ইসলাম কল্যাণের ধর্ম। মানুষকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার ধর্ম। এ ধর্মের প্রতিটি বিধান দেওয়া হয়েছে মানুষের ভালোর জন্য। মুসলমান যখন দুঃখ-কষ্ট পায়, বিনিময়ে গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা ও রোগ যা দিয়েই একজন মুমিন আক্রান্ত হোক, এমনকি কোনো উদ্বেগও যদি তাকে উদ্বিগ্ন করে, তবে আল্লাহতায়ালা এর বিনিময়ে তার গুনাহসমূহ (ছোট গুনাহ) মাফ করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৩১৮)
এ কারণেই অসুস্থ অবস্থায় কোনো মুমিনের পাপে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। কারণ তাহলে পাপের কারণে ওই পুরস্কার ও সুবিধা থেকে সে বঞ্চিত হবে। অসুস্থ হলে কোনো নাপাক, অপবিত্র ও হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসা নেওয়াও চরম ভুল। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা যেসব বস্তু হারাম করেছেন তাতে তিনি তোমাদের জন্য কোনো আরোগ্য রাখেননি। তার এ কথাটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ থেকেই সংগৃহীত।’ (মুসতাদরাক লিল হাকিম, হাদিস: ৭৫০৯)
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ অপবিত্র জিনিস দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৭০) হাদিসে ‘খবিস’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এ ব্যাপক শব্দের মধ্যে হারাম, অপবিত্র ও ঘৃণিত সব জিনিস অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বলা ব্যাপক অর্থবোধক শব্দগুলোর অন্যতম এটি। অর্থাৎ যত অপবিত্র বস্তু তাঁর যুগে ছিল অথবা পরবর্তীকালে উদ্ভব ঘটবে, সবই নিষিদ্ধের তালিকায় চলে আসবে। ফলে চিকিৎসা বা নিরাময় লাভে তা ব্যবহার করা যাবে না।
তারিক ইবনে সুওয়াইদ জুফি (রা.) একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে নিষেধ করলেন অথবা মদ প্রস্তুত করাকে খুব খারাপ মনে করলেন। এরপর তারিক (রা.) বললেন, ‘আমি তো ওষুধ প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে মদ বানাই।’ তিনি বললেন, ‘এটি তো (রোগ নিরাময়কারী) ওষুধ নয়; বরং এটি নিজেই রোগ।” (মুসলিম, হাদিস: ১৯৮৪)
কেউ যদি হারাম বা অপবিত্র জিনিস দ্বারা চিকিৎসা করতে একান্ত বাধ্য হয় এবং হারাম বা অপবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা না থাকে, তা হলে তার জন্য প্রয়োজন অনুপাতে হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসার অনুমতি রয়েছে। কারণ কোরআনে জীবন সংকটাপন্ন হলে হারাম জিনিস ভক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দুররুল মুখতার কিতাবে হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসার একটি সুস্পষ্ট মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে। হারাম জিনিসের মাঝে চিকিৎসা সুনিশ্চিত হয় এবং এটি ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা না থাকে, তা হলে হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হবে। (আদ-দুররুল মুখতার, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২১০)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক