দৈনিক খবরের কাগজের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামালের জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে আজ ৩০ মে। খবরের কাগজের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে সব বিভাগের কর্মীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় সাংবাদিকদের কেউ গান গেয়ে, আবার কেউ আবৃত্তি করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সহকর্মীদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হন মোস্তফা কামাল।
অনুষ্ঠানে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের আন্ধারমানিক গ্রামে জন্ম নেওয়া আলোকিত মানুষ মোস্তফা কামালকে নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পত্রিকার মাল্টিমিডিয়া বিভাগ থেকে প্রস্তুত করা এই প্রামাণ্যচিত্রে তার জন্ম, জন্মভিটা, বেড়ে ওঠা, পিতা-মাতার সান্নিধ্য, পারিবারিক পরিচয়, একাধারে সফল সাংবাদিক ও লেখক হয়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরা হয়।
অব্যাহতভাবে সাংবাদিকতায় অবদান রেখে যাওয়া এবং একই সঙ্গে সাহিত্যের নানা শাখা নাটক, উপন্যাস, গল্প, শিশুসাহিত্য, রম্যরচনা, কবিতা, কলাম, সায়েন্স ফিকশন নিয়ে লেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে কর্মীদের প্রশংসায় ভাসেন মোস্তফা কামাল। জবাবে তিনি বলেন, ‘এর জন্য একসময়ে আমার মায়ের, আর এখন স্ত্রীর বড় ভূমিকা রয়েছে।’
খবরের কাগজের প্রধান প্রতিবেদক তৌফিক মারুফের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক ও সম্পাদক মোস্তফা কামালের সহধর্মিণী মিনু আফরোজ ও খবরের কাগজের প্রধান বার্তা সম্পাদক খালেদ ফারুকী। অনুষ্ঠানে মোস্তফা কামালের জন্মদিন উপলক্ষে আজই লেখা পত্রিকার কপি এডিটর ও জাতীয় প্রেসক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কবি হাসান হাফিজের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন চন্দনা বিশ্বাস। এ ছাড়া সংগীত পরিবেশ করেন অঞ্জন আচার্য ও শাহনাজ পারভীন এলিস।
পরে মোস্তফা কামাল জন্মদিনের কেক কাটেন এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে পত্রিকার সব কর্মীর এবং তাদের পরিবারের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করেন। খবরের কাগজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই স্বল্প সময়ে খবরের কাগজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। নতুন পত্রিকাটি এ সময়ে যতখানি এগিয়েছে, আর পিছপা হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ এ সময় তিনি পত্রিকার সব কর্মীকে যার যার ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
জন্মদিন উপলক্ষে দিনভর শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেকে সশরীরে সাক্ষাৎ করে, আবার অনেকে সামাজিকমাধ্যমেও তাকে শুভেচ্ছা জানান।
সম্পাদকের স্কেচ এঁকে উপহার দেন শিল্পী নিয়াজ চৌধুরী তুলি। অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং তত্বাবধানে ছিলেন ব্র্যান্ড অ্যান্ড অ্যাক্টিভেশন বিভাগের ইনচার্জ আতিয়া সুলতানা।
প্রসঙ্গত, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও রাজনীতি আশ্রিত উপন্যাস নির্মাণে মোস্তফা কামাল বাংলাদেশে অনন্য ও নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে লিখেছেন একের পর এক উপন্যাস। বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষে কলকাতার স্বনামধন্য আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার রচিত ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘বঙ্গবন্ধু’। তার বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে অগ্নিকন্যা, অগ্নিপুরুষ ও অগ্নিমানুষ। বাঙালির জীবনে কালো অধ্যায় ১৯৭৫ সালের পটভূমিও তিনি তুলে এনেছেন উপন্যাসে। ব্যতিক্রমী এই উপন্যাসটির নাম ‘১৯৭৫’। গত একুশের বইমেলায় তার লেখা ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস ‘কারবালা উপাখ্যান’-এর তিনটি মুদ্রণ প্রকাশিত হয়েছে।
মোস্তফা কামালের শৈশব-কৈশোর কেটেছে বেশ বৈচিত্র্যময় গ্রামীণ পরিবেশে। দেখেছেন অনেক ভাঙা-গড়া। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সাক্ষী হয়েছে তার শিশু-কিশোর মন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইংরেজি সাহিত্য ছিল তার বিষয়।
লেখকের প্রথম উপন্যাসের নাম ‘পাপের অধিকার’। প্রথম গল্প ‘বীরাঙ্গনার লড়াই’। প্রথম বিদ্রুপাত্মক ও রম্য বই ‘পাগল ছাগল ও গাধাসমগ্র’। প্রথম নাটকের নাম ‘প্রতীক্ষার শেষ প্রহর’। প্রথম গবেষণামূলক বই ‘আসাদ থেকে গণ-অভ্যুত্থান’। সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কলকাতায় বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
কথাসাহিত্যের পাশাপাশি সাংবাদিকতায়ও বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। এর আগে মোস্তফা কামাল দৈনিক কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাংবাদিক হিসেবে তিনি আফগানিস্তানে যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি, নেপালে রাজতন্ত্রবিরোধী গণ-অভ্যুত্থান, পাকিস্তানে বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ড ও শ্রীলঙ্কায় তামিল গেরিলা সংকট কভার করে ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত হন। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছেন।