পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াতকে ‘আয়াতুল কুরসি’ বলা হয়। কুরসি শব্দের অর্থ চেয়ার বা আসন। আয়াতে ব্যবহৃত ‘কুরসি’ শব্দ থেকে আয়াতটির নামকরণ করা হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহতায়ালার একাত্ববাদ, সম্মানিত নাম, ক্ষমতা ও গুণসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আলোচিত হয়েছে।
আয়াতুল কুরসি হলো পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত। ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এক দিন উবাই ইবনে কাবকে জিজ্ঞাসা করলেন, সবচেয়ে ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ আয়াত কোনটি? উবাই ইবনে কাব বললেন, আয়াতুল কুরসি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার উত্তরকে সমর্থন করে বললেন, হে আবুল মানজার! তোমাকে এ উত্তম জ্ঞানের জন্য ধন্যবাদ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৬০২) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “প্রতিটি জিনিসের একটি চূড়া থাকে। কোরআনের চূড়া হলো সুরা বাকারা। এ সুরায় এমন একটি আয়াত আছে, যা কোরআনের অন্য আয়াতের ‘নেতা’। সেটা হলো আয়াতুল কুরসি।” (তিরমিজি, হাদিস : ৩১১৯)
ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজন নিরাপদ থাকে
আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) বলেন, ‘আমি আপনাকে একটি বিষয় স্মরণ করাতে চাই। আপনি আপনার ঘরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবেন। তাহলে শয়তান বা অন্য কিছু এতে প্রবেশ করতে পারবে না। যে ব্যক্তি সফরে রওনা হওয়ার আগে ঘরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ফুঁক দিয়ে বের হবে, সফর থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত তার সম্পদ ও পরিবার-পরিজন নিরাপদে থাকবে।’ (দুররে মনসুর, ৩/১৮১)
সংসারে শান্তি বজায় থাকবে
আলী (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি এ আয়াতটি (আয়াতুল কুরসি) বিছানায় শোয়ার সময় পড়বে; আল্লাহতায়ালা তার ঘরে বা সংসারে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘর-সংসারে শান্তি বজায় রাখবেন।’ (বাইহাকি, শুয়াবুল ইমান, হাদিস : ২৩৯৫)
শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজতে থাকা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করা হবে, সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ২১০৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা বাকারায় এমন একটি আয়াত রয়েছে যা, কোরআনের অন্য সব আয়াতের সরদার বা নেতা। সে আয়াতটি যে ঘরে পড়া হয়, তা থেকে শয়তান বেরিয়ে যায়।’ (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন, খণ্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৬৭৬)
জান্নাত লাভ
আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৯৯২৮)
আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা
আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিছানায় যাওয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তার কাছে আসবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
আল্লাহর প্রশংসাশ্রুতি পাঠ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আয়াতুল কুরসির একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট রয়েছে— এটি আরশের পায়ার কাছে আল্লাহতায়ালার প্রশংসা করতে থাকবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৬০২)
আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি। ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ। ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া লা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিইয়ুল আজিম।
বাংলা অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলো ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া ইব্রাহীমিয়া দারুল উলুম মাদরাসা, ধামরাই