![খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বাজার আরও অস্থির](uploads/2024/02/12/1707712265.Onion-khatunganj.jpg)
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও অস্থির হতে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজার। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়া ও ভারত থেকে পণ্যটি আমদানি বন্ধ থাকায় বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে বলে জানান আড়তদাররা।
চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বিরাট বাজার খাতুনগঞ্জে গত সপ্তাহে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ১০৩ থেকে ১০৪ টাকা। মেহেরপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। চোরাই পথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১২০ টাকা।
গত ৩১ জানুয়ারি খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা আতঙ্কের কথা জানিয়ে বলেছিলেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। এর মধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে শুরু করলে দেশি পেঁয়াজ পচে যাবে, লোকসান হবে। তবে দুই সপ্তাহ না পেরোতেই সরবরাহ-সংকটের অজুহাতে দেশি-বিদেশি সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিলেন আড়তদাররা। তারা এখন উল্টো সুরে বলছেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ভারত রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় সব ধরনের পেঁয়াজে দাম বেড়েছে। রোজার বেশি দিন বাকি নেই। এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার ব্যবস্থা না করলে দাম আরও বাড়তে পারে।
পাঁচলাইশ শুল্কবহর এলাকার খুচরা বিক্রেতা আজিমউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আড়তদার এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা যখন যেভাবে ইচ্ছা পেঁয়াজের বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা শুনলে তারা দেশি পেঁয়াজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আবার আমদানি বন্ধ হওয়ার খবরেই দাম বেড়ে যাচ্ছে। এটা কোনো সুস্থ প্রতিযোগিতা হতে পারে না। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের যেসব সংস্থা রয়েছে, সেখানে যারা কর্মরত আছেন, তাদের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে বলে মনে হয় না। ধারণা থাকলে তারা সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে পারতেন।’
পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, পাবনার মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ তেমন একটা নেই। মেহেরপুরের পেঁয়াজ এলেও চাহিদার তুলনায় জোগান কম। ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে বৈধভাবে পেঁয়াজ আনা বন্ধ রয়েছে। প্রতিবেশী দেশটি থেকে চোরাই পথে পেঁয়াজ এলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
পেঁয়াজ নিয়ে খাতুনগঞ্জে চলে নানা নাটকীয়তা। গত ৭ ডিসেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখছে, এই ঘোষণার পর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে পেঁয়াজের বাজার। রাতারাতি কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ঠেকেছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। পুরোনো এলসির প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসায় গত ২২ ডিসেম্বর খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ১৭০ টাকায়। এরপর ভারত থেকে বৈধ পথে আর কোনো পেঁয়াজের চালান না এলেও চোরাই পথে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করেন আড়তদাররা। জানুয়ারির শুরুতে এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। কিন্তু সরবরাহ বেড়ে দাম কমে যাওয়ায় দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করেন সাধারণ মানুষ। ফলে গত ৩১ জানুয়ারি চোরাই পথে আসা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০৫ টাকায়। বর্তমানে সরবরাহ-সংকটের অজুহাতে আবারও চড়া হয়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ। দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ১২০ টাকায়।
সূত্র জানায়, খাতুনগঞ্জে দুই দিন আগে ২০ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ আসে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২টি ট্রাকে করে চোরাই পথে খাতুনগঞ্জে আসছে ভারতীয় পেঁয়াজ। এসব পেঁয়াজ আড়তদাররা ভাগাভাগি করে কিনে নিচ্ছেন।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, চাহিদার তুলনায় জোগান কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এখন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। সরকারের উচিত হবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করা। নইলে বাজার আরও অস্থির হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
টিসিবির তথ্যমতে, দেশি পেঁয়াজের দাম এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ২০৭ শতাংশ। গত বছর এ সময়ে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। যা এখন ৯৫ থেকে ১২০ টাকা। টিসিবির ওয়েবসাইটে আমদানি করা পেঁয়াজের দামের তথ্য দেওয়া হয়েছে। যদিও বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। বর্তমানে বাজারে যে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, তা চোরাই পথে আনা হচ্ছে।
সরকারি এই সংস্থার তথ্যমতে, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ১৬২ শতাংশ। গত বছর এই সময়ে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। যা বর্তমানে ৯০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে।