ট্রাক্টর এবং নসিমন যানবাহন হিসেবে অবৈধ। এসবের নেই কোনো রেজিস্ট্রেশন। কোনো প্রশিক্ষণ বা ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই এসব গাড়ি চালাচ্ছেন অধিকাংশ চালক। নির্বাচনি সরঞ্জাম আনা নেওয়ার কাজে এসব অবৈধ যানবাহনের উপর নির্ভর করতে দেখা গেলো ঠাকুরগাঁওয়ে।
আগামীকাল (২১ মে) দ্বিতীয় ধাপে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ও রাণীশংকৈল উপজেলার নির্বাচন। এ উপলক্ষে সোমবার (২০ মে) নির্বাচনি এলাকায় পাঠানো হচ্ছে ব্যালট পেপার, বক্সসহ বিভিন্ন সামগ্রী। তবে এসব সামগ্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন অফিসের এখন প্রধান ভরসা অবৈধ যানবাহন ট্রাক্টর এবং নসিমন।
ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অবৈধ এসব যানে রওনা দিচ্ছেন তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোটকেন্দ্রে।
ঠাকুরগাঁওয়ের দুটি উপজেলার ২৫১টি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের ব্যালট বাক্স থেকে শুরু করে অন্যান্য সরঞ্জামের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে পাঠাতে প্রায় ২৫০টি ট্রাক্টর ও নসিমন নেওয়া হয়েছে। খোলা এসব যানবাহনে অস্ত্র ও সরঞ্জাম আনা নেওয়া করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন আনসার সদস্যরা।
নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নির্বাচন অফিস যদি আমাদের জন্য ভাল কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা করত তাহলে আমাদের জন্য নিরাপদ হতো। যেসব গাড়িতে আমরা যাচ্ছি সেসব গাড়ির নেই কোনো ফিটনেস, চালকদের নেই কোনো লাইসেন্স। সরকারের এ রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমাদের পাঠানো হচ্ছে এসব অবৈধ যানে। এসব যানে আমাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। ঘটতে পারে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা।’
অন্য এক আনসার সদস্য বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে নিজস্ব অস্ত্র, ব্যালট বক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র থাকে। অবৈধ ট্রাক্টর এবং নসিমন পুরো খোলা থাকে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
এ বিষয়ে সাংবাদিক মজিবর রহমান খান বলেন, ‘মহাসড়কে নসিমন করিমন ট্রাক্টর চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু ভোট এলেই আমরা দেখি, ভোটের মালামাল পরিবহন করার জন্য এসব যানবাহনই ব্যবহার করা হয়। ভোট এলেই এসব অবৈধ যানবাহন বৈধ হয়ে যায়। এসব যানবাহন যদি অবৈধই হবে সব ক্ষেত্রেই অবৈধ হবে। সরকারি কাজে এসব যানবাহন ব্যবহার করে এসব যানবাহনকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এসব যানবাহন ঠিকমতো ব্রেক হয় না। যারা চালাচ্ছে তাদের দক্ষতাও নেই। আর চালকদের লাইসেন্সতো নেই-ই। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। যারা দায়িত্বে আছেন তাদের প্রাণহানি ঘটতেই পারে।’
লাইসেন্সবিহীন এইসব যান এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? এমন প্রশ্নে ট্রাক্টরচালক মতি রহমান বলেন, ‘আমাদের গাড়ির লাইসেন্স হয় না। আর আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনের সরঞ্জাম আনা নেওয়ার কাজে আমাদের এসব গাড়ি ব্যবহার করা হয়। প্রশাসন থেকে আমাদের ডাকা হয়েছে তাই আমরা আসতে বাধ্য।’
সরকারি কাজে এ ধরনের যানবাহন ব্যবহারের বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনজুরুল হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের প্রায় পাঁচ শ’র বেশি গাড়ি লাগবে। ঠাকুরগাঁওয়ে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যে গাড়ি রয়েছে সেগুলো দিয়ে আমরা নির্বাচন করতে পারব না। তাই বাস্তবতায় আমাদের অনেক কিছু মানতে হয়। এ বিষয়গুলো এখন আমাদের সাবজেক্ট না। এ বিষয়গুলো নিয়ে এখন কথা বলার সুযোগ নেই। একটি ইলেকশনের জন্য তো আমরা গাড়ি সরবরাহ করতে পারব না প্রত্যেকটা সেন্টারের জন্য। এটা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।’
নবীন হাসান/অমিয়/