ঢাকা ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঋণের কিছু অংশ ক্ষমা করলে যে সওয়াব হয়

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১০:৪৫ এএম
আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ১০:৪৫ এএম
ঋণের কিছু অংশ ক্ষমা করলে যে সওয়াব হয়
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণ মূলত একটি আমানত। আর এ আমানত রক্ষায় পবিত্র কোরআনে নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা আমানত তার প্রাপককে দিয়ে দাও।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৮) 

ঋণ মানুষের সবচেয়ে বড় বোঝা। এ বোঝা শুধু দুনিয়াতেই নয়; আখেরাতেও টানতে হবে। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, “একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বর্ণনা করলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান হচ্ছে সর্বোত্তম আমল।’ তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, তবে আমার সকল পাপ মোচন হয়ে যাবে?’ তখন তিনি তাকে বললেন, ‘হ্যাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল হও, প্রতিদান লাভের আশায় পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও।’ তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কী বললে?’ তখন সে (আবার) বলল, ‘আপনি কি মনে করেন, আমি যদি আল্লাহর রাস্তায় নিহত হই, তাহলে আমার সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে?’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি ধৈর্যধারণকারী হও, প্রতিদানের আশায় পৃষ্ঠপ্রদর্শন না করে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থায় নিহত হও; তবে ঋণের কথা আলাদা। কারণ, জিবরাইল (আ.) আমাকে এ কথা বলেছেন।” (মুসলিম, হাদিস: ১৮৮৫)

ঋণগ্রস্ত হওয়া ভালো নয়। তবে ঋণগ্রস্ত হলে দ্রুতই তা পরিশোধ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃত্যুর আগে যাবতীয় ঋণ পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দরিদ্র হওয়ার কারণে অনেক সময় ঋণ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে ঋণের কিছু অংশ মাফ করে দেওয়া উত্তম কাজ, সওয়াবের কাজ। সুন্নাহও বটে। যেন ঋণ পরিশোধ করা তার জন্য সহজ হয়। কাব (রা.) মসজিদের ভেতরে ইবনে আবি হাদরাদ (রা.)-এর কাছে তার পাওনা ঋণের তাগাদা দিলেন। দুজনের মধ্যে এ নিয়ে বেশ উচ্চবাচ্য হলো। এমনকি তাদের কথার আওয়াজ শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘর থেকে পর্দা সরিয়ে তাদের কাছে এলেন। এরপর ডাক দিলেন, ‘হে কাব।’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘লাব্বাইক ইয়া রাসুলাল্লাহ।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমার পাওনা ঋণ থেকে এতটুকু ছেড়ে দাও।’ হাতে ইশারা করে বোঝালেন। অর্থাৎ অর্ধেক পরিমাণ। তখন কাব (রা.) বললেন, ‘আমি ছেড়ে দিলাম হে আল্লাহর রাসুল।’ তখন তিনি ইবনে আবি হাদরা (রা.)কে বললেন, ‘যাও এবার বাকিটা পরিশোধ করে দাও।” (বুখারি, হাদিস: ৪৫৫)

এ কাজটি অনেকের কাছে একটু কষ্টকর মনে হবে। কারণ, তা করতে গেলে ঋণদাতার অধিকার লাঘব হয়। কিন্তু ঋণগ্রহিতা যদি বাস্তবেই ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়ে, তখনই এই সুন্নাহ অবলম্বন করা উচিত। 

আজকাল অনেক ব্যাংকও ঋণগ্রস্তদের কিছু ঋণ মাফ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) পনেরো শ বছর আগে এ কাজটি করেছেন। শুধু তাই নয়, ঋণের সামান্য অংশ মাফ করছে না দেখে অনেক ঋণদাতার ওপর তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার দরজার কাছে বিবাদের আওয়াজ শুনতে পেলেন; দুজনই উঁচু আওয়াজে কথা বলছিল। একজন আরেকজনের কাছে ঋণের কিছু অংশ মাফ করে দেওয়ার, সহানুভূতি দেখানোর (কিছু সময় দেওয়ার) অনুরোধ করছিল। আর অপর ব্যক্তি বলছিল, ‘না, আল্লাহর শপথ। আমি তা করব না।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বের হয়ে তাদের কাছে এসে বললেন, ‘সৎ কাজ করবে না বলে যে আল্লাহর নামে শপথ করেছে সে ব্যক্তিটি কোথায়?’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি।’ সে যা ভালো মনে করে তার জন্য তাই হবে।” (বুখারি, হাদিস: ২৫৫৮) অর্থাৎ সেই সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুপারিশ মেনে নিয়ে ঋণগ্রস্তের চাহিদা অনুযায়ী কিছু অংশ মাফ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঋণের কিছু অংশ মাফ করে দেওয়ার মাধ্যমে সওয়াব পাওয়া যায়। নবিজি (সা.)-এর সুন্নতের ওপর আমল হয়।  

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

 

কোরবানির নিজ অংশের গোশত বিক্রি কী জায়েজ?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ পিএম
কোরবানির নিজ অংশের গোশত বিক্রি কী জায়েজ?
চামড়া ও গোশতের ছবি। সংগৃহীত

কোরবানি, মুসলিম উম্মাহর এক মহান ইবাদত। ত্যাগের এই দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করা হয়। কোরবানির গোশত বিতরণ ও ব্যবহার নিয়ে সমাজে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যা নিরসনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মুসনাদে আহমাদ বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রাথমিকভাবে কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি খেতে নিষেধ করেছিলেন, যাতে সবাই গোশত পায়। পরে তিনি এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে অনুমতি দেন যে, যতদিন ইচ্ছা কোরবানির গোশত খাওয়া যাবে। তবে, তিনি সুস্পষ্টভাবে কোরবানির গোশত এবং হাদী (হজের সময় কোরবানিকৃত পশু) এর গোশত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। তাঁর নির্দেশ ছিল, নিজেরা খাও এবং অন্যদেরকে দান করো।’(হাদিস,১৬২১০)

একইভাবে, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করাও নিষেধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এগুলোর চামড়া নিজেদের কাজে ব্যবহার করো। তা বিক্রি করো না।’ এর অর্থ হলো, চামড়া ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে, যেমন জায়নামাজ বা বালিশের কভার বানানো। যদি চামড়া বিক্রি করতেই হয়, তবে সেই অর্থ দরিদ্রদের মাঝে সদকা করতে হবে; নিজের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।

অতএব, এই হাদিসের আলোকে মাসয়ালাটি স্পষ্ট হয় যে, কোরবানির নিজ অংশের গোশত হোক বা অন্য কোনো অংশের, তা বিক্রি করা জায়েজ নয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং অভাবীদের মাঝে গোশত বিতরণ করে তাদের হক আদায় করা। কোরবানির এই মহৎ উদ্দেশ্যকে সমুন্নত রাখতে আমাদের শরিয়তের নির্দেশনা মেনে চলা আবশ্যক। যদি কেউ আপনাকে হাদিয়া হিসেবে কোরবানির গোশত দেয়, তবে তা আপনি খেতে পারবেন।

 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

ইবলিস কী সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিল?

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
ইবলিস কী সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিল?
কোরআনুল কারিমের ছবি। সংগৃহীত

কোরআনে বিভিন্ন প্রিয় নবির সঙ্গে আল্লাহর বিশেষ সম্পর্কের কথা এসেছে। যেমন- আল্লাহ সরাসরি কথা বলেছেন হজরত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে ‘তুর’ পাহাড়ে এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে মিরাজে আরশের উচ্চাসনে। এটি নবিদের জন্য ছিল এক অনন্য সম্মান। সাধারণ কোনো বাদশার সঙ্গেও কথা বলা যেমন মর্যাদার, তেমনি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য নিঃসন্দেহে সর্বোচ্চ সম্মান।

কিন্তু ইবলিস যে অবাধ্য ও অভিশপ্ত তাকে নিয়েও কোরআনে আল্লাহর প্রশ্নোত্তরের বর্ণনা রয়েছে। এতে প্রশ্ন ওঠে, সে কি আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিল? আল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন তোকে আদেশ করলাম, তখন তুই কেন সিজদা করলি না?’(সুরা আরাফ, ১২)

জবাবে ইবলিস বলেছিল, ‘আমি আদমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’

এই আয়াতগুলো সরাসরি কথোপকথনের ইঙ্গিত দেয়। তবে বহু আলেমের মতে, এই কথাবার্তা হয়েছে ফেরেশতাদের মাধ্যমে। যেমন- ইমাম সুয়ুতি তাঁর গ্রন্থ লুকতুল মারজান ফি আহকামিল জান-এ ইবনু আকিল হাম্বলির বরাতে বলেন, ইবলিস কখনো আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলেনি। বরং সব কিছু হয়েছে ফেরেশতাদের মাধ্যমে।’

তবে অধিকাংশ তাফসিরবিদ ও কোরআনের সরল পাঠ অনুসারে এই সংলাপ হয়েছিল সরাসরি, তবে তা ঘটেছে ইবলিস অভিশপ্ত ও বিতাড়িত হওয়ার আগেই। তখন সে ছিল মর্যাদাসম্পন্ন, এমনকি ফেরেশতাদের সর্দারদের একজন হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু আল্লাহর আদেশ অমান্য করে অহংকারে ডুবে যাওয়ায় সে চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত হয়। এর পর আর কখনোই সে আল্লাহর সান্নিধ্য পায়নি।

এ থেকেই শিক্ষা, আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া কোনো গুণ বা পদমর্যাদার কারণে স্থায়ী হয় না, বরং তা নির্ভর করে আনুগত্য, বিনয় ও বিনম্রতার ওপর।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

পশু জবাইয়ের সময় দয়া দেখানো কতটা জরুরি?

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১০:০০ পিএম
পশু জবাইয়ের সময় দয়া দেখানো কতটা জরুরি?
কোরবানির পশু জবাই করার ছবি। সংগৃহীত

ঈদুল আযহা এলে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোরবানি করা হয়। এটি একটি মহান ইবাদত। তবে এই ইবাদত পালনের সময় পশুর প্রতি সহানুভূতি ও দয়া প্রদর্শন করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। কোরবানি মানেই শুধু জবাই করা নয়, বরং তা হতে হবে সর্বোত্তম পন্থায়, যাতে পশুর কষ্ট ন্যূনতম হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এই বিষয়ে অত্যন্ত জোরালো নির্দেশনা দিয়েছেন। শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা সকল কিছুর ওপর অনুগ্রহকে অপরিহার্য করেছেন। অতএব, যখন তোমরা (শরিয়ত মোতাবেক হদ বা কিসাস হিসেবে) হত্যা করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা করো, যখন জবাই করবে তো উত্তম পদ্ধতিতে জবাই করো। এবং প্রত্যেকে তার ছুরিতে শান দেবে, যেন জবাইয়ের প্রাণীর বেশি কষ্ট না হয়।’(মুসলিম, ১৯৫৫; আবু দাউদ, ২৮১৫; নাসায়ী, ৪৪০৫) 

এই হাদিস থেকে আমরা কয়েকটি বিষয় পরিষ্কারভাবে জানতে পারি:

ক. অনুগ্রহ ও দয়া: ইসলাম সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়। পশুর প্রতিও এই দয়া প্রযোজ্য।

খ. উত্তম পদ্ধতি: জবাইয়ের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। এর অর্থ হলো, দ্রুত ও নিখুঁতভাবে জবাই সম্পন্ন করা, যাতে পশু অপ্রয়োজনীয় কষ্ট না পায়।

গ. ছুরিতে শান দেওয়া: ধারালো ছুরি ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক। ভোঁতা ছুরি পশুর কষ্টকে দীর্ঘায়িত করে, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ধারালো ছুরি পশুর জন্য দ্রুত ও কম যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু নিশ্চিত করে।

কোরবানির সময় পশুকে অহেতুক টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া, অন্যদের সামনে জবাই করা, কিংবা একটি পশুর সামনে অন্য পশুকে জবাই করা থেকেও বিরত থাকা উচিত। এটি পশুর মানসিক কষ্টের কারণ হয়।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

যেসব পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
যেসব পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়
গরুর ছবি । সংগৃহীত

বারা ইবনে আযেব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, চার প্রকারের পশু কোরবানি করা জায়েজ নয়। যথা : পশুর উভয় বা কোনো এক চোখের দৃষ্টিহীনতা স্পষ্ট হলে, কোনো এক পা খোড়া হলে, অতি রুগ্ন হলে এবং এত শীর্ণ পশু, যার অস্থিমজ্জা সারশূন্য হয়ে পড়েছে। (ইবনে হিব্বান, ৫৯২১; আবু দাউদ, ২৮০২; নাসায়ী, ৪৩৬৯; ইবনে মাজাহ, ৩১৪৪)
আলি ইবনে আবি তালেব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কানের অগ্রভাগ কাটা প্রাণী, কানের গোড়া থেকে কেটে ঝুলে আছে এমন প্রাণী, কান ফেটে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়া প্রাণী, কানে গোল ছিদ্রবিশিষ্ট প্রাণী ও কান বা নাক একেবারে কেটে গেছে- এমন প্রাণী কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, ৩১৪২; মুসনাদে আহমাদ, ৬০৯)

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

 

জবাইয়ের সময় ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলা কেন জরুরি?

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
জবাইয়ের সময় ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলা কেন জরুরি?
পশু জবাইয়ের পূর্বের ছবি । সংগৃহীত

ঈদুল আযহা এলে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে পশু কোরবানি করে থাকেন। এই মহান ইবাদত পালনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-কানুন রয়েছে, যা মেনে চলা আবশ্যক। এর মধ্যে অন্যতম হলো পশু জবাইয়ের সময় বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলা। এটি কেবল একটি বাক্য নয়, বরং মহান আল্লাহর নাম ও মহিমা ঘোষণার মাধ্যমে এই ইবাদতকে পূর্ণাঙ্গ করার একটি অপরিহার্য অংশ।

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন বড় শিংবিশিষ্ট সাদা-কালো বর্ণের দুটি নর দুম্বা কোরবানি করতেন, তখন তিনি বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলতেন। বর্ণনাকারী আরও বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পশুর ঘাড়ের ডানপাশে পা রেখে নিজ হাতে যবাই করতে দেখেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, ১১৯৬০, ১২১৪৭)। এই হাদিস থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, কোরবানি বা যেকোনো হালাল পশু যবাইয়ের পূর্বে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র নাম উচ্চারণ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা এবং এর মাধ্যমে যবাইকৃত পশু হালাল হয়।

বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলার অর্থ হলো, আল্লাহর নামে শুরু করছি, আল্লাহ মহান। এর মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং স্বীকার করে যে, এই কোরবানি কেবল তাঁরই জন্য। এটি শুধু পশু জবাইয়ের একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একটি আত্মিক সংযোগের বহিঃপ্রকাশ। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই তাসমিয়া (বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার) বাদ দেয়, তবে সে পশু হালাল হবে না বলে অধিকাংশ ফকিহগণ অভিমত দিয়েছেন।

কাজেই, কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালনের সময় আমাদের সকলের উচিত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করা এবং পূর্ণাঙ্গ সওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে সঠিক নিয়ম মেনে বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে পশু কোরবানি করা। এটি শুধু কোরবানিকে বৈধই করে না, বরং ইবাদতের মান ও গুরুত্বকেও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

 

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক