![নতুন রূপে চট্টগ্রাম নগরীর আউটার স্টেডিয়াম](uploads/2024/04/02/1712029037._Ctg-pic.jpg)
চারদিকে দেওয়া হয়েছে লোহার বেষ্টনী, বালু ভরাট ও ফিনিশিংয়ের কাজ আগেই শেষ। এখন কেবল পুরো মাঠজুড়ে বসানো হচ্ছে সবুজের প্রলেপ। দূর্বা ঘাস রোপণের মাধ্যমে মাঠকে সবুজে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। আর সেই ঘাস বড় করতে সকাল থেকে সন্ধ্যা ছিটানো হচ্ছে মোটরের পানি। প্রতিদিন ১৫ জন শ্রমিক নিরলসভাবে কাজ করছেন। এ যেন স্টেডিয়ামকে সবুজে আবৃত করে ফেলতে অনন্য কর্মযজ্ঞ।
জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামসংলগ্ন আউটার স্টেডিয়াম শহরের ক্রীড়ামোদীদের অন্যতম জনপ্রিয় মাঠ। এখানে নানা বয়সের খেলোয়াড়রা খেলাধুলা, শরীর চর্চা আর অনুশীলনে ঘাম ঝরাতেন। কিন্তু এই আউটার স্টেডিয়ামটি দীর্ঘ দিন পরিত্যক্ত ডোবা, বালুর মাঠ, গাড়ির গ্যারেজ, টং দোকানে ঢেকে ছিল। তবে সবকিছু উচ্ছেদ করে এখন আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে এক নতুনত্বের ছোঁয়া। চারদিকে পড়েছে লোহার বেষ্টনী। গেল দেড় মাস ধরে লাগানো হচ্ছে ঢাকা থেকে আনা দূর্বা ঘাস। ১১ হাজার বর্গফুট আয়তনের এ মাঠের মধ্যে ৮ হাজার বর্গফুটে হবে ফুটবল খেলার মাঠ।
আউটার স্টেডিয়ামের নকশা অনুযায়ী নেওয়া পরিকল্পনার অনেক কাজ এখনো বাকি। স্থপতি আশিক ইমরানের নকশায় আছে মাঠের চারপাশে ক্রিকেট নেট প্র্যাকটিস, ভলিবলসহ নানা খেলাধুলার ব্লক। সুইমিং পুলের দেওয়ালের দিকে হবে নেট প্র্যাকটিস ব্লক। স্টেডিয়ামের গ্যালারির দিকে ১৫০ থেকে ২০০ মানুষের বসার জন্য গ্যালারি এবং সার্কিট হাউস প্রান্ত ও নূর আহমদ চৌধুরী সড়কের প্রান্তে হবে ওয়াকওয়ে। এ ছাড়া বাকি জায়গায় টয়লেট, ড্রেসিং রুম এবং বসার ব্যবস্থা থাকবে।
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন জানিয়েছেন, আউটার স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ সম্পন্ন হবে দুই ধাপে। মাঠের চারপাশে ফেন্সিং দিয়ে প্রথম ধাপের কাজ শুরু করা হয়েছে। এটির জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আসছে বর্ষার আগেই বেশকিছু কাজের অগ্রগতি হবে। দীর্ঘদিন ধরে দখলদারদের হাতে থাকা এই স্টেডিয়াম খেলার উপযোগী করে নান্দনিকভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। স্টেডিয়ামের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা হবে। সংস্কারের পর এই মাঠে খেলতে টাকা দিতে হবে না। তবে শৃঙ্খলার জন্য একটি সূচি অনুসরণ করা হবে।
এর আগে আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় দুই পাশে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। খেলার মাঠ দখলমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অংশ হিসেবে ওই উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়। ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আউটার স্টেডিয়াম উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
একসময় সারা বছরই স্টেডিয়ামটি মেলা ও বিভিন্ন ইভেন্ট আয়োজকদের দখলে থাকতো। সেই মাঠের সংস্কার কার্যক্রম করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এতে খুশি ক্রীড়াপ্রেমীরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষ এই মাঠকে খেলার উপযুক্ত করতে আন্দোলন চালিয়েছেন। এর ফলে সংস্কার হচ্ছে মাঠটি।
ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন, চট্টগ্রামে একে একে অনেকগুলো খেলার মাঠ হারিয়ে গেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। আউটার স্টেডিয়াম থেকে গড়ে উঠেছে দেশসেরা অনেক ক্রীড়াবিদ। খেলতে না পারলে খেলোয়াড় তৈরি হবে কীভাবে?
জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সাবেক জাতীয় ফুটবলার আশীষ ভদ্র এ মাঠে খেলেছেন। জাতীয় ক্রিকেট দলের মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, ইকবাল খান, আকরাম খান, নুরুল আবেদীন নোবেল, ফজলে রাব্বী রুবেল, নাফিস ইকবাল, আফতাব আহমেদ, নাজিম উদ্দিন, তামিম ইকবালের মতো ক্রিকেটাররা এই মাঠে খেলে তাদের ক্যারিয়ার শুরু করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্টার যুব টুর্নামেন্ট এবং স্টার সামার টুর্নামেন্টও এ মাঠে আয়োজন করা হতো। মাঠের চারদিকে প্রচুর দর্শক খেলা উপভোগ করতেন। কলকাতা ইস্ট বেঙ্গল টিমও খেলে গিয়েছিল এ মাঠে। চট্টগ্রামের ক্রীড়াপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু আউটার স্টেডিয়াম নতুন রূপে ফিরছে।’