আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের হয়েছে কী যে, যখন তোমাদের আল্লাহর পথে বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তোমরা আরও জোরে মাটি কামড়ে ধরো। তোমরা কি আখেরাতের স্থলে দুনিয়ার জীবনকেই বেশি পছন্দ করো? আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী তো অতি সামান্য। তোমরা যদি যুদ্ধাভিযানে বের না হও, তাহলে তোমাদের ভয়াবহ শাস্তি দেওয়া হবে, আর তোমাদের স্থলে অন্য সম্প্রদায় আনা হবে (অথচ) তোমরা তার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৮-৩৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন মদিনায়। এর মধ্যে আত্মরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কয়েকটি যুদ্ধ করেছেন তিনি। সবগুলো যুদ্ধ করেছেন মদিনার সীমানায় কিংবা আশপাশে থেকে। এ যুদ্ধে যাবেন মদিনার বাইরে। যেতে হচ্ছে। সময়টি ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের নবম হিজরি। যুদ্ধটি তাবুকের যুদ্ধ।
তাবুক মদিনা ও দামেস্কের (সিরিয়া) মধ্যবর্তী একটি জায়গার নাম। মদিনা থেকে এটি ৬৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ইসলামের বিরুদ্ধে আরবের কাফের ও মুনাফিকদের শেষ চেষ্টা ছিল এই যুদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দূত হারেস বিন উমায়ের (রা.)-কে হত্যার মধ্য দিয়ে রোমানদের বিরুদ্ধে তাবুক যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।
রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার দূতের মাধ্যমে জানতে পারলেন, মুতা যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে চূড়ান্ত ফায়সালাকারী একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে পরাশক্তি রোম। শাম ও আরব সীমান্তে তারা বিশাল বাহিনী মোতায়েন করেছে। চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় মদিনায়। নবিজি (সা.) সাহাবিদের বললেন, হিরাক্লিয়াসের আক্রমণের আগে আমরা আক্রমণ করব। মদিনার সব মুসলমানকে তৈরি হতে বললেন। এর আগে এমন রাজকীয় বাহিনীর মুখোমুখি তারা কোনো দিন হননি। মদিনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধও করেননি।
এদিকে মদিনায় তখন খেজুর পাকার মৌসুম চলছে। খেজুরের ভারে নুইয়ে আছে কাঁদিগুলো। মন ভালো হয়ে যায় এমন একটি দৃশ্য লেগে আছে বাগানগুলোয়। সময়মতো ঘরে খেজুর তুলতে পারলে এবার জীবন হবে অন্যরকম। তবে সময়মতো খেজুর ঘরে না তুলতে পারলে মুশকিলে পড়তে হবে। মদিনায় খাদ্যাভাবও দেখা দিয়েছে এর মধ্যে। তীব্র গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।
এদিকে তাবুক প্রান্তরে পৌঁছাতে হলে পাড়ি দিতে হবে দুর্গম মরুভূমি। যুদ্ধের রসদও তেমন নেই। এসবের মধ্যে শহর ছেড়ে এমন রাজকীয় বিশাল বাহিনীর মোকাবিলা করতে যাওয়া; বিরাট কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপারই বটে। কিন্তু রাসুলপ্রেমী সাহাবিরা সবকিছু পেছনে ফেলে ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নবিজির হাতে যুদ্ধের বাইয়াত নেন। অনেকে যুদ্ধে যেতে চাইলেন না। আল্লাহ তাদের মুনাফিকির পরিচয় সুস্পষ্ট করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ৩০ হাজার যোদ্ধা সাহাবির কাফেলা নিয়ে চললেন তাবুক প্রান্তের দিকে। হিরাক্লিয়াস মুসলমানদের এমন দুঃসাহসিক অভিযানের সংবাদ পেয়ে ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিনা যুদ্ধেই আল্লাহ মুসলমানদের বিজয় দেন।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক