![বিশেষ নিরাপত্তায় পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের সিদ্ধান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের](uploads/2023/12/02/1701504666.Untitled-1.jpg)
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকা সমাবেশে সংঘর্ষের পর টানা অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি দিতে থাকে বিএনপি ও সমর্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। নবম দফায় আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হবে আগামীকাল রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত। টানা এই হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে বিপাকে পড়ছে আর্থসামাজিক অবস্থা।
এসব কর্মসূচির কারণে ক্ষতি হচ্ছে পরিবহন খাতের, শিল্পকারখানার উৎপাদনে। সরাসরি ক্ষতির চেয়ে পরোক্ষ ক্ষতি হচ্ছে আরও বেশি। রয়েছে পর্যটন খাতও। ক্ষতি হচ্ছে কৃষি, পাইকারি ব্যবসা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের। উৎপাদন কমে গেছে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের। রপ্তানি আদেশ কম আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
একই সঙ্গে ডলার ও রিজার্ভ-সংকটের কারণে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় এমনিতেই উৎপাদন কমছিল। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা আরও খারাপ হবে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পটভূমিতে গত কয়েক দিনের পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় কোর কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শিল্প পুলিশের প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানরা অংশ নেন সেই বৈঠকে।
বৈঠকে উপস্থিত বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করে বলেন, এই বৈঠকে মূলত সহিংস পরিস্থিতিতে করণীয় কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ সব বাহিনীকে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশেষত শিল্পাঞ্চল এলাকায় কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, এ জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিতে বলা হয়েছে।
বৈঠকের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির আকার বড় হওয়ায় সহজে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটিকে সহযোগিতা করবে কোর কমিটি। কোর কমিটি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য এ বৈঠক করা হয়েছে। জাতীয় কোর কমিটির বৈঠকের বিষযবস্তু প্রকাশ করা হয় না। এমনকি এই বৈঠকের কোনো রেজল্যুশনও করা হয় না।’
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও এফবিসিসিআইয়ের তথ্যমতে, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে প্রতিদিন গড়ে অর্থনৈতিক সেক্টরে ক্ষতি হচ্ছে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। তথ্য-উপাত্ত বলছে, গত ১৮ দিনে সার্বিক অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিবহন খাতে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ৩০০ কোটি টাকা। পণ্য পরিবহন ও মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ক্ষতি ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেছেন, এক দিনের অবরোধ বা হরতালে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ক্ষতি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা। পাশাপাশি পাইকারি ও খুচরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোরও ক্ষতি হচ্ছে। বিক্রি কমে যাচ্ছে। পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে উৎপাদনও কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উপাত্ত বলছে, জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে শিল্পোৎপাদন কমেছে। জুলাইয়ে শিল্পোৎপাদন বেড়েছিল ১৯ শতাংশ। আগস্টে বেড়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্টের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা সামান্য বেড়েছে। বৈশ্বিক মন্দা ও ডলারসংকটে শিল্প খাতের ওপর দিয়ে যে ধকল যাচ্ছে, তা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে এসেছে রাজনৈতিক অস্থিরতার ধকল।
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, হরতাল বা অবরোধে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে বাধ্য। এর কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক সহিংসতা বা অস্থিরতায় পণ্য আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। কেননা অবরোধে সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। দেশে খেলাপি ঋণ ও ব্যাংকে তারল্যসংকট আরও বাড়বে। পাশাপাশি রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় উদ্বেগজনক হারে কমবে। এতে ডলারসংকট আরও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছাবে। রিজার্ভের পতন নতুন গতি পাবে, যা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। হরতাল-অবরোধে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যাহত হয়। এর ফলে কর্মসংস্থান কমে যায়।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, নির্বাচন এলেই এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যার খেসারত দিতে হয় পুরো দেশকে। এবারও সংঘাত দেখা দিয়েছে।