ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

সাক্ষাৎকার স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট হজব্যবস্থা গড়তে কাজ করছি : মুহম্মদ কামরুজ্জামান

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ০৩:০০ পিএম
স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট হজব্যবস্থা গড়তে কাজ করছি : মুহম্মদ কামরুজ্জামান
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, পরিচালক, হজ অফিস, আশকোনা, ঢাকা

প্রশ্ন : এবার ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। হাজিরা আল্লাহর মেহমান, তাদের আপনি কীভাবে সমাদর করছেন?
মুহম্মদ কামরুজ্জামান : আমরা আল্লাহর মেহমানদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এর আগে একজন হাজিকে তিনবার হজ অফিসে আসতে হতো, এখন একবার আসলেই হয়। হজক্যাম্পে ২৪টি ডরমেটরি আছে, একসঙ্গে ২ হাজার ৪০০ হাজি ঘুমাতে পারেন সেখানে। মসজিদের নিচতলায় পুরুষ ও দুই তলায় নারীদের নামাজের জায়গা আছে। দুটি ক্যান্টিনের খাবারের মান যাচাই করা হচ্ছে প্রতিদিন, দুটিতে খাবারের দামও সমান। ১৭টি ব্যাংক কাজ করছে এখানে। ডাক্তার-নার্স ও ফার্মাসিস্ট আছেন ২৪ জন। ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছেন তারা। হাজিদের বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনও শেষ হচ্ছে এখানে। ইমিগ্রেশনের সামনে রোড টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ ওকালাহ কোম্পানি হাজিদের ব্যাগে স্টিকার লাগিয়ে দিচ্ছেন। আমরা আগেই সাত রঙের স্টিকার তৈরি করেছি। একজন হাজি একই রঙের তিনটি স্টিকার পান। এই রঙের কারণে সৌদি আরবে তাদের সমস্যায় পড়তে হয় না। হাজিদের সঙ্গে যারা আসেন, তাদের জন্যও পাশের মার্কেটে টয়লেটের ব্যবস্থা আছে। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা আছে। মশা দূরীকরণে উদ্যোগ নিয়েছি। হাজিদের সেবায় ১৯৪৮ সাল থেকে আঞ্জুমান খাদেমুল হজ কাজ করছে এখানে। কাজ করছে রোভার স্কাউটও। 

প্রশ্ন : এখানে হাজিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে?
মুহম্মদ কামরুজ্জামান : হজক্যাম্প মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের গাইডলাইন দেওয়া আছে। তারা এখানে আগত হাজিদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর হজবিষয়ক আলোচনা করছেন। প্রতিদিন মাগরিবের নামাজের পর ইহরামের কাপড় পরার নিয়ম হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন। 

প্রশ্ন : হাজিদের নিয়ে কাজ করতে কেমন লাগে?
মুহম্মদ কামরুজ্জামান : আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি আমাকে হাজিদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। এর আগেও আমি জেদ্দা কনস্যুলেটে পাঁচ বছর হাজিদের খেদমতে কাজ করেছি। এখানে কর্মরত সবার যেমন লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ই-হজ ব্যবস্থাপনা সফল করা; একই সঙ্গে আখেরাতের একটা পুঁজি যে এই কাজের মাধ্যমে সংগ্রহ হচ্ছে, এটা সবাই হৃদয়ে ধারণ করছে। 

প্রশ্ন : হজক্যাম্প নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাই।
মুহম্মদ কামরুজ্জামান : হজক্যাম্পকে শুধু মৌসুমকেন্দ্রিক ব্যবহার না করে আমরা সারা বছরের কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে ডিজিটাল ল্যাব তৈরির পরিকল্পনা আছে। এই ল্যাবের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে প্রশিক্ষণ দিলে এটা মানুষের কাজে লাগবে। হাজিদের সব কার্যক্রম আমরা সহজ করতে চেষ্টা করছি। স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট হজব্যবস্থা গড়তে কাজ করছি। সর্বোপরি বাংলাদেশের মানুষের হজ যেন কবুল হজ হয়, সে বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করতে কাজ করছি।

স্বপ্নে মসজিদ দেখা কিসের ইঙ্গিত?

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
স্বপ্নে মসজিদ দেখা কিসের ইঙ্গিত?
দৃষ্টিনন্দন মসজিদের ছবি। সংগৃহীত

স্বপ্ন মানবমনের রহস্যময় জগৎ, যা আমাদের ভেতরের অনুভূতি, ভবিষ্যতের পূর্বাভাস এবং আধ্যাত্মিক উপলব্ধির বার্তা বহন করে। ইসলামে, মসজিদ বা কাবার মতো পবিত্র স্থান স্বপ্নে দেখা অত্যন্ত শুভ ও তাৎপর্যপূর্ণ। মসজিদ কেবল ইবাদতের স্থান নয়, এটি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের চাবিকাঠি এবং আখিরাতের পথের দিশারি। 

স্বপ্নে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষের আগমন এবং অবাধে প্রবেশ করার সুযোগ— এসবই কল্যাণ ও বরকতের লক্ষণ। মসজিদ আখিরাতের প্রতি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, ঠিক যেমন ময়লার স্তূপ পার্থিব মোহ ও লোভের প্রতীক। স্বপ্নে মসজিদ কখনো পবিত্র কাবা শরিফ, ন্যায়বিচারের স্থান, জ্ঞানীর মজলিস, হজের মিলনক্ষেত্র বা সত্যের পথে জিহাদের ময়দানের প্রতীক হতে পারে। এটি মূলত সাওয়াব, সাহায্য ও কল্যাণের এক পবিত্র আশ্রয়স্থল।

যদি কোনো ব্যক্তি স্বপ্নে নিজেকে মসজিদ নির্মাণ করতে দেখে, তবে এর অর্থ হলো তার মধ্যে নেতৃত্ব, ন্যায়বিচার বা জ্ঞান বিতরণের মতো গুণাবলি রয়েছে। স্বপ্ন অনুযায়ী, সে বিচারকের আসনে বসতে পারে, ফতোয়া দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে অথবা একজন বিদ্বান আলেম হিসেবে সমাজে সম্মানিত হতে পারে। লেখক বা প্রকাশকের জন্য এই স্বপ্ন তাদের জ্ঞান ও লেখনীর মাধ্যমে মানুষের উপকারিতার ইঙ্গিত দেয়। অবিবাহিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি বিবাহের শুভ সংবাদ বয়ে আনতে পারে।

তবে, যদি মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্য জাগতিক হয়, যেমন ধনসম্পদ লাভ, তবে এর অর্থ দাঁড়ায় তার উপার্জনের পথ হবে ন্যায়সঙ্গত ও দীর্ঘস্থায়ী। এই নির্মাণকার্য কোনো কল্যাণকর প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্রামাগার বা দাতব্য ভাণ্ডারও হতে পারে, যা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে বিবেচিত হবে।

অন্যদিকে, স্বপ্নে মসজিদ ধ্বংস করতে দেখা একটি অশুভ লক্ষণ, যা ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়। মসজিদের পবিত্র স্থানে দোকান বা গর্ত নির্মাণ করা আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, দুনিয়ার প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ এবং দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়ার লক্ষণ। এটি পারিবারিক কলহ বা দাম্পত্য জীবনে অস্থিরতাও ডেকে আনতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, স্বপ্নে মসজিদ দেখা কেবল একটি সাধারণ স্বপ্ন নয়, বরং এটি আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের গভীর বার্তা বহন করে। এই স্বপ্ন আমাদের আত্মিক পথে আরও সতর্ক ও সচেতন হতে এবং আল্লাহর পথে অবিচল থাকতে উৎসাহিত করে। তবে এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.)-এর মূল্যবান ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

মধু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরীক্ষিত ওষুধ

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৩ এএম
মধু রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পরীক্ষিত ওষুধ
মৌমাছি ও মধুর ছবি। সংগৃহীত

