ঢাকা ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

বন্ধু নির্বাচনে ইসলামের নির্দেশনা

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
বন্ধু নির্বাচনে ইসলামের নির্দেশনা
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত দুজন বন্ধুর ছবি।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ১১৯)

মানুষ একা চলতে পারে না। মানুষের সঙ্গে মানুষের মিশতে হয়। চলতে হয়। কথা বলতে হয়। তবে এক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো, পুণ্যবান ও সৎ মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। পুণ্যবানদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে হবে। বন্ধু নির্বাচনেও খুব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ভালো বন্ধু জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে, মন্দ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায়ই মুসলিমদের এ ব্যাপারে সাবধান করতেন। সৎসঙ্গী নির্বাচনের তাগিদ দিতেন। কারণ, যাদের সঙ্গে মানুষ নিয়মিত ওঠাবসা করে, তাদের স্বভাব ও চরিত্র দ্রুত তার মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। কেননা মেলামেশা, ওঠাবসা ও দীর্ঘ আলাপের কারণে মানুষ সঙ্গীদের চরিত্র ধারণ করে খুব সহজে। অনেক সময় তার মাঝে সেই চরিত্র প্রবেশ করতে থাকে খুব ধীর গতিতে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্ম অনুসরণ করে। কাজেই তোমাদের সতর্ক থাকা উচিত যে, তুমি কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছ।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৩৩)

অসৎসঙ্গের কারণে মানুষের জীবনে যে পরিবর্তন ঘটে তা এক সময় ধর্ম পরিবর্তন পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এ জন্য সঙ্গলাভের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আবু মুসা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সৎসঙ্গী ও অসৎসঙ্গীর উদাহরণ আতর বিক্রেতা ও কর্মকারের হাপরের ন্যায়। আতর বিক্রেতার কাছে গেলে তুমি রেহাই পাবে না। হয় তুমি আতর কিনবে, না হয় আতরের সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের কাছে গেলে তার হাপর হয় তোমার শরীর বা কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৯৯৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম সুন্নাহ হলো, সৎ, পুণ্যবান ও মুমিনদের সংস্রব গ্রহণ করা। মুমিন ছাড়া কারও সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মেশা যাবে না। আল্লাহভীরু ছাড়া ভিন্ন কাউকে খাবারও খাওয়ানো যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন ছাড়া আর কারও সংস্রবে যেয়ো না। আর তোমার খাবার যেন শুধু তাকওয়ার অধিকারী মুমিনরাই খায়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৩২)

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীরা একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয়। মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে, জাকাত দেয়, আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করে। তাদের ওপর আল্লাহতায়ালা অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী সুকৌশলী।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৭১)


লেখক: আলেম ও গবেষক

ঘুম আসার দোয়া

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
ঘুম আসার দোয়া
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ঘুমন্ত বালকের ছবি। এআই

মহান আল্লাহ মানুষকে শারীরিক আরাম ও বিশ্রামের জন্য ঘুম দিয়েছেন। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য অনন্য এক নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই নিজ রহমতে তোমাদের জন্য রাত ও দিন বানিয়েছেন, যাতে তোমরা বিশ্রাম নিতে পারো ও আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৭৩)

আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ঘুমকে ক্লান্তি নিবারণের উপায় বানিয়েছি এবং রাতকে বানিয়েছি আবরণস্বরূপ।’ (সুরা নাবা, আয়াত: ৯-১০) 

এসব আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহতায়ালা মানুষের সারা দিনের কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি ও বিষণ্নতা দূর করার জন্য অনন্য এক নেয়ামত দান করেছেন, আর তা হলো ঘুম। কিন্তু সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের ঠিকমতো ঘুম হয় না; কিংবা ঘুম আসতে চায় না, তাদের জন্য এখানে কয়েকটি আমল দেওয়া হলো—

ঘুমের দোয়া পড়া

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আপনারই নামে মরে যাই আবার আপনারই নামে জীবন লাভ করি।

