![সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ড: একযুগেও বিচার শুরু হয়নি](uploads/2024/02/11/1707638141.Sagor-Runi.jpg)
‘কিছু ভাবছি না, ভাবার কিছু নেই। মামলার তদন্ত হচ্ছে না। সরকার বিচার করতে চায় না, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে।’ সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যার পর একযুগ পেরিয়ে গেলেও এই মামলার বিচারই শুরু হয়নি এখন পর্যন্ত; এর পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে দৈনিক খবরের কাগজকে এসব কথা বলেন রুনীর ভাই নওশের আলম।
সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘যারা এই অপরাধ করেছে, তাদের ধরার জন্য যত সময়ই লাগুক, তাদের আমরা ধরব।’ বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে এই মামলার বাদী নওশের বলেন, “সরকার যখন বলে, ‘বেডরুম পাহারা দিতে পারব না’ বা ‘৫০ বছর লাগবে’, তখন তো একে ভরসা দেওয়া বলা যায় না। তার (আইনমন্ত্রীর) পরিবারের ক্ষেত্রে এমন হলে কি তিনি এভাবে বলতে পারতেন? একে ভরসা দেওয়া বলা হয়? এমন ভরসা তো আপনিও দিতে পারবেন, একজন মুচিও দিতে পারবেন। এই ভরসা দায়িত্বশীল মন্ত্রীর কাছ থেকে যদি আসে, তাহলে আর বিচার চাইব কার কাছে!”
উল্লেখ্য, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যা মামলার তদন্তে প্রয়োজনে ৫০ বছর সময় দিতে হবে বলে গত ১ ফেব্রুয়ারি মন্তব্য করেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পরের দিন ২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী উত্তর দেন, ‘আপেক্ষিকভাবে আমি বলেছি, অপরাধীদের ধরতে যদি ৫০ বছরও সময় লাগে, লাগুক, তাদের আমরা ধরব। আমি এটাই বলেছি এবং এই কথায় আপনারা মনে করেছেন যে ৫০ বছর সময় লাগবে।’
হত্যাকাণ্ডের পর একযুগেও ছেলে হত্যার বিচার না পাওয়ায় সম্প্রতি গণমাধ্যমের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রয়াত সাংবাদিক সাগর সারোয়ারের মা সালেহা মনির।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার ছেলের হত্যাকারী কে সেটাই জানতে পারলাম না। আমার মৃত্যু হওয়ার আগ পর্যন্ত ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে যাব। আমার ছেলেকে তো আর ফেরত পাব না, এ জন্য বিচার চাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমার একটাই কথা, ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমি এখন পর্যন্ত আমার ছেলের কবর জিয়ারত করতে যাইনি। আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, যেদিন আমার ছেলের হত্যাকারীদের দেখব, বিচার দেখে যেতে পারব, ওই দিন কবর জিয়ারত করব। এর আগে যদি আমার মৃত্যুও হয়, হোক। এরপরও খুনিদের না দেখে আমি ছেলের কবর জিয়ারত করতে যাব না।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনী। ওই সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা পেরোনোর পর এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো এই মামলার বিচারই শুরু করা যায়নি। এই মামলার তদন্তে এ যাবৎ ১০৭ বার সময় নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বহিনী। কিন্তু এখনো তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি সম্পন্ন হয়নি।
সবশেষ আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের অতিরিক্ত সুপারিনটেনডেন্ট খন্দকার শফিকুল আলম প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ধার্য তারিখেও তা দিতে ব্যর্থ হলে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. শফি উদ্দিন নতুন দিন ধার্য করে এই আদেশ দেন।
এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তের জন্য প্রথম ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম তদন্তভার নেন। এরপর র্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন জনের ওপর তদন্ত ভার দেওয়া হয়। সবশেষ ২০১৭ সালের ২১ মার্চ মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার পর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এই মামলায় রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। এদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র জামিনে আছেন। অন্যরা কারাগারে।