আমরা সবাই জানি, অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শেখালেন, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা সুন্নাহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ব্যাধির প্রতিকার রয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩০) এ জন্য সঠিক সময়ে ও যথাযথ উপায়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, আর আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা আরোগ্য লাভ করব।

চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন হাদিসের মধ্যে একটি খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো মধু পান। মধু একটি বিশেষ উপাদান, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী, বিশেষত পেটের ব্যথায়। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ‘তাকে মধু পান করাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৮৬)

এই ঘটনা বারবার ঘটেছিল। লোকটি প্রথমবার মধু পান করলেও তাঁর পেটের ব্যথা সেরে ওঠেনি। তখন আবারও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে মধু পান করতে বলেছেন। দ্বিতীয়বারও যখন ফলপ্রসূ কিছু হয়নি, তখন তিনি তৃতীয়বারও একই নির্দেশ দেন। অবশেষে লোকটি আবার এসে জানালেন যে, মধু পান করার পর তাঁর পেট ভালো হয়ে গেছে। এই ঘটনাটি আমাদের শেখায় যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কিছু নির্দেশ দেন, তখন তার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা জরুরি।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু শারীরিক চিকিৎসা সম্পর্কেই বলেননি, বরং তিনি মধুর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন। একবার যদি মধু পান করা ফলপ্রসূ না হয়, তবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বারে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় রোগের প্রতিকার হবে, তবে আমাদের বিশ্বাস থাকতে হবে।

কোরআনের সুরা নাহলে বলা হয়েছে, ‘তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার রয়েছে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৬৯) এটি মধুর উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে রোগের প্রতিকার পাওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই আয়াতের দ্বারা আমাদেরকে মধুর উপকারিতা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

মধু পান কেবলমাত্র একটি সুন্নাহ নয়, বরং এটি আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে, এর অর্থ এই নয় যে আমরা ডাক্তারদের কাছে যেতে নিষেধ। বরং ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত, সেই সঙ্গে মধু পান করা আমাদের জন্য একটি সুন্নাহ হিসেবে পালন করা উচিত, যাতে আমরা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় সুন্নাহ অনুসরণ করে বিরাট পুরস্কার অর্জন করতে পারি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

 

পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ইসলামের একটি মহৎ শিক্ষা

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো ইসলামের একটি মহৎ শিক্ষা
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর ছবি । সংগৃহীত

সমাজে শান্তি, সুরক্ষা এবং সহযোগিতা স্থাপন করা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর মধ্যে এমন অনেক কাজ রয়েছে, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ ও সুন্দর করে তোলে। এক্ষেত্রে এমন অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না- এই অজুহাতে অনেকে এড়িয়ে যান। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের উৎসাহিত করেছেন আমাদের নিজেদের ছোট ছোট উদ্যোগ দিয়ে সমাজকে আরও সুন্দর, মানবিক ও সুষ্ঠু করে তুলতে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহর হলো পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো একটি সদকা। (সহিহ বুখারি, ২৮২৭) অর্থাৎ, আমরা যখন রাস্তার ওপর পড়ে থাকা কাঁটা, পাথর বা অন্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বস্তু সরিয়ে দিই, তখন আল্লাহর কাছে তা একটি সদকা হিসেবে গণ্য হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শুধু একে অপরকে সাহায্য করার জন্য উৎসাহিত করেননি, বরং সমাজে এমন কাজ করার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন, যেগুলোতে কোনো ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট উপকারিতার পরিচয় থাকে না। যেমন রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো। এ কাজটি করতে গিয়ে একজন ব্যক্তির কোনো প্রত্যাশা বা নিজের সুবিধার উদ্দেশ্য থাকতে পারে না, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানুষের উপকারের উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দেহের প্রতিটি জোড়ার বিনিময়ে মানুষের সদকা আদায় করা কর্তব্য, সূর্য ওঠে এমন প্রতিদিন দুই ব্যক্তির মাঝে সুবিচার করা একটি সদকা, কাউকে সাহায্য করতে তাকে বাহনে উঠিয়ে দেওয়া বা তার মালপত্র তাতে তুলে দেওয়া একটি সদকা, ভালো কথা একটি সদকা, নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে গমনের প্রতিটি কদম একটি করে সদকা এবং পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা একটি সদকা (সহিহ মুসলিম, ১০০৯)

এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বিভিন্ন সামাজিক কাজের প্রতি উৎসাহিত করেছেন, যার মাধ্যমে আমরা শুধু নিজেরাই উপকৃত হই না, বরং সমাজের অন্য সদস্যদের জন্যও উপকারী হতে পারি। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো একদম সহজ একটি কাজ। কিন্তু এর মাধ্যমে আমাদের সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর কাছে অনেক পুরস্কার অর্জন করা যায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি উল্লেখযোগ্য হাদিসে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি একদিন রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখে সেটি সরিয়ে রাখেন এবং আল্লাহতায়ালা তাঁর এই কাজের কারণে তাকে ক্ষমা করে দেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯১৪) কেবল একটি কাঁটাযুক্ত ডাল সরিয়েই একজন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে এত বড় পুরস্কার লাভ করেছেন! এটি আমাদের শেখায়, যে কাজটি সমাজে কোনো বড় পরিবর্তন আনতে পারে না বলে মনে হয়, সেটিও আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং পুরস্কৃত হতে পারে।

পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো শুধু একটি সুন্নাহ নয়, এটি একটি মহান সামাজিক দায়িত্ব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের একটি উপায়। তাই আসুন, আমরা সবাই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই মহান সুন্নাহ অনুসরণ করি এবং সমাজে শান্তি, সহযোগিতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

স্বপ্নে জেলখানা দেখার ব্যাখ্যা কী?

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে জেলখানা দেখার ব্যাখ্যা কী?
জেলখানার ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন মানুষের মনে নানা রহস্যের জাল বিছিয়ে রাখে। এর মধ্যে অন্যতম একটি রহস্যময় প্রতীক হলো— জেলখানা। ইসলামি তাফসির অনুযায়ী, জেলখানা একাধারে দুঃখ, শাস্তি, প্রতিবন্ধকতা, এমনকি কবরেরও প্রতীক হতে পারে।
তাফসিরুল আহলামের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে— জেলখানা যেমন অপরাধীদের আবাসস্থল, তেমনি জাহান্নামও অবাধ্যদের জায়গা। তাই কেউ যদি স্বপ্নে নিজেকে জেলখানায় দেখে, তবে তাকে তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাখ্যা করতে হবে।

যদি স্বপ্নদ্রষ্টা অসুস্থ হন এবং জেলখানা অপরিচিত হয়, তবে সেটি হতে পারে তার কবরের ইঙ্গিত— যেখানে সে কেয়ামত পর্যন্ত আবদ্ধ থাকবে। তবে যদি জেলখানাটি পরিচিত হয়, তা হলে সেটি ইঙ্গিত দেয়— তার অসুস্থতা দীর্ঘায়িত হবে, কিন্তু ভালো হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে। একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দুনিয়া হলো মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৯৫৬)

এ অনুযায়ী, দুনিয়ার দুঃখ-কষ্টকেই অনেকে স্বপ্নে জেলখানার প্রতীক হিসেবে দেখতে পারেন। যদি স্বপ্নদ্রষ্টা কোনো গোনাহগার বা অপরাধী ব্যক্তি হন, তবে জেলখানা তার কবর বা জাহান্নামের ইঙ্গিত হতে পারে। তবে যদি সে তওবা করে বা সুস্থ হয়, তবে মুক্তির সম্ভাবনা থাকে।

স্বপ্নে জেলখানায় নিজেকে দেখা সুস্থ ব্যক্তির জন্যও সতর্কতা বয়ে আনতে পারে। যদি সে সফররত হয়, তবে তার ভ্রমণে বৃষ্টি, ঝড়, শত্রু বা কোনো বাধা আসতে পারে। আর যদি সে ভ্রমণরত না থাকে, তবে সে এমন কোনো জায়গায় প্রবেশ করতে পারে যেখানে আল্লাহর অবাধ্যতা হচ্ছে— যেমন গির্জা, মদের আসর বা অন্য কোনো পাপের স্থান।

তবে সব ব্যাখ্যাই নেতিবাচক নয়। কেউ যদি স্বপ্নে দেখে যে, সে নিজেই নিজের জন্য জেলখানা তৈরি করেছে বা তা নির্বাচন করেছে, তবে তাতে ভালো দিকও থাকতে পারে। এর মানে হতে পারে— তার স্ত্রী তাকে ভালোবাসে, তার মঙ্গল কামনা করে এবং আল্লাহ তাকে স্ত্রীর কোনো ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করবেন।

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে— সাবুর ইবনে আরদাশির একবার স্বপ্নে দেখেন, তিনি জেলখানা নির্মাণ করছেন এবং সেখানে পারস্য থেকে বানর ও শূকর ধরে আনছেন। সঙ্গে ছিল ৩১টি মুকুট। পরবর্তী সময়ে একজন স্বপ্নবিশারদ এই স্বপ্নের গভীর ও প্রতীকী ব্যাখ্যা দেন।

স্বপ্নে জেলখানা দেখা সর্বদা খারাপ নয়, আবার একে হালকাভাবে নেওয়াও ঠিক নয়। এটি হতে পারে অন্তরের পাপের প্রতিচ্ছবি, দুনিয়ার সীমাবদ্ধতার চিত্র কিংবা আখিরাতের ভয়াবহ এক সংকেত। তবে আল্লাহর রহমত থেকে কখনো হতাশ হওয়া উচিত নয়। 

 

বি.দ্র. এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত ইমাম ইবনে সীরীন (রহ.)-এর মূল্যবান ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে সংকলিত।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

রাগ সংবরণ করাকে আল্লাহ পছন্দ করেন

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
রাগ সংবরণ করাকে আল্লাহ পছন্দ করেন
রাগের কার্টুন। সংগৃহীত

রাগ মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। পৃথিবীতে রাগ নেই এমন ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম। সাধারণত মানুষ যখন কোনো বস্তু বা ব্যক্তির ওপর বিরক্ত হয় তখন তার ভেতর থেকে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আর এই রাগ এক সময় মানুষকে বড় বড় পাপের দিকে টেনে নিয়ে যায়। নিচে রাগ সংবরণের কয়েকটি পদ্ধতির কথা তুলে ধরা হলো— 


দোয়া পড়া: যখনই অন্তরে রাগের আবির্ভাব হতে শুরু করবে তখনই আমাদের উচিত ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বনির রাজিম’ দোয়াটি পড়া। কেননা এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমার মনে শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো কুমন্ত্রণা আসে, তবে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২০০) 

চুপ থাকা: ক্রুদ্ধ অবস্থায় চুপ থাকা রাগ সংবরণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। বিশ্বনবি (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ রাগান্বিত হলে সে যেন নীরবতা অবলম্বন করে। (ইমাম বুখারি; আদাবুল মুফরাদ: ২৪) 

অজু করা: রাগ কমানোর জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে অজু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাগ আসে শয়তান থেকে। শয়তানকে আগুন থেকে তৈরি করা হয়েছে। আগুনকে নেভাতে পারে কেবলই পানি। অতএব, তোমাদের কারও রাগ হলে সে যেন অজু করে নেয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৮৪) 

ক্ষমা করা: ক্ষমা আল্লাহতায়ালার এক মহৎ গুণ। আল্লাহর এই গুণ যে বা যার অন্তরে লালিত আছে, তাঁর অন্তরে ক্ষোভ প্রবেশ করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে বলা আছে, তোমরা যদি কল্যাণ করো প্রকাশ্যভাবে কিংবা গোপনে অথবা যদি তোমরা অপরাধ ক্ষমা করে দাও, তবে জেনে রেখো আল্লাহ নিজেও ক্ষমাকারী, মহা-শক্তিমান। (সুরা নিসা: ১৩৪)   

 

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়