ঢাকা ২ আষাঢ় ১৪৩১, রোববার, ১৬ জুন ২০২৪

ঘুম আসার দোয়া

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম
ঘুম আসার দোয়া
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ঘুমন্ত বালকের ছবি। এআই

মহান আল্লাহ মানুষকে শারীরিক আরাম ও বিশ্রামের জন্য ঘুম দিয়েছেন। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য অনন্য এক নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই নিজ রহমতে তোমাদের জন্য রাত ও দিন বানিয়েছেন, যাতে তোমরা বিশ্রাম নিতে পারো ও আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৭৩)

আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ঘুমকে ক্লান্তি নিবারণের উপায় বানিয়েছি এবং রাতকে বানিয়েছি আবরণস্বরূপ।’ (সুরা নাবা, আয়াত: ৯-১০) 

এসব আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহতায়ালা মানুষের সারা দিনের কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি ও বিষণ্নতা দূর করার জন্য অনন্য এক নেয়ামত দান করেছেন, আর তা হলো ঘুম। কিন্তু সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের ঠিকমতো ঘুম হয় না; কিংবা ঘুম আসতে চায় না, তাদের জন্য এখানে কয়েকটি আমল দেওয়া হলো—

ঘুমের দোয়া পড়া

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আপনারই নামে মরে যাই আবার আপনারই নামে জীবন লাভ করি।

ঘুম না আসলে যে দোয়া পড়বেন

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতিস সাবয়ি, ওয়া মা আজাল্লাত ওয়া রাব্বাল আরদিনা, ওয়া মা আকাল্লাত ওয়া রাব্বাশ শায়াতিনি, ওয়া মা আদাল্লাত কুনলি জারাম মিন শাররি খালকিকা কুল্লিহিম জামিআ। আই ইয়াফরুতা আলাইয়া আহাদুম মিনহুম, আও আই ইয়াবগিয়া আলাইয়া আজ্জা ও জাল্লা সানাউকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ও লা ইলাহা ইল্লা আংতা।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, সাত আকাশের প্রভু এবং যার ওপর তা ছায়া বিস্তার করেছে, সাত জমিনের প্রভু এবং যা কিছু তা উত্থাপন করেছেন, আর শয়তানদের প্রতিপালক এবং এরা যাদের বিপথগামী করেছে! তুমি আমাকে তোমার সব সৃষ্টিকুলের অনিষ্টতা থেকে রক্ষার জন্য আমার প্রতিবেশী হয়ে যাও, যাতে সেগুলোর কোনোটি আমার ওপর বাড়াবাড়ি করতে না পারে অথবা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে না পারে। সম্মানিত তোমার প্রতিবেশী, সুমহান তোমার প্রশংসা। তুমি ছাড়া কোনো উপাসক নেই, তুমি ছাড়া আর কোনো উপাসক নেই।’(ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৯৬৬) 

আয়াতুল কুরসি পাঠ করা 
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৯৪৪৮)

আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম।

আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।


লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর

লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ০৮:৫৪ পিএম
আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪, ০৮:৫৪ পিএম
লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান
ছবি : সংগৃহীত

‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে শনিবার মুখরিত ছিল ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দান। সেখানে সমবেত হয় বিশ্বের ১৬০ দেশের ১৫ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান। মক্কা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ৪ বর্গমাইল আয়তনের এই আরাফাত ময়দান। এখানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেলাইবিহীন দুই খণ্ড সাদা কাপড় পরে হাজির ছিলেন হজযাত্রীরা। এ সময় আরাফাত ময়দানে হাজীযাত্রীরা তাসবিহ পাঠ, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের প্রার্থনা করেন। খবর বাসসের।

ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হলো হজ। শ্বেতশুভ্র পোশাকে আবৃত লাখ লাখ হজযাত্রী আরাফাত ময়দানের জাবালে রহমতের পাদদেশ ও মসজিদে নামিরার আশপাশে অবস্থান নিয়ে জীবনের পরম কাঙ্ক্ষিত হজ পালন করেন। জান্নাত থেকে বিতাড়িত মানবজাতির পিতা হজরত আদম (আ.) ও মাতা হজরত হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে দীর্ঘদিন একাকী ঘুরতে ঘুরতে এ আরাফাতের ময়দানে এসেই মিলিত হন। এই ময়দানে ‘রব্বানা জালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা লানাকুন্না মিনাল খসিরিন’- এ দোয়া পড়ার পর আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন। ১৪০০ বছরেরও আগে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (স.) এখানেই বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এ কারণে আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। এখানে হজযাত্রীরা ফজর ছাড়াও এক আজান ও দুই ইকামতে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করেন।

শুক্রবার রাতেই অধিকাংশ হজযাত্রীকে মোয়াল্লিমরা গাড়িতে করে নিয়ে আসেন আরাফাতে নির্ধারিত তাদের তাঁবুতে। তবে অনেকে শনিবার সকালে আসেন। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন। 
আরাফায় অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে হজের মূল খুতবা দেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ মাহের বিন হামাদ আল-মুআইকিলি। 

মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের তত্ত্বাবধানকারী জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগ জানায়, এ বছর আরাফার ময়দান থেকে প্রচারিত হজের খুতবার অনুবাদ প্রচারিত হয় বিশ্বের ৫০টি ভাষায়। এবারে হজের খুতবার বাংলা অনুবাদের দায়িত্বে ছিলেন সৌদি আরবে অধ্যয়নরত বাংলাদেশের চার শিক্ষার্থী ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। গত বছরও তারা এ দায়িত্বে ছিলেন। 

সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মাগরিব না আদায় করেই মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফাত ময়দান ছাড়েন হজযাত্রীরা। সেখানে যাওয়া মাত্র মাগরিব ও এশা এক আজানে, দুই ইকামতে আদায় করেন। এরপর মুজদালিফায় উন্মুক্ত আকাশের নিচে মাথা খোলা অবস্থায় রাত্রি যাপন করেন হজযাত্রীরা। আজ রবিবার তারা মুজদালিফার মিনায় প্রতীকী ‘শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের' জন্য নুড়ি সংগ্রহ করবেন। এ জন্য পুরো মুযদালিফাজুড়ে বিশেষ ধরনের ছোট ছোট পাথর ছড়িয়ে রাখা হয়। 

প্রতিবছরের মতো এবারও হজের দিন ভোরে কাবা আচ্ছাদিত করা হয় নতুন চাদরে।

প্রসঙ্গত, গত বছর সৌদি আরবে ১৮ লক্ষাধিক লোক হজ পালন করেন। যাদের প্রায় ৯০ শতাংশ বিদেশী।

 

 

তাকবিরে তাশরিক কী, কেন ও কখন পড়তে হয়?

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ০১:১৮ পিএম
আপডেট: ১৫ জুন ২০২৪, ০১:২০ পিএম
তাকবিরে তাশরিক কী, কেন ও কখন পড়তে হয়?
মসজিদে হারামে নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। ছবি : হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়

জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ তারিখ আসরের নামাজ পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর তাকবির বলতে হয়। একে তাকবিরে তাশরিক বলে। এ সময়ে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার বলা ওয়াজিব। তিনবার বললে সুন্নতের সওয়াব পাওয়া যায়। পুরুষরা উচ্চৈঃস্বরে এবং নারীরা নিচুস্বরে বলবে। (হেদায়া, ১/২৭৫)

ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়া হোক বা একাকী, ওয়াক্তের মধ্যে পড়া হোক বা কাজা, নামাজি ব্যক্তি মুকিম হোক বা মুসাফির, শহরের বাসিন্দা হোক বা গ্রামের—সবার ওপর ফরজ নামাজের পর একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। ফরজ নামাজের পর তাকবির বলতে ভুলে গেলে, স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকবির পড়ে নেবে। (দুররে মুখতার, ২/১৮০)

তাকবিরে তাশরিকের বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

তাকবিরে তাশরিকের বাংলা অর্থ
আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, তিনি ছাড়া সত্যিকার আর কোনো উপাসক নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান আর সমস্ত প্রশংসা শুধুমাত্র তাঁরই জন্য। (দারু কুতনি, ১৭৫৬)

যেভাবে এলো তাকবিরে তাশরিক
তখন ইবরাহিম (আ.) ছেলে ইসমাইল (আ.)-কে জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গলায় ছুরি রাখলেন। এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে নবি ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য পরীক্ষা। তিনি এ পরীক্ষায় পাস করলেন। আল্লাহ জিবরাইল (আ.)-কে একটি দুম্বা নিয়ে ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। জিবরাইল (আ.) ছুটলেন দুনিয়ার দিকে। জিবরাইল (আ.) আশঙ্কা করছিলেন, তিনি যেতে যেতেই ইবরাহিম (আ.) ছেলেকে জবাই করে বসবেন। তিনি আসমান থেকে আওয়াজ করে বললেন, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার।’ ইবরাহিম (আ.) আওয়াজ শুনে আসমানের দিকে তাকালেন। দেখলেন জিবরাইল আসছেন দুম্বা নিয়ে। তিনি আনন্দে আওয়াজে বললেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’ পিতার কণ্ঠে এ কথা শুনে ইসমাইল (আ.) উচ্চারণ করলেন, ‘আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ তাদের এ কথা আল্লাহর পছন্দ হয়। তিনি মুসলিমদের জন্য এই বাক্যমালা আইয়ামে তাশরিকে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পড়াকে আবশ্যক করে দেন। এটি পড়া ওয়াজিব। (ফাতাওয়ায়ে শামি, ২/১৭৮, ইনায়া শরহুল হিদায়া, ১/৪৬৪)

তাকবিরে তাশরিকের ফজিলত
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যেন তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ (সুরা হজ, আয়াত: ২৮)। বিখ্যাত সাহাবি ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এখানে ‘নির্দিষ্ট দিন বলতে ‘আইয়ামে তাশরিক’ ও ‘আল্লাহর স্মরণ’ বলতে তাকবিরে তাশরিক বোঝানো হয়েছে। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই দিনগুলোতে তাকবিরে তাশরিকের আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়...। ’ (বুখারি, হাদিস: ৯৬৯)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

 

মিনায় গমন, হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম
আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম
মিনায় গমন, হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে আজ শুক্রবার (১৪ জুন)। আজ ভোরে ইহরামের কাপড় পরে তাঁবুর শহর মিনায় গমনের মাধ্যমে পাঁচ দিনের হজ কার্যক্রম শুরু হবে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই হজযাত্রীদের মিনায় নেওয়া শুরু করেছেন অনেক মুয়াল্লেম। এশার নামাজের পর মক্কার নিজ নিজ আবাসন থেকে মিনার উদ্দেশে রওনা হন হাজিরা। 

আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র হজ। এদিন ভোররাতে মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হবেন হাজিরা। 

বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এবার বাংলাদেশসহ ১৮০টির বেশি দেশের প্রায় ২০ লাখ মুসল্লি হজ পালন করবেন। বাংলাদেশ থেকে হজ পালন করবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। 

মিনায় পৌঁছে হাজিরা আজ ফজর থেকে শুরু করে এশা অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন নিজ নিজ তাঁবুতে।

৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়। এ দিনের নাম ইয়াওমুল আরাফা। আগামীকাল ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর হাজিদের আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতেই নিয়ে যাবেন মুয়াল্লিমরা। সেখানে আগে পৌঁছে গিয়ে ফজর, জোহর-আসর আদায় করবেন আরাফাতের ময়দানে।

পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা চলে পাঁচ দিন। তার মধ্যে আরাফাতের দিবসকে ধরা হয় মূল হজ হিসেবে। মিনা থেকে ৯ জিলহজ শনিবার ভোর থেকেই হজযাত্রীরা ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। তাদের সমস্বরে উচ্চারিত ‘লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের আকাশ-বাতাস। দুপুরে হজের খুতবা শুনবেন তারা। তারপর এক আজানে হবে জোহর ও আসরের নামাজ। সূর্যাস্তের পর হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করে যাত্রা করবেন মুজদালিফার পথে। সেখানে আবার তারা এক আজানে আদায় করবেন মাগরিব ও এশার নামাজ। এ রাতে মুজদালিফায় তারা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন।

এ সময় তারা মুজদালিফা থেকে পাথর সংগ্রহ করবেন জামারায় প্রতীকী শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য। এরপর শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের পর জামারায় প্রতীকী বড় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন হজযাত্রীরা। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করবেন। কোরবানি করে মাথা মুণ্ডন করবেন। এহরাম খুলে পরবেন সাধারণ পোশাক। এরপর কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। সাফা-মারওয়ায় সাতবার সাঈ (চক্কর) করবেন। পরে আবার ফিরে যাবেন মিনায়। এরপর দিন এবং তারপর দিন অর্থাৎ টানা দুদিন দ্বিতীয় ও ছোট শয়তানকে পাথর মারার মধ্য দিয়ে হাজিরা শেষ করবেন হজের আনুষ্ঠানিকতা। 

ঈদুল আজহায় করণীয়-বর্জনীয়

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪, ০১:০০ পিএম
ঈদুল আজহায় করণীয়-বর্জনীয়
ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়া আবশ্যক। ছবি : ফ্রিপিক

কোরবানির দিন বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে দিবসসমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হলো কোরবানির দিন। এরপর এর পরের তিন দিন।’ (আবু দাউদ, ১৭৬৫)। এই কোরবানির দিনে কিছু করণীয়-বর্জনীয় রয়েছে। এখানে সেগুলো তুলে ধরা হলো—

  • খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা।
  • মিসওয়াকসহ অজু করে ভালোভাবে গোসল করা। 
  • যথাসাধ্য উত্তম পোশাক পরা। 
  • শরিয়তসম্মত সাজসজ্জা গ্রহণ করা।
  • আতর কিংবা অ্যালকোহলমুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করা। 
  • কোরবানির ঈদে নামাজের আগে কোনো কিছু না খাওয়া মুস্তাহাব। নামাজের পরে প্রথমে কোরবানি করা পশুর গোশত খাওয়া সুন্নত। (তিরমিজি, ৫৪৫)
  • সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। ঈদুল আজহার নামাজ ঈদুল ফিতরের নামাজের তুলনায় আগে আগে পড়া ভালো। 
  • পুরুষ হোক বা নারী, সবার জন্য ঈদের নামাজের আগে কোথাও কোনো ধরনের নফল নামাজ না পড়া এবং নামাজের পর ঈদগাহেও না পড়া। 
  • ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়া। (বুখারি, ৯৬৫)
  • রিকশা, ভ্যান, ঘোড়া, উট বা অন্য কোনো কিছুতে চড়ে ঈদগাহে না যাওয়া; বরং হেঁটে যাওয়া ভালো। তবে ফেরার পথে কোনো কিছুতে চড়ে ফিরলে তাতে দোষের কিছু নেই। (তিরমিজি, ১২৯৫)
  • ঈদগাহে যাওয়ার সময় মধ্যমপন্থায় উচ্চ শব্দে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা। তাকবিরে তাশরিক হলো—
    বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ্। 
  • সম্ভব হলে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, আরেক রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরা। (বুখারি, ৯৮৬)
  • ঈদের দিন আনন্দ প্রকাশ করা, বেশি বেশি সদকা করা, আল্লাহর পক্ষ থেকে অভিনন্দন গ্রহণ করা মুস্তাহাব। (ফাতহুল কাদির, ২/৫১৭)
  • ঈদের দিন একে অপরের সঙ্গে দেখা হলে শুভেচ্ছা বাক্য বলা। এরকম বলা যেতে পারে— বাংলা উচ্চারণ: ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।’ বাংলা অর্থ: আল্লাহ কবুল করুন আমাদের এবং আপনার পক্ষ থেকে।’ (বায়হাকি, ৩/৪৪৬) 
  • ঈদের দিনকে খেলাধুলা, অহেতুক ও অবৈধ বিনোদন এবং পাপাচারে পরিণত না করা।

লেখক: গবেষক

পশুকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪, ১২:৫১ পিএম
পশুকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
অধিকাংশ পশুব্যবসায়ী একটি গাড়িতে একাধিক পশু গাদাগাদি করে হাটে নিয়ে যান। ছবি : ইন্টারনেট

ঈদুল আজহার অন্যতম অনুষঙ্গ পশু কোরবানি। কেউ কেউ এরই মধ্যে পশু কিনে নিয়েছেন। আগে আগে পশু কেনা উত্তম কাজ। এতে পশুকে আদর-যত্ন করা যায়। পশুর প্রতি একটা ভালোবাসা তৈরি হয়। ইসলাম তো সেই পশুই কোরবানি দিতে বলেছে, যে পশু আদরের, যত্নের।

পশু কিনে নিজ তত্ত্বাবধানে রাখা উচিত। পশুকে নিয়মিত সুষম খাবার দিন। গায়ে ময়লা লেগে থাকলে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দিন। যে ঘরে পশু থাকবে, সে ঘরটিও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করে কিনা খেয়াল রাখুন। ভুলে যাবেন না, এই পশু আল্লাহকে উৎসর্গ করা হবে। এটি আপনার কাছে পবিত্র আমানত। এই আমানতের যত্নেই জান্নাতের রত্ন মিলবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ, ৩১২৭)

অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে কোরবানির পশুকে পায়ে হাঁটিয়ে বাড়ি নেন। এটি মোটেও ঠিক নয়। অধিকাংশ পশুব্যবসায়ী একটি গাড়িতে একাধিক পশু গাদাগাদি করে হাটে নিয়ে যান। এমন না যে পাঁচ-দশ মিনিটের রাস্তা। দীর্ঘপথে দীর্ঘসময় এই পশুগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একটু যে বসে জিরিয়ে নেবে, তার সুযোগটুকুও থাকে না। পশুর প্রতি এই অবিচার কেন? এর জন্যে আল্লাহ যদি বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান, কী জবাব দেবেন? 

মনে রাখবেন, পশুরাও আল্লাহর সৃষ্টি। তাদের যত্ন নেওয়াও ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘যেকোনো প্রাণীর ওপর দয়া করার মধ্যেও রয়েছে প্রভূত সওয়াব।’ (বুখারি, ৬০০৯)

এখন আবহাওয়া খুবই গরম। পশুকে গোসল করানো ও বেশি করে পানি খাওয়ানো প্রয়োজন। পানির সঙ্গে স্যালাইনও খাওয়ানো যেতে পারে। পশুকে কোনোভাবেই রাসায়নিক খাবার দেওয়া যাবে না। স্বাভাবিক খাবার দেবেন। কোরবানির পশুকে জবাই করার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। পশুটিকে খুব দ্রুত জবাই করতে হবে। কোনোরকম কষ্ট দেওয়া যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সবাইকে দয়া করার হুকুম দেন। তাই যখন জবাই করো, তখন দয়া করো। জবাই করার আগে (যাতে পশুর কষ্ট কম হয়) ছুরিতে ধার দিয়ে নাও।’ (নাসায়ি, ২/১৮৩)

লেখক: খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া