![নতুন রূপে প্রস্তুত হচ্ছে ছাত্রদল](uploads/2024/05/21/chatradal-1716271786.jpg)
সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের অতীতের ব্যর্থতা ঘোচানোর চ্যালেঞ্জ নিতে নতুনরূপে প্রস্তুত করা হচ্ছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে। পরীক্ষিত, মেধাবী ও সাংগঠনিক নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আবারও ছাত্রদলকে রাজপথের ‘আন্দোলনের শক্তি’ হিসেবে দেখতে চাইছেন শীর্ষ নেতারা। এই লক্ষ্যে আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বাড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে এক শ জনের বেশি একটি তালিকা হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই ঘোষণা আসছে আংশিক এই কমিটির। পাশাপাশি জেলা কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি।
ছাত্রদলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার যোগ্য নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পরে যারা রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন শুধু তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই সময়ে প্রায় ৪০ দিনের মতো হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে এক দিনের জন্যও যারা মাঠে ছিলেন না তারা কমিটিতে স্থান পাবেন না। পাশাপাশি এবারের কমিটিতে নারী নেত্রীদের মূল্যায়িত করা হবে। কারণ ২৮ অক্টোবরের পর রাজপথে নারী নেত্রীরাও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আংশিক এই কমিটির সদস্য সংখ্যা বেড়ে একশ থেকে দেড় শতাধিক হবে। তবে মাঠে ছিলেন না এমন নেতাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে নানা মাধ্যম থেকে তদবির-লবিং চালাচ্ছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলকে একাধিকবার ফোন ও মেসেজে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব খবরের কাগজকে বলেন, বিগত আন্দোলনে যারা ধারাবাহিকভাবে মাঠে ছিলেন এবারের কমিটিতে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর আন্দোলনে যারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন, আগামীতে যারা যোগ্য নেতৃত্ব দিতে পারবেন, যারা সংগঠনকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন, তাদেরকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বিএনপির সূত্রমতে, নির্বাচনের আগে ও পরে ছাত্রদলের ভূমিকা নিয়ে সর্বমহলে প্রশ্ন ওঠে। তাই বিগত আন্দোলন নিয়ে এমন মূল্যায়নের ভিত্তিতে আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে ছাত্রদলসহ অন্য অঙ্গসংগঠনের কমিটিও ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। ঘুরে দাঁড়াতে দেড় মাস মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে গত পহেলা মার্চ ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। রাকিবকে সভাপতি ও নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের সাত সদস্যের নতুন আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও প্রচার সম্পাদক (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদা) শরিফ প্রধান শুভ।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটির আকার বাড়ানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে ছাত্রদল। নিয়ম অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ তিন মাস না হলে পূর্ণাঙ্গ করা যাবে না। তাই এখনই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারছে না ছাত্রদল। প্রথম ধাপে কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি তৃণমূলের জেলা কমিটিও পুনর্গঠন করা হবে। এর মধ্য দিয়েই আবারও রাজপথে ঘুরে দাঁড়াবে ছাত্রদল।
যদিও এই কমিটি রমজানের আগেই দেওয়ার কথা ছিল। তখন ছাত্রদলের সাবেক কয়েকজন শীর্ষ নেতা বাধা দেওয়ার কারণে কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে যায়। এখনো তারা কমিটিতে নিজস্ব বলয়ের ছাত্রনেতাদের পদ দিতে চাপ দিচ্ছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। শ্রাবণ-জুয়েল নেতৃত্বাধীন কমিটির বেশ কয়েকজনের পদোন্নতি হতে পারে। আগের কমিটির সহসভাপতি ছিলেন যারা তারাও এবার পদে থাকতে চান।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ছিলেন তাদেরকে মূল্যায়ন করার নির্দেশ রয়েছে হাইকমান্ডের। যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন, আগামীতে পাশে থাকবেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে। যারা আন্দোলনের সময়ে ছিলেন না, তাদেরকে কোনোভাবেই বিবেচনা করা হবে না। পদপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে এখন যাচাই-বাছাই চলছে, সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগির কমিটি আসবে।’
ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ছাত্রদলের জেলা ও জেলা পদমর্যাদার ১১৮টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৮২টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে মাত্র ৩৩টি কমিটির মেয়াদ রয়েছে, যেগুলো শ্রাবণ-জুয়েলের নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের বিগত কমিটির সময়ে হয়েছিল। বাকি জেলা কমিটিগুলো রাজীব-আকরাম এবং খোকন-শ্যামলের সময়ে দেওয়া হয়। এসব কমিটির প্রতিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। জেলা কমিটির মেয়াদ দুই বছর হলেও অনেক জেলায় এখন সাত থেকে আট বছর আগের কমিটি দিয়ে চলছে ছাত্রদলের কার্যক্রম। ২০১৪ সালের অক্টোবরে রাজীব-আকরামের নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের কমিটি হয়েছিল। আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে এসব মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে ছাত্রদল।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মতামত নিতে প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় কর্মিসভা করবে ছাত্রদল। ইতোমধ্যে রাজশাহী বিভাগের কর্মিসভা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার ফরিদপুর বিভাগে কর্মিসভা করবে সংগঠনটি। কর্মিসভার আলোচনায় বিগত আন্দোলনে তৃণমূল নেতাদের ভূমিকার প্রকৃত তথ্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। তার মতামতের ভিত্তিতে কমিটি ভেঙে দেওয়া বা পুনর্গঠন হবে। এই প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে কাজ করছে ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা।
তারা বলছেন, আন্দোলনে জেল-জুলুম, নির্যাতনের মাঝেও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো কমিটি ভেঙে দেওয়া হতে পারে। কারণ বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যেসব জেলা রাজপথে ছিল না, সেসব জেলার কমিটি বাতিল করা হবে। যারা রাজপথে ভূমিকা রাখেননি এমন কেউ জেলার নতুন কমিটিতে পদে আসতে পারবেন না।
সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম বলেন, ছাত্রনেতা যারাই রাজপথে ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে। আগের কমিটির যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তারা পদে আসবেন। আমাদের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে, আমরা মতামত দিয়েছি।