ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

নির্দেশনার আড়ালে চাপা পড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গলদ!

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:১০ পিএম
আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৭ পিএম
নির্দেশনার আড়ালে চাপা পড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গলদ!

বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ ১০ দফা নির্দেশনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই নির্দেশনার সবই পুরোনো। অর্থাৎ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নেওয়ার সময়ই এসব শর্ত দেওয়া থাকে। কোন ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানে কী করা যাবে, কী করা যাবে না তা উল্লেখ করা থাকে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোনো নির্দেশনা নতুন করে দিলেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। বরং গলদ দূর করতে হবে। নয়তো এর আড়ালে চাপা পড়ে থাকবে সব গলদ। কেন শর্ত মানা হচ্ছে না কিংবা মানানো যাচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখে সেই অনুসারে পদক্ষেপ নিতে হবে। যখনই ঘটনা ঘটে তখনই বলা হয়, জনবলসংকটে মনিটরিং করা যায় না। বছরের পর বছর এমনটাই চলছে। জনবল বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না কেন, সেটাও খুঁজে দেখা দরকার। 

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সবেমাত্র এক দিন হলো নির্দেশনা দিলাম। দুটো দিন যেতে দিন, রবিবার থেকে দেখতে পাবেন কী হয়! আমি নিজে মনিটরিং করব, মাঠে নামব।’

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক গত কয়েক দিনে দেশে স্বাস্থ্য খাতের অস্থিরতা প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, দেশের প্রাইভেট চিকিৎসাসেবা খাত এখন সরকারি চিকিৎসাসেবা খাতের চেয়ে অনেক বড় ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় সবাই ব্যস্ত সরকারি সেবা খাতে। বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মনিটরিং করার মতো সামর্থ্য নেই অধিদপ্তরের। সেই সঙ্গে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নানা ধরনের কারণে আইন-বিধি উপযুক্ত মাত্রায় কার্যকর হয় না। ফলে শুধু নির্দেশনা জারি করলেই লাভ হবে না। আবার কয়েক দিন পরই যেই, সেই। 

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যবস্থাপনাগত সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না করলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। একটি হাসপাতাল বা ক্লিনিক হবে, সেখানে চিকিৎসার নামে মানুষ অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যাবে আর দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ তখন গিয়ে বলবে ওই সব প্রতিষ্ঠান অবৈধ বা আগের কোনো অনুমতি নেই, সেটা খুবই দুঃখজনক। 

বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন গত বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, এখন থেকে সরকারের নির্দিষ্ট শর্ত মেনে বেসরকারি মেডিকেল/ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাতে হবে। এর কারণ, কিছু অসাধু মানুষ নিয়মের তোয়াক্কা না করে শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য যত্রতত্র নামমাত্র হাসপাতাল/ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। নিয়মের বাইরে গিয়ে এগুলো আর চলতে পারবে না। এখনো ১ হাজার ২০০টির ওপর প্রাইভেট স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিবন্ধন নেই। এদের কাছে ভালো ডাক্তার নেই, নার্স নেই, টেকনিশিয়ান নেই। এরা হাসপাতাল চালাচ্ছে কী দিয়ে? 

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব খবরের কাগজকে বলেন, ১০ দফা নির্দেশনায় নতুন তো কিছু নেই। যেকোনো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদনের সময়ই এসব শর্ত দেওয়া থাকে। কিন্তু পরে সেটা আর মানা হয় কি না, তা দেখা হয় না বলেই এমন বিপত্তিতে পড়ে স্বাস্থ্য খাত। প্রাইভেট চিকিৎসা সেক্টর এখন ‘সোনার ডিম’। যার সুফল ভোগ করে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বেসরকারি উদ্যোক্তা চক্র। তারা যদি আইন মেনে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা কার্যকর করে, তবে তো ওই ‘সোনার ডিম’ ভেঙে যাবে। তাদের পেছন দরজার আয় ইনকাম কমে যাবে। তাই তারাও চায় এই ব্যবস্থাটি দুর্বল থাকুক, শক্তিশালী না হোক। 

প্রবীণ এই চিকিৎসক বলেন, ‘মুসলমানিতে কেন অজ্ঞান করা লাগে সেটা আমি বুঝি না। কেনইবা এভাবে দুটি শিশু মারা যাবে! এসব ডাক্তারকে দক্ষতা-যোগ্যতাও মনিটরিংয়ে রাখা দরকার।’ তিনি নিজের পেশার প্রতি সম্মান জানিয়েও বলেন, যেসব অবৈধ ও নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকরা কাজ করেন তাদেরও তো দায় আছে। তারা কি সেখানে চাকরি নেওয়ার সময় খোঁজখবর নেন না, নাকি নিজেও এমন প্রতিষ্ঠানই খুঁজে নেন!

১০ নির্দেশনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, এই নির্দেশনা তো নতুন কিছু না। আগেই বিভিন্ন সময়ে এমনটা দেখা গেছে। যখনই কোনো অঘটন ঘটে, তখনই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে আর সেটি কার্যকর হয় কি না, তার খবর থাকে। এবার যেন এমনটা না হয়।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করতে হবে। সেখানে অভ্যন্তরীণ যেসব গলদ আছে তা দূর না করলে আইন, বিধি, নির্দেশনা- কিছুই কার্যকর করা যাবে না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যবস্থাপনা শাখার জনবল মাত্র ১০ জন। যারা একদিকে সারা দেশের নানা ধরনের সমন্বয় কাজ করেন। নতুন নিবন্ধন দেওয়া, নবায়ন করা, যাচাই-বাছাই, পরিদর্শন, তদন্ত- সবকিছুই করেন। সেই সঙ্গে ঢাকা মহানগরীর সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাও দেখভাল করার মূল দায়িত্ব তাদের। শুধু ঢাকায়ই বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘আমাদের মাত্র ১০ জনের পক্ষে এত প্রতিষ্ঠান দেখভাল করা কঠিন। অনুমোদন করা পদই আছে ১০টি। এখন আমি অস্থায়ীভাবে হলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও কয়েকজনকে চাইব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।’ 

১০ নির্দেশনায় যা আছে 

বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্সের কপি ওই প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশ পথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে অবশ্যই স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করতে হবে, সব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একজন নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা/কর্মচারী থাকতে হবে এবং তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল হিসেবে আছে কিন্তু শুধু ডায়াগনষ্টিক অথবা হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে তারা লাইসেন্স ছাড়া কোনোভাবেই অন্য সেবা দিতে পারবে না। ডায়াগনষ্টিক সেন্টার/প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রে যে ক্যাটাগরিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত শুধু সে ক্যাটাগররিতে নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না এবং ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্যাথলজি/মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে। বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতালের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রকারভেদ ও শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী সব শর্তাবলি বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে; হাসপাতাল/ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োজিত সব চিকিৎসকের পেশাগত ডিগ্রির সনদ, বিএমডিসির হালনাগাদ নিবন্ধন ও নিয়োগপত্রের কপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে। হাসপাতাল/ক্লিনিকের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের অপারেশন/সার্জারি/প্রসিডিউরের জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসককে সার্জনের সহকারী হিসেবে রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই লাইসেন্স প্রাপ্ত/নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যতীত চেম্বারে অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া যাবে না। বিএমডিসি স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অবেদনবিদ ছাড়া যেকোনো ধরনের অপারেশন/সার্জারি/ প্রসিডিউর করা যাবে না। সব বেসরকারি নিবন্ধিত হাসপাতাল/ক্লিনিকে প্রসব কক্ষ প্রটোকল অবশ্যই মেনে চলতে হবে। নিবন্ধিতপ্রাপ্ত হাসপাতাল/ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারে অবশ্যই নির্ধারিত শর্ত মেনে চলতে হবে।

‘কিছু বোঝার আগেই গুলি লাগে কোমরে’

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম
‘কিছু বোঝার আগেই গুলি লাগে কোমরে’
গুলিতে আহত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসারত কয়েকজন। ছবি : খবরের কাগজ

২০ জুলাই শনিবার, তখন কারফিউ জারি হয়েছে, অবস্থা শান্ত দেখে মিলন বেগম তার চৌদ্দ বছরের ছেলে মিরাজকে ঘরের পাশের সবজির দোকানে পাঠান কাঁচা মরিচ আর ধনেপাতা কিনতে। ঘর থেকে বের হয় মিরাজ। কিন্তু কিছুদূর যেতেই গুলি লাগে তার শরীরে। ঠিক বুঝতে পারে না মিরাজ কী হলো, অচেতন হয়ে পড়ে যায় রাস্তায়। পরে রাতে তাকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। দ্রুত রক্ত বন্ধ করে ভর্তি করা হয়। রবিবার অস্ত্রোপচারের পর এখন সার্জারি ওয়ার্ডে আছে সে। তবে আন্দোলনে না গিয়েও এমন আঘাতে এখনো আতঙ্কিত মিরাজ। তাই স্তব্ধ হয়ে শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকালে সরেজমিনে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা পাই মিরাজের। হাসপাতালের বেডে ছেলের শিহরে উদ্বিগ্ন মুখে বসে ছিলেন মা মিলন বেগম। তার কাছ থেকেই জানতে পারি মিরাজের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি।

মিরাজের মতো কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিতে আহত আরও অনেকেই এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢামেক হাসপাতালে। এদের একজন জিহাদ। গত শুক্রবার সে জুমার নামাজ পড়ে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বন্ধুদের সঙ্গে। হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে তার কোমরে। এরপর বেরিয়ে যায় পেট দিয়ে। রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে জিহাদ। তার বড় ভাই জাহিদ জানান, জিহাদের অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। তবে চিকিৎসকরা আশা করছেন আর কয়েক দিন পরে পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত হবে জিহাদ।

সার্জারি বিভাগের একই ওয়ার্ডে মিরাজের পাশের বেডে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন নার্গিস। তার পিকআপচালক স্বামী কাজল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নার্গিস বলেন, পিঠ দিয়ে ঢুকে গুলি পেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে। অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। এখন একটু ভালো, আল্লাহই বাঁচাইছে...।

তিনি জানান, ফকিরাপুল থেকে যাত্রাবাড়ী দিয়ে যাচ্ছিলেন কাজল। রাস্তায় গোলমাল দেখে গাড়ি থামিয়ে একটু এগিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন যে সামনে আর যাওয়া ঠিক হবে কি না। কিন্তু সামনে এগোনোর আগেই গুলি লাগে কাজলের শরীরে। কে বা কারা গুলি করেছে তা বলতে পারেননি কাজল।

ঢামেক হাসপাতালের কেবল সার্জারি বিভাগের ৬টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৫ থেকে ৭ জন রোগী ভর্তি আছে গুলিবিদ্ধ হয়ে।

বৃহস্পতিবারের প্রতি ওয়ার্ডের হিসাব বলছে, বেলা ১১টা পর্যন্ত ২১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ২৭টি সিটের বিপরীতে আছে ৫৬ জন রোগী, ২১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৮টি সিটের বিপরীতে রোগী আছেন ৫০ জন, ২১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ সিটে রোগী আছেন ৪১ জন, ২১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ সিটে রোগী আছেন ৩৪ জন, ২১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৫টি সিটের বিপরীতে রোগী ৪৬ জন, ২২০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩১টি সিটের বিপরীতে রোগী আছেন ৪৩ জন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন নার্স খবরের কাগজকে বলেন, আমরা প্রতি সিটের বিপরীতে ৪ জন করে রোগীকে সেবা দিচ্ছি। পরিস্থিতির কারণে রোগী বেশি। সুতরাং সবাইকে সেবা তো দিতেই হবে। এখন আমাদের নতুন রোগী ভর্তি নেওয়ার সময় তাই কিছুক্ষণ পর রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে।

সব নথি পুড়ে ছাই, লুণ্ঠিত ৪৬ অস্ত্র নিয়ে উৎকণ্ঠা

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:১০ পিএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১২:১০ পিএম
সব নথি পুড়ে ছাই, লুণ্ঠিত ৪৬ অস্ত্র নিয়ে উৎকণ্ঠা
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা, ভাঙচুর, ফটক ভেঙে বন্দি পালানো ও লুটপাটের ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই কারাগারের সব নথি। গত চার দিনে পলাতক ৮২৬ বন্দির মধ্যে ৪৬৮ জন আত্মসমর্পন করেছেন বা থানাপুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন। লুট হওয়া ৮৫ অস্ত্রের মধ্যে ৩৯টি, ১ হাজার গুলি ও অনেক হাতকড়া উদ্ধার করা হয়েছে। নাশকতার ঘটনায় কারাগারের ১১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কারা অধিদপ্তর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