ঘুম না আসলে যে দোয়া পড়বেন

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতিস সাবয়ি, ওয়া মা আজাল্লাত ওয়া রাব্বাল আরদিনা, ওয়া মা আকাল্লাত ওয়া রাব্বাশ শায়াতিনি, ওয়া মা আদাল্লাত কুনলি জারাম মিন শাররি খালকিকা কুল্লিহিম জামিআ। আই ইয়াফরুতা আলাইয়া আহাদুম মিনহুম, আও আই ইয়াবগিয়া আলাইয়া আজ্জা ও জাল্লা সানাউকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ও লা ইলাহা ইল্লা আংতা।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, সাত আকাশের প্রভু এবং যার ওপর তা ছায়া বিস্তার করেছে, সাত জমিনের প্রভু এবং যা কিছু তা উত্থাপন করেছেন, আর শয়তানদের প্রতিপালক এবং এরা যাদের বিপথগামী করেছে! তুমি আমাকে তোমার সব সৃষ্টিকুলের অনিষ্টতা থেকে রক্ষার জন্য আমার প্রতিবেশী হয়ে যাও, যাতে সেগুলোর কোনোটি আমার ওপর বাড়াবাড়ি করতে না পারে অথবা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে না পারে। সম্মানিত তোমার প্রতিবেশী, সুমহান তোমার প্রশংসা। তুমি ছাড়া কোনো উপাসক নেই, তুমি ছাড়া আর কোনো উপাসক নেই।’(ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৯৬৬) 

আয়াতুল কুরসি পাঠ করা 
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৯৪৪৮)

আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম। লা তা খুজুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ। মান জাল্লাজি ইয়াশ ফাউ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি, ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শা আ, ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলি ইয়ুল আজিম।

আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি (সিংহাসন) সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।


লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর

মাগরিবের নামাজের শেষ সময় কখন?

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ০৯:০০ এএম
মাগরিবের নামাজের শেষ সময় কখন?
মসজিদে যাচ্ছেন কয়েকজন মুসল্লি। ইন্টারনেট

আরবি মাগরিব অর্থ সূর্যের অস্তস্থল বা পশ্চিম দিক। সন্ধ্যারাতের নামাজকে মাগরিব বলা হয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে,  ‘আপনি অধিকহারে আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন। আর সকাল-সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৪১)

তাফসিরবিদরা বলেন, এই আয়াতে পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে নামাজ আদায় করা। আয়াতে সকাল-সন্ধ্যার কথা বলে ফজর ও মাগরিবের নামাজকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।

মাগরিবের নামাজের গুরুত্ব
মুমিনের সব ইবাদতের লক্ষ্যবস্তু জান্নাত লাভ করা। জান্নাত লাভ করার অনেক আমল কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ফজর ও মাগরিবের নামাজ মসজিদে আদায় করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল এবং সন্ধ্যায় নামাজ আদায় করতে মসজিদে যায় এবং যতবার যায় আল্লাহতায়ালা ততবারই তার জন্য জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারির উপকরণ প্রস্তুত করেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৬২২)

মাগরিবের নামাজের শেষ সময়

আমাদের দেশের অনেকেই মনে করেন মাগরিবের নামাজের সময় খুবই অল্প। তাদের জেনে নেওয়া জরুরি, সূর্যাস্ত যাওয়া থেকে নিয়ে পরবর্তী এক বা দেড় ঘণ্টা মাগরিব নামাজের সময় বাকি থাকে। অর্থাৎ মাগরিবের নামাজের শেষ সময় আহমার বা লালিমা দূরীভূত হয়ে শাফাক বা সাদা বর্ণ আকাশ থেকে দূর হওয়ার পর মাগরিবের নামাজের সময় শেষ হয়ে যায়। (জীবন জিজ্ঞাসা, শায়খ মাহমুদুল হাসান আল-আজহারি, নামাজ অধ্যায়; পৃষ্ঠা: ১৮৩)

মাগরিবের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাড়াতাড়ি পড়া উত্তম। অর্থাৎ সূর্য ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাগরিবের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। তাই তখনই যত তাড়াতাড়ি পড়া সম্ভব হয়, নামাজ আদায় করে নেবে।

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

কোরআনে আছে যে নবিদের নাম

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
কোরআনে আছে যে নবিদের নাম
পবিত্র কোরআনের ছবি। ইন্টারনেট

আল্লাহতায়ালা পথভোলা মানুষকে হেদায়েতের পথে, আলোর পথে ও সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। এ মহান নবুয়তি দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহতায়ালা নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ ও পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষদের নির্বাচিত করেছেন। তাদের গোটা জীবনের মিশন ছিল মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া। সৎ, সুন্দর, সঠিক ও কল্যাণের দিকে আহ্বান করা। 

যেসব নবির প্রতি কিতাব নাজিল করা হয়েছে এবং নতুন শরিয়ত দেওয়া হয়েছে, তাদের রাসুল বলা হয়। আর প্রত্যেক পয়গম্বরকেই নবি বলা হয়, তাকে নতুন কিতাব ও নতুন শরিয়ত দেওয়া হোক বা না হোক। (শরহুল আকাইদিন নাসাফিইয়া: ১৩)

আবু জর গিফারি (রা.) একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, নবিদের সংখ্যা কত? তিনি জবাব দিলেন, ১ লাখ ২৪ হাজার। তাদের মধ্যে ৩১৫ জন হচ্ছেন রাসুল। (মিরকাত, মোল্লা আলি কারি, ১/৫৭)

তবে কোরআনে কারিমে মাত্র ২৫ জন নবির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের কারও কারও আলোচনা বিভিন্ন সুরায় একাধিক জায়গায় স্থান পেয়েছে। আবার কারও কারও নামে সুরার নামকরণ করা হয়েছে। 

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবির নাম হলো—

১. আদম (আ.)
২. নুহ (আ.)
৩. ইদরিস (আ.)
৪. হুদ (আ.)
৫. সালিহ (আ.) 
৬. ইবরাহিম (আ.)
৭. ইসমাইল (আ.)
৮. ইসহাক (আ.)
৯. লুত (আ.)
১০. ইয়াকুব (আ.)
১১. ইউসুফ (আ.)
১২. শুয়াইব (আ.)
১৩. মুসা (আ.)
১৪. হারুন (আ.)
১৫. ইলিয়াস (আ.)
১৬. ইয়াসা (আ.)
১৭. দাউদ (আ.)
১৮. সুলাইমান (আ.)
১৯. আইয়ুব (আ.)
২০. ইউনুস (আ.)
২১. জুলকিফল (আ.)
২২. জাকারিয়া (আ.)
২৩. ইয়াহইয়া (আ.) 
২৪. ইসা (আ.)
২৫. মুহাম্মাদ (সা.)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৪, ০৯:০০ এএম
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় আবহাওয়া-পরিবেশ যেমন থাকে। ইন্টারনেট

নামাজ ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের ওপর দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। এই নামাজগুলো নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে নির্ধারিত। ওয়াক্ত আসার আগে নামাজ পড়লে তা আদায় হয় না। সুতরাং প্রত্যেক নামাজ আদায়কারীর জন্য আবশ্যকীয় হলো এই সময়গুলো জেনে নেওয়া।

ফজর: ফজরের সময় সুবহে সাদিকের (রাতের শেষ দিকে পূর্ব দিগন্তের উভয় দিকে ক্ষীণ প্রশস্ত আকারে যে আলো প্রকাশ পায়, তখন থেকে সাহরির সময় শেষ হয়ে যায় এবং এরপর থেকেই ফজরের সময় শুরু হয়, ফিকহের পরিভাষায় এই সময়টির নাম সুবহে সাদিক) পর থেকে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত। (মুসলিম, হাদিস: ১৪৫৬; হেদায়া, ১/৮০)

জোহর: দ্বিপ্রহরে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পর থেকে প্রতিটি বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের সময়। ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর জোহরের সময় শেষ হয়ে যায়। (বুখারি, হাদিস: ৭১৭; মুসলিম, হাদিস: ৯৬৯; কিতাবুল ফাতাওয়া, ৩/২৩৮)

আসর: জোহরের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আসরের সময়। (বুখারি, হাদিস: ৭১৭; ফাতাওয়ায়ে শামি, ২/১৪-১৫)

মাগরিব: সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিমাকাশে শুভ্র আলো বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মাগরিবের সময়। (মুসলিম, হাদিস: ৯৬৯; তিরমিজি, হাদিস: ১৫১)

এশা: আকাশ থেকে শুভ্র আভা বিদায় নেওয়ার পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত এশার সময়। (বুখারি, হাদিস: ৫০৮; তিরমিজি, হাদিস: ১৫১)

এই সময়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে নামাজ আদায় করতে হবে। সময় আসার আগে নামাজ পড়লে যেমন নামাজ হবে না। আবার সময় গড়িয়ে যাওয়ার পর নামাজ পড়লেও হবে না। 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর আমল

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর আমল
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

ব্রেন বা মুখস্থ শক্তি মানুষের অমূল্য সম্পদ। মুখস্থ করার যোগ্যতা আল্লাহতায়ালার দেওয়া বিশেষ নেয়ামত। নেয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য জরুরি হলো, প্রাপ্ত নেয়ামতের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা আদায় করা। শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা আলহামদুলিল্লাহ বলে করা যায়, আবার আমল বা কাজের মাধ্যমেও শুকরিয়া আদায় করতে হয়। ব্রেনের আমলি শুকরিয়া হলো, ব্রেনের সঠিক ব্যবহার করা। ব্রেনের সঠিক ব্যবহারে মানুষের স্মৃতিশক্তি অটুট থাকে এবং ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। আবার  কারও কারও ব্রেন সব সময় এক রকম থাকে না। একেক বয়সে একেক রকম হয়। ছোটবেলায় হয়তো স্মরণশক্তি ভালো থাকে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। 

আল্লাহতায়ালা মানুষকে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে দোয়া, জিকির ও বেশকিছু কাজের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে এখানে কয়েকটি দোয়া ও আমল উল্লেখ করা হলো—

মুখস্থশক্তি বৃদ্ধির দোয়া
স্মরণশক্তি বা মুখস্থশক্তি বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। মুখস্থশক্তি আল্লাহতায়ালার দেওয়া অনন্য নেয়ামত। তাই তো দেখা যায়, কেউ চাইলেই যেমন কোনো কিছু স্মরণ রাখতে পারে না, আবার চাইলেই কেউ মুখস্থ করতে পারে না। তাই স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ১১ বার এই দোয়াটি পড়া—

বাংলা উচ্চারণ: রাব্বি জিদনি ইলমা।

বাংলা অর্থ: হে আমার প্রতিপালক, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। (সুরা তহা, আয়াত: ১১৪) 

হজরত কাশ্মীরি (রহ.) লিখেছেন, উপরোক্ত দোয়াটির সঙ্গে নিম্নোক্ত দোয়াটি নয়বার পড়লে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়—

বাংলা উচ্চারণ: রব্বিশ রাহলি সাদরি, ওয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিন লিসানি ইয়াফকাহু কওলি।

বাংলা অর্থ: (মুসা বলল,) হে আমার প্রতিপালক, আমার বুক খুলে দিন এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন। যাতে মানুষ আমার কথা বুঝতে পারে।’ (সুরা তহা, আয়াত:২৫-২৮)

এই দোয়া নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহতায়ালা বিশেষ জ্ঞানদান করবেন।

ব্রেন ভালোর জন্য জিকির করা

স্মরণশক্তি বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আমল হলো, অধিক পরিমাণে জিকির-আজকার করা। যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার পড়া। আল্লাহ বলেন, ‘যখন ভুলে যান, তখন আল্লাহর জিকির করুন।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত:২৪) 

গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা
স্মরণশক্তি বৃদ্ধির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো, সব ধরনের গুনাহ থেকে পরিপূর্ণ বেঁচে থাকা। কারণ, গুনাহের কারণে মুখস্থশক্তিতে দুর্বলতা আসে। বিশেষ করে চোখের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা খুবই জরুরি। 

কয়েকটি খাবার খাওয়া
কোনো কোনো আলেম এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলো মুখস্থশক্তি বৃদ্ধি করে। যেমন- মধু ও কিশমিশ খাওয়া। ইমাম জুহরি (রহ.) বলেন, ‘তুমি মধু খাবে; কারণ এটি স্মৃতিশক্তির জন্য ভালো। যে হাদিস মুখস্থ করতে চায়, সে যেন কিশমিশ খায়।’ (আল-জামি, খতিব আল-বাগদাদি, ২/৩৯৪)

নেক আমল করা
নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহকে খুশি করা যায়। নিজের মনে প্রশান্তি অনুভব করা যায়। তাই বেশি বেশি আমল করতে হবে।  ইসতেগফার, দরুদ পাঠ করতে হবে। কথা-বার্তা কম বলতে হবে। পাশাপাশি জ্ঞান অনুযায়ী আমল করতে হবে। 

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর