![প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন বুয়েটের ছাত্রলীগ সমর্থক ৬ শিক্ষার্থী](uploads/2024/04/05/1712289803.buet.jpg)
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি চাওয়া ও ছাত্রলীগ সমর্থক ছয় শিক্ষার্থী এক খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের নিরাপত্তা চেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বুয়েট শহিদ মিনারের সামনে ‘বুয়েটে সমসাময়িক ঘটনায় আমাদের অবস্থান এবং নিরাপত্তার জন্য আবেদন’ শীর্ষক খোলা চিঠি পাঠ করেন তারা।
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক আলম ও আরেক শিক্ষার্থী ওই খোলা চিঠি পাঠ করেন।
এদিকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি গণস্বাক্ষর কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। যেখানে বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত ৫ হাজার ৮৩২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ হাজার ৭৩৯ জন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
খোলা চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, ‘আমরা প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তা-ধারণায় বিশ্বাসী এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমরাও অংশ নিতে চাই। এ জন্য দীর্ঘ একটি সময় আমাদের ওপর মানসিক নিপীড়ন চলে আসছে, যা বর্তমানে জীবনের হুমকিতে রূপ নিয়েছে। শুধু স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য যে পরিমাণ বুলিং করা হয়েছে, তা অকথ্য।’
বুলিংয়ের শিকারের কারণ হিসেবে খোলা চিঠিতে তারা বলেন, ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই সুনামগঞ্জের তাহেরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরসংলগ্ন এলাকায় বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ মোট ৩৪ জনকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিকল্পনার অভিযোগে শিবির সন্দেহে আটকের ঘটনায় আমাদের মানববন্ধন। ওই মানববন্ধনে আমাদের দাবি ছিল দোষীদের শাস্তি এবং নির্দোষদের নিঃশর্ত মুক্তি। কিন্তু এমন একটা সচেতনতামূলক কাজ করার পরে মানববন্ধনে দাঁড়ানো সব সাধারণ শিক্ষার্থী বন্ধু ও সহপাঠীদের সঙ্গে শুরু হয় জবাবদিহির পর্ব। এ ছাড়া সামাজিকভাবে বয়কটের ভয় পর্যন্ত দেখানো হয়।’
ওই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দুজন সহপাঠীকে আহসান উল্লাহ হলে রাত ১১টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত জবাবদিহির নামে প্রহসনমূলক র্যাগিং বা বুলিং এবং কমন রুম ও মাঠে একটানা অপমান করা হয়। এই ঘটনা আমাদের মানসিক স্থিতির ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া আমাদের তাচ্ছিল্য করে কথা বলাও শুরু হয় এবং হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।’
শিক্ষার্থীরা খোলা চিঠিতে আরও বলেন, ‘আমাদের লালিত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী অন্য শিক্ষার্থীদের সামাজিক বয়কটের পক্ষে ঘটা করে জানান দেওয়া হয়। দেশমাতার বুকে মাকে ভালোবাসার জন্য এ যেন এক ঘটা করে ডেকে অপমান করা। আমরা এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করলেও কোনো মীমাংসা পাইনি।’
এ ছাড়া ক্যাম্পাসে ইসিই ভবনের লিফটেও হিজবুত তাহরীর পোস্টারে কিউআর কোডের মাধ্যমে ‘পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে খিলাফত প্রতিষ্ঠা’ করার আহ্বান, যা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত এডুকেশনাল মেইলেও পাঠানো হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা খোলা চিঠিতে উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পঠিত ওই খোলা চিঠিতে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবন হুমকির মুখে বলে উল্লেখ করেন এবং বুয়েট ক্যাম্পাসে নাশকতার পুনরাবৃত্তি এড়াতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতার আহ্বান জানান।
সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে ওই খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘আপনার সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আমরা আমাদের আকুল আরজি রাখলাম যে, নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। দেশ ও দশের প্রতি ভালোবাসা রেখে সবার কল্যাণকে মাথায় রেখে, আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপদে এবং সৎ সাহসের সঙ্গে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করতে চাই।’
এ সময় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক আলম ছাড়াও একই বিভাগের সাগর বিশ্বাস, অরিত্র ঘোষ ও ২১ ব্যাচের অর্ঘ দাস, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর স্বপ্নীল এবং বিষ্ণুদত্ত চাঁদ উপস্থিত ছিলেন।
রাজনীতির বিপক্ষে বুয়েটের ৫৭৩৯ শিক্ষার্থী
বুয়েটে বর্তমান স্নাতক পর্যায়ে ৫ হাজার ৮৩২ জন অধ্যয়নরত। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৩৯ জন বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সবচেয়ে অগ্রজ ব্যাচ বলে দাবি করা হচ্ছে ‘ইন্টারভাল ১৮’ ব্যাচ। সেই ব্যাচে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘মাস পিটিশন ফ্রম বুয়েট স্টুডেন্টস এগেইনস্ট অর্গানাইজেশনাল স্টুডেন্টস পলিটিকস’ শীর্ষক একটি গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পরিচালনা করে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের জনমত সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
বৃহস্পতিবার ওই ব্যাচের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘আমরা বুয়েট কর্তৃক প্রদত্ত মাইক্রোসফট টিমস ফরমের মাধ্যমে এই কর্মসূচি পরিচালনা করি। এর মাধ্যমে আমরা দুটি জিনিস নিশ্চিত করি: বর্তমান বুয়েটিয়ান শিক্ষার্থী বাদে কেউ এই ফরম পূরণ করতে পারবে না এবং অন্যটি হলো একই স্টুডেন্ট আইডি দিয়ে কেউ এই ফরম একবারের বেশি পূরণ করতে পারবে না।’
এতে আরও বলা হয়, ‘স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পর, আমরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অফিশিয়ালি শুরু করি। ৫৭৩৯ জন (অর্থাৎ ৯৮ শতাংশ) ফরম পূরণ করে স্পষ্ট করেই জানান দেয় তারা ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, কয়েকজন টেকনিক্যাল জটিলতার কারণে ফরম পূরণ করতে পারেননি। বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগ কর্তৃপক্ষের কাছে, দেশবাসীর কাছে, সবার কাছে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চায় তাদের ইচ্ছা একটি ছাত্ররাজনীতিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস। যেখানে অবাধে তারা তাদের মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারবে।’