![রাস্তায় সবজি ফেলছেন কৃষকরা](uploads/2023/12/02/1701494083.Bogura-vegitable-pic-01.jpg)
ক্রেতা না থাকায় উত্তরাঞ্চলের বগুড়ার মহাস্থানে পাইকারি বাজারে আনা সবজি ফেলে দিচ্ছেন চাষিরা। হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির পাশাপাশি শুক্রবার হাটে হঠাৎ করে সবজির অতিরিক্ত আমদানির ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান চাষি ও পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতারা। অক্টোবরের শেষ দিকে ওই হাটে শীতের আগাম সবজি কেনাবেচা শুরু হলেও মৌসুমের শেষে কখনো কখনো এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার এ অবস্থা হয়েছে মৌসুমের শুরুতেই। ফলে চাষিরা মুলাসহ নষ্ট হয়ে যাওয়া অন্য সবজি ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
গতকাল শুক্রবার মহাস্থান হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটে মুলা পচে পড়ে আছে। দাম না থাকায় টাটকা মুলা ফেলে দেওয়া হয়েছে রাস্তার পাশে।
চাষি, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, শিবগঞ্জ উপজেলাসহ বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় এ বাজারে সবজি আসে জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে। সেখান থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। কিন্তু প্রায় দেড় মাস ধরে হরতার-অবরোধসহ সরকারবিরোধী নানা কর্মসূচির কারণে সবজি পরিবহনে বিঘ্ন ঘটছে। এ কারণেই চাষিরা সময় মতো বাজারে সবজি নিতে পারছেন না। আবার যখন কোনো কর্মসূচি থাকে না, তখন একসঙ্গে সবাই তাদের ফসল আনেন বাজারে। এতে আমদানি বেড়ে যায়। ফলে পড়ে যায় সবজির দাম।
পাইকারি সবজি ক্রেতা মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে শুক্রবার মুলার দর কিছুটা বেড়েছে। জাত ও মান ভেদে প্রতিমণ বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। বৃহস্পতিবার মহাস্থানহাটে ১০ মণ মুলা বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকায়, এ তথ্য দিয়ে আব্দুর রাজ্জাক জানান, অনেক চাষি পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে মুলা এনে বিক্রি করতে না পেরে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দিয়েছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার চানপাড়া গ্রামের মো. সাইদ আলু লাগানোর জন্য মুলাসহ জমি চাষ করছেন। বাজারে মুলার দাম না থাকায় তিনি খরচ বাঁচাতেই মুলাসহ জমি চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে যে দামে মুলা কেনাবেচা হচ্ছে তাতে মুলা উঠানোর খরচই উঠবে না। তাই দুই বিঘা জমিতে মুলাসহ আলু চাষ করেছি।’
চাষি আশাদুল হক জানান, দেড় কোজি ওজনের একটি বাঁধাকপি শুক্রবার তিনি বিক্রি করেছেন ২২ টাকায়। আর ওই একই ওজনের একটি কপি এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ২৭ টাকা থেকে ৩০ টাকা দরে। তিনি বলেন, ‘গত বছর এ মৌসুমে একই দরে দেড় কেজি ওজনের বাঁধাকপি বিক্রি করে লাভ হয়েছে। কিন্তু এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে কিন্তু কমেছে দাম। এ অবস্থায় উৎপাদন খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে।’
টমেটোর বাজার এবার অন্যান্য সবজির চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও সেটা বিক্রি করেও লাভবান হতে পারছেন না চাষিরা। বগুড়া সদর উপজেলার নামুজা এলাকার চাষি মো. রাজু হাসান প্রায় দুই মণ টমেটো বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন মহাস্থানহাটে। তার প্রত্যাশা ছিল অন্তত ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু পাইকারি বাজারে তিনি ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন কয়েক কেজি টমেটো।
তিনি বলেন, ‘বাজার শেষ হওয়ার আগেই তাকে বিক্রি শেষ করতে হবে। তাই দাম আরও কমিয়ে দিয়ে ৩০ টাকায় বিক্রি শুরু করেছি, যেন কাঁচা টমেটো বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে না হয়।’
আড়তদার মামুনর রশিদ জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে পরিবহন খরচ বেড়েছে দূরত্ব ভেদে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু তার পরেও ভাঙচুর আর আগুনের ভয়ে গাড়ি বের করতে চান না পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। সবজি পরিবহনের ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে নিরাপত্তা একটি বড় সমস্যা দাবি করে তিনি বলেন, ‘দিনের বেলায় চালাচল কিছুটা নিরাপদ হলেও রাতে আগুনের ভয়ে কেউ গাড়ি চালাতে চায় না।’
নিরাপত্তার বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর নজরে আনা হলে তিনি বলেন, ‘জরুরি ও পচনশীল পণ্যবাহী গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে সমন্বিতভাবে। প্রয়োজনে আরও নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’
এ বছর বগুড়ায় প্রায় ১ লাখ বিঘায় শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছে অন্তত ৫ লাখ ২৫ হাজার টন।