সূত্র অনুসারে, দেশের ইতিহাসে এর আগে এমনভাবে কোনো কারাগার থেকে সব আসামি পালানো ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।

এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে দেশের সব কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ র‌্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি কারাগারগুলোতে সেনা টহল  অব্যাহত রয়েছে। 

কারা সূত্র জানায়, এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে বিচার বিভাগীয় দুটি তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে যুগ্ম সচিব ফারুখ আহম্মেদকে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি ও কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া নরসিংদী কারাগারের জেল সুপার, জেলারসহ সেখানে দায়িত্বরত সবাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই কারাগারে এখন দায়িত্ব পালন করছেন নতুন একজন জেল সুপার ও দুজন ডেপুটি জেলার। অগ্নিকাণ্ডের ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে নরসিংদীর কারাগারটি। সেখানে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। 

সূত্র আরও জানায়, ১৫ হাজার সন্ত্রাসী হামলা চালায় কারাগারে। পালিয়ে যাওয়া ৮২৬ জন কয়েদির মধ্যে ছিল ৯ জন জঙ্গি ও হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এদের অনেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। কারাগারে হামলার প্রাথমিক কারণ হিসেবে জানা গেছে, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে নাশকতা চলছিল তাতে অস্ত্র ও বন্দিদের ব্যবহার করা।

এ ঘটনায় ২৩ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগার পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া দেশকে বিপর্যস্ত করতে এ আক্রমণ হয়েছে। নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের ধরে আইনের আওতায় আনতে যা যা করা দরকার সরকার সবই করবে। নরসিংদী কারাগারের যে জায়গাকে আমরা সেফ জোন মনে করি, সেখানে তারা ভাঙচুর তো করেছেই, অগ্নিসংযোগও করেছে। অস্ত্রাগার লুট করেছে। যেসব জঙ্গি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল, আমাদের পুলিশ বাহিনী যাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আটক করেছিল, এখান থেকে তাদেরকে সন্ত্রাসীরা মুক্ত করে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য দেশকে একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়া। তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেন এই ঘটনা ঘটল, কারও গাফিলতি আছে কি না, কেউ এখানে সহযোগিতা করেছে কি না, এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তিন সদস্যের কমিটি করেছেন আইজি প্রিজন। আর ৬ সদস্যের কমিটি করেছে সুরক্ষা সেবা বিভাগ। যদি কারও গাফিলতি থাকে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘কারাগারের ফটক ভেঙে বন্দি ও অস্ত্র লুটের ঘটনা দেশের ইতিহাসে নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত। এখনো উদ্ধার হয়নি ৪৬টি অস্ত্র। এ নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠায় রয়েছি। এ ধরনের ঘটনা আর যেন না ঘটে সে জন্য দেশের কারাগারগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি সেনা টহল অব্যাহত রয়েছে।’

নথি পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় তিনি বলেন, ‘আগুন দেওয়ায় কারাগারের সব নথি পুড়ে গেছে। এখন আসামিদের ডিজিটাল যে ডেটাবেজ তৈরি করা হয়েছে সেই তথ্যের ভিত্তিতে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, এই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে তাদের বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হবে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।’ 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় কারাগারে অগ্নিসংযোগ ও সেলের তালা ভেঙে ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে যান। পাশাপাশি অস্ত্র-গোলাবারুদ ও খাদ্যপণ্য লুট এবং ব্যাপক ভাঙচুর করেন হামলাকারীরা। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় নরসিংদী জেলা কারাগার। 

‘বাবা তুই বেঁচে আছিস এটাই বড় পাওয়া’

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৫০ এএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৬ পিএম
‘বাবা তুই বেঁচে আছিস এটাই বড় পাওয়া’
বাড্ডা এলাকায় সহিংসতায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী রিফাতের একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। ছবি: খবরের কাগজ

গুলি লাগায় মো. রিফাত হাওলাদারের ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে। হঠাৎ এক পা হারিয়ে এখন রাজ্যের দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তাকে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কথা বলতে বলতেই গলা জড়িয়ে আসে তার। দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে পানি।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার আলাতুন্নেছা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এই ছাত্র বলছিল, ‘এখন আমার বন্ধুদের সঙ্গে খেলার মাঠে থাকার কথা। কিন্তু এক গুলিতেই আমার সব স্বপ্ন শেষ।’

ক্ষোভ ঝেড়ে বলে, ‘একদিন আমার এই পা সাক্ষী দেবে কত বড় অন্যায় হয়েছে আমার সঙ্গে। বড় হয়ে অফিসার কি আর হতে পারব?’ পাশে থাকা এই কিশোরের বাবা ট্রাভেলস ব্যবসায়ী মো. রিয়াজ ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারপরনাই দুর্ভাবনায় পড়েছেন। তবু সন্তানকে সাহস দিয়েছেন এই বলে যে, ‘কতজনের তো প্রাণ-ই চলে গেছে। তুই বেঁচে আছিস এটাই বড় পাওয়া।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর রামপুরা ও বাড্ডা রোডে সংঘর্ষের সময় গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রিফাতের পায়ে গুলি লাগে। পরে রিকশায় করে তাকে মেরুল বৌদ্ধ মন্দিরের কাছে এক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নিয়ে যাওয়া হয় এএমজেড হাসপাতালে। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে ভর্তি করা হয় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) ক্যাজুয়ালটি-২ বিভাগে। 

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সরেজমিন এই হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ক্যাজুয়ালটি-২ বিভাগে গুলিবিদ্ধ ৩৬ জন ভর্তি রয়েছেন। এখানেই বেশির ভাগ আহতের চিকিৎসা চলছে। তাদের সবার শরীরের কোনো না কোনো অংশে গুলি লেগেছে। কমপক্ষে চারজনের পা অস্ত্রোপচার করে কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়া আরও কয়েকজনের পা-হাত কেটে ফেলতে হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। বাকিরা অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ক্যাজুয়ালটি-১, ক্যাজুয়ালটি-৩ বিভাগ ও নতুন ভবনেও কয়েকজন আহত ভর্তি আছেন বলে একজন নার্স জানান। 

ক্যাজুয়ালটি-২ বিভাগের ১৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ১৬ বছরের মো. নাদিমও এক পা হারিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে একটি এমব্রয়ডারি কারখানায় কাজ করা নাদিম কাজ শেষ করে শনিবার বিকেলে বাসায় ফেরার পথে চিটাগাং রোডে তার পায়ে গুলি লাগে। পরে তিনটি হাসপাতাল ঘুরে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তার মা মরিয়ম জানান, একটা গুলি ছেলের হাঁটুর মধ্য দিয়ে ঢুকে যায়। পুরো পায়ের মাংস কালো হয়ে পচন ধরায় সোমবার চিকিৎসকরা তার পা কেটে ফেলেন। এই কিশোরের মা আরও জানান, তার স্বামী অটোরিকশাচালক। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে নাদিম সবার বড়। মাসে ৭ হাজার টাকা আয় করত। দরিদ্র এই পরিবারের এখন চিকিৎসার খরচ চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।

কাঁদতে কাঁদতে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেটা এখন বেঁচে থেকেও মরার মতো। ওর জীবনের কোনো দাম আর নেই।’ 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে এই হাসপাতালে এসেছে গুরুতর আহতরা। বিশেষ করে চিটাগাং রোড, কুড়িল, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে আহতদের নিয়ে আসা হয়। আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও সিএনজিচালক, গাড়িচালক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন।

চিটাগাং রোড এলাকায় গত শনিবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হন সেলুনে কাজ করা রাকিব। এই কিশোরেরও বাম পা কাটতে বাধ্য হয়েছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে পঙ্গুতে চিকিৎসাধীন ডেমরার দনিয়া এলাকার সিএনজিচালক মো. আমিরুল ইসলামের ডান পায়ে গত শনিবার গুলি লাগে। কোথা থেকে কীভাবে গুলি লাগল বুঝতেই পারেননি তিনি। ইয়াসিন নামের ১১ বছরের এক শিশু কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়। বাড্ডা-নতুনবাজার এলাকা থেকে ডান হাতে গুলি লেগে পঙ্গুতে ভর্তি আছেন মো. সজিব খান।

তিনি দাবি করেন, ‘পুলিশ আমাদের বলল এখন রাস্তা পার হতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। এমন অবস্থায় কোথা থেকে গুলি এসে আমার হাতে লাগল, জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, এমন এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়েছে যে রাস্তার পাগল, এমনকি কুকুরের মতো অবুঝ প্রাণীরাও এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেছে। আমি হাসপাতালে থাকায় আমার সাত বছরের সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে।’

ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ক্যাজুয়ালটি বিভাগ-১-এ ভর্তি টঙ্গীর মো. রাজুর মা জানান, ব্যথায় দিনরাত চিৎকার করছে তার ছেলে। এই প্রতিবেদককে উদ্দেশ করে প্রশ্ন রাখেন, ওর স্ত্রী, দুই বাচ্চার কী হবে এখন?

এদিকে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আহতদের তথ্য নিতে গতকাল দুপুরে হাসপাতালে যান পুলিশ সদস্যরা। তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, হাতের ছাপ নেওয়ায় আতঙ্ক দেখা দেয় আহত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের মাঝে। 

নিটোরের অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এ পর্যন্ত আড়াই শর বেশি রোগী এসেছেন সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়ে। এর মধ্যে বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে সবাই এখন শঙ্কামুক্ত। ছয়জনের পা কেটে ফেলতে হয়েছে।’

তিনি জানান, গুলিবিদ্ধ যারা এসেছেন তাদের মধ্যে ১৮ জুলাই আসা ১৭ জন শিক্ষার্থী। পরে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে কোনো শিক্ষার্থী নেই।

কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে ইসির ৩০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:১৭ পিএম
কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে ইসির ৩০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প
নির্বাচন কমিশন (ইসি)

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা বাড়াতে ২৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকার নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসি। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের নাম এনহেন্সিং ইফিসিয়েন্সি অব এপ্লয়িজ অব ইলেকশন কমিশন সেক্রেটারিয়েট (ইইইইসিএস)। এর মূল লক্ষ্য- প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইসির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা বাড়ানো। প্রকল্পের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মাধ্যমে যেসব প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব হয় না, সে ধরনের প্রশিক্ষণ আয়োজন করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। বিশেষ করে তাদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়ানো, যাতে বিদেশে গিয়ে কমিউনিকেশন ও নেগোসিয়েশনের দক্ষতা বাড়ে। এ ছাড়া বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর নানা উদ্যোগ রয়েছে প্রকল্পে। ইসির প্রস্তাবিত নতুন প্রকল্পটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। চলতি মাসে এটি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাস হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পের জনশক্তি কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রকল্প পরিচালনায় ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে না। মোট জনবল থাকবে মাত্র ছয়জন। তার মধ্যে নতুন করে একজন হিসাবরক্ষক, একজন গাড়িচালক ও একজন অফিস সহকারী নিয়োগ দেওয়া হবে। বাকি পদগুলোতে কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারাই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন এবং এই কাজের জন্য তাদের বাড়তি সম্মানীও থাকবে না। 

এর আগে গত ৩০ জুন শেষ হয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ (এসসিডিইসিএস) প্রকল্পের কার্যক্রম। ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পেরও মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। লক্ষ্য ছিল- প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেবার মান বাড়াতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানো এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা পেতে সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি কমানো। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিদেশে প্রশিক্ষণের ৫০ শতাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। 

ওই প্রকল্পের অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। তবে প্রকল্প চলাকালে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে ১০০ জন কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানোর কথা থাকলেও সেখানে ৫০ জনকে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। আর নির্ধারিত বাজেটের তুলনায় ব্যয় সাশ্রয় হওয়ায় ১০ শতাংশ অর্থ উদ্ধৃত হয়েছে, যা ফেরত দেওয়া হয়েছে।’ ওই প্রকল্পের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারের নতুন প্রকল্প আরও বেশি কার্যকর ও সফল হবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন অতিরিক্ত সচিব। 

এ ছাড়া ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে ‘নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় আইসিটি ব্যবহারে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া প্রকল্পটির পরিচালক করা হয়েছে সংস্থার প্রশাসন ও অর্থ শাখার যুগ্ম সচিব মো. মনিরুজ্জামান তালুকদারকে। এ ছাড়া পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও প্রকাশনা শাখার উপপ্রধান মুহাম্মদ মোস্তফা হাসানকে উপপ্রকল্প পরিচালক এবং সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. রাজীব আহসানকে সহকারী প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি ৩৭ কোটি ৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকার এই প্রকল্পের ব্যয়ের ৪০টি খাত নির্ধারণ করা হয়। খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে প্রশিক্ষণে- ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এরপর রয়েছে সেমিনার, আউটসোর্সিং এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি খাতের ব্যয়। প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে নির্বাচন কমিশন কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ফলাফল ব্যবস্থাপনা সিস্টেম, স্মার্ট নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা অ্যাপ, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সিস্টেম, ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম, এনআইডি সার্ভার প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সেবা ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের চেষ্টা করছে।

রোগীতে ঠাসাঠাসি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০১:২৫ পিএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম
রোগীতে ঠাসাঠাসি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

জালাল উদ্দীন বোন ক্যানসারের রোগী, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কথা বলছিলেন কেমোথেরাপি কবে দিতে পারবেন তা নিয়ে। তার কেমো দেওয়ার তারিখ ছিল গত ২০ ও ২১ জুলাই। কিন্তু চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে গত ২০ জুলাই শনিবার থেকে কারফিউ ও রবি-সোম-মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় বন্ধ থাকে কেমোথেরাপি দেওয়ার কার্যক্রম। কারণ স্বাভাবিক সময়েও সাধারণ ছুটিতে এখানে কেমো দেওয়া বন্ধ থাকে। ফলে জালালের কেমো দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু বুধবার (২৪ জুলাই) পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় তিনি এসেছেন কেমো নিতে।

খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আমার নিয়মিত কেমো চলছে। তাই হাসপাতালের পাশেই বাসা নিয়ে থাকি। এ জন্য আমার এখানে পৌঁছতে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু কারফিউ ও সাধারণ ছুটি থাকায় কেমো দেওয়া হয়নি।’ গতকাল দুপুরে রাজধানীর জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলমান আন্দোলনের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জালালের মতো অনেকেই পড়েছেন নানা ভোগান্তিতে। কেউ সেবা নিতে ঢাকার বাইরে থেকে হাসপাতালে আসতে পারেননি সময়মতো, আবার কারও চিকিৎসা শেষ হলেও বাড়ি ফিরতে পারেননি।

তেমনই একজন ফরিদপুরের বাসিন্দা কাদের মোল্লা, আক্রান্ত ফুসফুসের ক্যানসারে। চিকিৎসা নিতে ভর্তি ছিলেন এই হাসপাতালে, দুই দিন আগে ছুটি দিলেও চলমান পরিস্থিতির কারণে তিনি যেতে পারেননি বাড়িতে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুনলাম এখন বাস চলছে, এখন বাড়ি যাব।’ 

অন্যদিকে পায়ের টিউমার থেকে ক্যানসার হয়েছে সিলেটের কিশোর সালমান খানের। অবরোধ, কারফিউ আর সাধারণ ছুটির কারণে গতকাল রাতে এই হাসপাতালে এসে পৌঁছলেও এখনো তার চিকিৎসা ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। আর পরীক্ষা চলার সময় তাকে ভর্তিও করা হচ্ছে না। তাই হাসপাতালের কোরিডরে ঠাঁই নিয়েছে সে ও তার পরিবার। 

হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. আশফিকা জিনি বলেন, ‘আমাদের জরুরি বিভাগে আজ (বুধবার) সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টা একজন ডাক্তারই ডিউটি করেছেন। কারণ তিনি বাসায় ফিরতে পারছিলেন না। আবার অন্য কেউ ডিউটিতে আসতেও পারছিলেন না। তবে এখন সব স্বাভাবিক।’ তিনি জানান, বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২২ জন রোগী এসেছেন জরুরি বিভাগে।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাতটি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। ফলে সাতজন আছেন পোস্ট-অপারেটিভে। মহিলা ওয়ার্ডগুলোতে পেইড-আনপেইড মোট ১২১টি সিটে রোগী আছেন ১১৬ জন। অন্যদিকে পুরুষ ওয়ার্ডগুলোতে মোট ১২২টি সিটের বিপরীতে ভর্তি আছেন ১০৬ জন। জানা গেছে, সাধারণ ছুটিতে তিন দিন বন্ধ ছিল ডে-কেয়ার কেমোথেরাপি ও আউটডোর। গতকাল থেকে আবার সব কার্যক্রম চালু হয়েছে।