![সালাম আদান-প্রদানের সুন্নত ও আদব](uploads/2024/05/09/salam-1715244554.jpg)
প্রথমে সালাম দেওয়া উচিত: সাহাবিদের সঙ্গে দেখা হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) আগে সালাম দিতেন। মোসাফাহা করে তাদের জন্য দোয়া করতেন। অন্যজন হাত না ছাড়লে তিনি হাত ছাড়াতেন না। (তিরমিজি, ৩৫০২; নাসায়ি, ১০২৩৪)
কথা বলার আগেই সালাম দেওয়া উচিত : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে প্রথমে সালাম দেয়। (আবু দাউদ, ৫১৯৭)
সালাম না দিলে, কথা বলার অনুমতি দিতে নিষেধ করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আগে সালাম দেয় না; তোমরা তাকে (কথা বলার) অনুমতি দিও না। (সহিহাহ, ৮১৭; সহিহুল জামে, ৭১৯০)
সশব্দে সালাম ও উত্তর দেওয়া উচিত: সশব্দে সালাম ও সালামের উত্তর দিতে হবে, যাতে অন্যরা শুনতে পায়। তবে কোথাও ঘুমন্ত মানুষ থাকলে এমনভাবে সালাম দেবে, যাতে শুধু জাগ্রত ব্যক্তি শুনতে পায় এবং ঘুমন্ত ব্যক্তির কোনো অসুবিধা না হয়।
মিকদাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি (রাসুলুল্লাহ) রাতে এসে এমনভাবে সালাম দিতেন, যাতে নিদ্রারত ব্যক্তি উঠে না যায় এবং জাগ্রত ব্যক্তি শুনতে পায়। (মুসলিম, ২০৫৫; মুসনাদে আহমাদ, ২৩৮৬৩)
ইশারার মাধ্যমে সালাম দেওয়া যাবে না: বোবা কিংবা দূরে অবস্থানকারী হলে অথবা বধির ব্যক্তিকে মুখে উচ্চারণসহ ইশারায় সালাম বা উত্তর দেওয়া যেতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা ইহুদি-নাসারাদের সালামের মতো সালাম দিও না। কারণ তারা হাত দ্বারা ইশারার মাধ্যমে সালাম দেয়। (সহিহুল জামে, ৭৩২৭; সহিহাহ, ১৭৮৩)
সালাম দেওয়ার সময় কারও সামনে মাথা অবনত করা বা ঝোঁকানো যাবে না: আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক সময় এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কোনো ব্যক্তি তার ভাই কিংবা বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার সময় সে কি তার সামনে ঝুঁকে (নত) যাবে? তিনি বললেন, না। ব্যক্তিটি আবার প্রশ্ন করল, তা হলে সে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে? তিনি বললেন, না। এরপর সে আবার জিজ্ঞাসা করল, তা হলে সে কি তার সঙ্গে মোসাফাহা (করমর্দন) করবে? তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন, হ্যাঁ। (তিরমিজি, ২৭২৮)
সালামে যথাসম্ভব শব্দ বাড়িয়ে বলা: সালামে যত শব্দ বাড়িয়ে বলা হবে, আল্লাহতায়ালা তত বেশি সওয়াব বাড়িয়ে দেবেন। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে এক ব্যক্তি বলল, আসসালামু আলাইকুম। তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন, ১০ নেকি। এরপর এক ব্যক্তি এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন, ২০ নেকি। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু। তিনি (রাসুলুল্লাহ) বললেন, ৩০ নেকি। (তিরমিজি, ২৬৮৯; আবু দাউদ, ৫১৯৫)
কে কাকে সালাম দেবে: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আরোহী ব্যক্তি পদাতিক ব্যক্তিকে, চলমান ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক মানুষ অধিক মানুষকে সালাম প্রদান করবে। (বুখারি, ৬২৩২) অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেছেন, ছোটরা বড়দের সালাম দেবে। (বুখারি, ৬২৩১) তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) চলার পথে শিশুদের আগে সালাম দিতেন। (বুখারি, ৬২৪৭)
অনুরূপ বা উত্তমরূপে সালামের উত্তম দেওয়া: এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন করবে অথবা অনুরূপই করবে। (সুরা নিসা, ৮৬)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক