আপনার জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি আপনাকে ইন্টারভিউ অবধি নিয়ে যেতে পারে আর ভালো ইন্টারভিউ আপনাকে চাকরি পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। আপনার সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাকে আপনার এমনভাবে খুশি করতে হবে যেন এই পদে আপনার চেয়ে বেশি অন্য কাউকে উপযুক্ত বলে মনে না হয়।ইন্টারভিউয়ে সাফল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোন কোন বিষয় থেকে বিরত থাকতে হবে এবং আপনার ব্যক্তিত্ব এবং ক্ষমতা অনুযায়ী কী কী করা প্রয়োজন তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
সময়ানুবর্তিতা
চাকরির ইন্টারভিউয়ে দেরি করে আসবেন না। বরং ১0-১৫ মিনিটে আগে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন যেন আপনি ফরম পূরণ এবং আপনার ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে পারেন।
মানানসই বেশভূষা
ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সময় রক্ষণশীল পোশাক পরিধান করুন। অত্যধিক খোলামেলা, অতিরিক্ত গয়না অথবা অদ্ভুত রং যেন পরা না হয়, তা নিশ্চিত করুন (পুরুষ বা মহিলা উভয় ক্ষেত্রেই)।
কোম্পানি সম্পর্কে জেনে নিন
ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণ করতে যাওয়ার আগে
কোম্পানি ও নিয়োগ করা পদের অবস্থান সম্পর্কে
বিস্তারিত জেনে নিন। এতে করে আপনি কোম্পানি সম্পর্কে একটি বুদ্ধিমান এবং ওয়াকিবহাল আলোচনা রাখতে সক্ষম হবেন। এ ছাড়া আপনি আরও ব্যাপকভাবে প্রশ্ন করতে পারবেন।
প্রস্তুতি গ্রহণ করুন
কিছু কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলো সাধারণত বেশির ভাগ ইন্টারভিউয়ে করা হয়। যেমন- ‘আপনার ক্ষমতা এবং দুর্বলতাগুলো কী?’ ‘আগামী ১০ বছরে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে পছন্দ করবেন?’ ‘আপনি এই কোম্পানিতে এমন কী আনতে পারেন, যা অন্য কেউ করতে পারেন না বা যা অন্য কেউ পারবে না?’ ‘আপনার ক্যারিয়ারের কোন অংশটি আপনাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে?’ ইত্যাদি। এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
প্রশ্ন প্রস্তুত করুন
ইন্টারভিউয়ে আপনাকে যেমন প্রশ্ন করা হবে ঠিক তেমনি নিয়োগকর্তাকেও আপনার প্রশ্ন করা উচিত। আপনার নিয়োগ করা পদের অবস্থান এবং কোম্পানি সম্পর্কে নিয়োগকর্তাকে করার জন্য প্রশ্ন প্রস্তুত করুন। নিয়োগকর্তারা তাদের চেয়ে এক ধাপ বেশি চিন্তা করে এমন প্রতিযোগীদের সম্পর্কে আগ্রহী। সুতরাং ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রশ্নকর্তাকে করার মতো কিছু প্রশ্ন আগেই তৈরি করে ফেলুন যেন ইন্টারভিউয়ে বসে আপনাকে অপ্রস্তুত হতে না হয়।
স্নায়বিক অস্থিরতায় ভোগা
ইন্টারভিউয়ের আগে এবং ইন্টারভিউয়ের সময় স্নায়বিক অস্থিরতায় ভুগবেন না। এটি অস্থিরতা এবং উদ্বেগ তৈরি করে। কোনো নিয়োগকর্তা একজন স্নায়বিক অস্থির সহকর্মী চান না।
মিথ্যা
চাকরির ইন্টারভিউয়ে কোনো মিথ্যা তথ্য দেওয়া নিতান্তই ভুল। সততা একজন কর্মীর সবচেয়ে
বড় গুণ এবং একজন নিয়োগকর্তা ইন্টারভিউয়ে আপনার সত্য ও সততাকে সম্মান করবেন। আপনি কোথাও কাজ না করে থাকলে এই ধরনের কোনো কিছু বলবেন না।
সার্টিফিকেট
চাকরির ইন্টারভিউয়ের সময় আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সার্টিফিকেটগুলো সঙ্গে নিয়ে যাবেন। অনেক সময় নিয়োগকর্তারা এগুলো দেখতে চান।
ভুল করে কিছু বলা
একটি ভুল আপনাকে নিক্ষেপ করতে পারে ইন্টারভিউয়ের বাইরে। ভুল নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হলেও, মানুষ প্রায়ই তা করে থাকে। মানুষ দুর্ঘটনাক্রমে কাউকে ছোট দেখানো অথবা হেয়প্রতিপন্ন করার মতো ভুলগুলো করে থাকে। সুতরাং যথাসম্ভব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ইন্টারভিউয়ে করা প্রশ্নের উত্তর দিন।
মুঠোফোনের রিংটোন
ইন্টারভিউয়ের আগে আপনার ফোনটি বন্ধ কি না, তা নিশ্চিত করুন। ইন্টারভিউয়ের সময় মুঠোফোনের রিংটোন যদি বেজে উঠে তাহলে আপনি চাকরির দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বেন।
সময় পরীক্ষা করা
ইন্টারভিউয়ের মাঝখানে আপনার ঘড়ি বা দেয়ালঘড়ির প্রতি নজর দেবেন না। ইন্টারভিউবোর্ডে বারবার ঘড়ি দেখাটা অনেকটাই দৃষ্টিকটু।
বেতন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না
ইন্টারভিউয়ে নিজ থেকেই বেতন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা উচিত নয়। নিয়োগকর্তারাই বরং বেতন এবং চাকরির সুবিধা সম্পর্কে আপনাকে জানাবেন। আপনি এসব সম্পর্কে যতটা স্মার্ট উত্তর দেবেন আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ততটাই বাড়বে।
আপনার চাহিদা প্রদান
ইন্টারভিউয়ে যদি এমন হয় আপনি বেকার ও চাকরি খুঁজছেন, সেক্ষেত্রে আপনি অনেকটাই পিছিয়ে আছেন। অতএব, ইন্টারভিউয়ে আপনার কোনো দাবি তুলে ধরা উচিত নয়।
অন্যান্য কাজের প্রস্তাব সম্পর্কে বলা
অন্যান্য কোম্পানি আপনাকে কী পজিশন প্রস্তাব করছে সে সম্পর্কে ইন্টারভিউয়ে কোনো কিছু না বলাই ভালো। কারণ এতে করে তারা ভাবতে পারেন আপনি ইতোমধ্যে একটি কাজ পেয়েছেন বা অন্য কোথাও কাজ করছেন। তারা হয়তো এমন কাউকে চাকরি দেবেন না যিনি একটি কাজ পেয়েছেন বা অন্য কোথাও কাজ করছেন।
পূর্ববর্তী বস সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলবেন না
অনেকেই নতুন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেলে পূর্ববর্তী বস সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলেন। এ ধরনের ভুল কখনোই করবেন না। যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেটি নিজের ভেতরে চেপে রাখুন। কারণ যখন আপনি ইন্টারভিউ বোর্ডে পূর্বের বস সম্পর্কে বদনাম করবেন, তখন আপনি তাদের চোখে নেতিবাচক একজন মানুষ হিসেবে দেখা দেবেন। যে কারণে সম্ভাব্য চাকরিটি হাতছাড়াও হয়ে যেতে পারে।
সাক্ষাৎকারগ্রহীতার চোখের দিকে তাকান
ইন্টারভিউয়ের সময় সাক্ষাৎকার গ্রহীতার চোখের দিকে অনেকেই তাকান না। এদিক ওদিক বা নিচে তাকিয়ে থাকেন অনেক চাকরিপ্রার্থী। এটা আপনার নিরাপত্তাহীনতা বোধের প্রকাশ করে। তাই ইন্টারভিউয়ে আপনার আত্মবিশ্বাস ও মনোযোগ রয়েছে এটা প্রকাশের জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহীতার চোখের দিকে সরাসরি তাকান।
কলি