীতি করে কেন্দ্র পর্যন্ত এসেছি।’
বহিষ্কার নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ‘বারবার ভোট বর্জন করা ঠিক নয়। জনগণের তাগিদে ভোটে আসছি।’
যোগ্য হওয়া সত্ত্বে বিএনপির যেসব প্রার্থী ভোটে জিততে পারেননি তাদের বিষয়ে এই নেতা মনে করেন, তারা ঠিকভাবে মানুষের কাছে যেতে পারেননি।
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পৌর বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কৃত আবদুল আলিম ইয়াছিন জানান, প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। ভালো সাড়াও পাচ্ছেন।
দল থেকে বহিষ্কার সত্ত্বেও নির্বাচনের মাঠে জেতার সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে মানুষ পছন্দ করে না। তাই ধানের শীষকে বেছে নেবেন।’
বিএনপির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তকে সম্মান করেন দাবি করে সিলেটের স্থানীয় এই নেতা জানান, মরলেও বিএনপি, বাঁচলেও বিএনপি করবেন তিনি। দল রাখলেও আছেন, না রাখলেও থাকবেন।
এদিকে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপেও প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বিএনপি পদধারী ও সাবেক নেতারা। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় প্রার্থী রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য মোকাররম হোসেন সুজন এবং গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান লিপ্টন।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি নেতা মোকারম হোসেন। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল হক শাহীন শিকদার। খুলনার ডুমুরিয়ায় চেয়ারম্যান পদে জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মনিমুর রহমান নয়ন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গাজী আবদুল হালিম ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ শাহিনুর রহমান শাহিন।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, ত্রিশালে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম জুয়েল ও বিএনপির সাবেক এমপি আবদুল খালেকের ছেলে আনোয়ার সাদাত ভোটের মাঠে রয়ে গেছেন।
এ ছাড়া সিলেট, কুমিল্লা ও নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে একজন করে প্রার্থী নির্বাচন করছেন।
অন্যদিকে নরসিংদী, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন দুই বিএনপি প্রার্থী।
তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল গত রবিবার। সোমবার (১৩ মে) প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে এ ধাপে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক প্রচার। ২৯ মে হবে ভোট।