পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পাকা সড়ক নির্মাণে বালুর পরিবর্তে কাদামাটি ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় ধরা এই সড়ক নির্মাণে রাতের আঁধারে কাদামিশ্রিত মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে এলে তারা প্রতিবাদ করেন। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাটি ফেলা বন্ধ করে। তবে ঠিকাদারের দাবি, বালুর পরিবর্তে সেখানে কে মাটি ফেলেছেন তা তিনি জানেন না। মাটি অপসারণ করে বালু ফেলে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ শেষ করা হবে। আর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, রাস্তার কাজে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। সঠিকভাবে বালু ফিলিং করে রাস্তা তৈরি করতে হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বোয়ালমারী থেকে শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সড়কটির কাজ চলমান রয়েছে। শুরুতে পাকাকরণের জন্য কাটা সড়কে বালু ফেলার কথা থাকলেও ফেলা হচ্ছে কাদামাটি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে স্থানীয় শহীদুল ইসলাম সেখানে মাটি ফেলছেন। কাদামাটি ফেলতে নিষেধ করলেও তিনি রাতের আধারে ট্রলিতে করে মাটি ফেলেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। তখন তারা প্রতিবাদ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চগড় নির্বাহী প্রকৌশলীর অধীনে তেঁতুলিয়ার বোয়ালমারী থেকে শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের মুহুরী হাট পর্যন্ত ১ হাজার ৯২০ মিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রকল্পের (জিডিডিআরআইডিপি) আওতায় এ সড়ক নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৮০১ টাকা। চুক্তি মূল্যে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৩ হাজার ১২০ টাকায় কাজটি করছে এমএইচ করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজটি শুরু হয়েছে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি। আগামী বছর ২১ জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।
গত রবিবার দুপুরে শালবাহান ইউনিয়নের মহিগছ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার বেশ কিছু জায়গায় বালুর পরিবর্তে কাদামিশ্রিত মাটি ফেলা হয়েছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামকে এই অনিয়মের চিত্র দেখান। বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানও প্রতিবাদ করেন। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. ওয়াকিলকে বিষয়টি জানান। তিনি (ওয়াকিল) তখন চেয়ারমানকে বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হবে না। কে এই মাটিগুলো ফেলেছেন তা তিনি জানতেন না।
ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশে রাস্তা পাকাকরণের কাজ হচ্ছে। সেখানে বালু ফেলার কথা থাকলেও পুকুর থেকে আনা কাদামিশ্রিত মাটি ফেলা হচ্ছে। এতে রাস্তার কাজ খারাপ হবে। বোয়ালমারীর শহিদুল নামের একজন এই মাটি ফেলেছেন। আমরা একাধিকবার নিষেধ করেছি। তারপরও কথা না শোনায় প্রতিবাদ করেছি। ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি। আমরা চাই রাস্তার কাজ ভালোভাবে হোক। কোনো অনিয়ম মেনে নেব না।’
শালবাহান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন এসে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এখানে বালুর পরিবর্তে কাদামিশ্রিত মাটি ফেলা হচ্ছিল। পরে আমরা কাজ বন্ধ করে দেয়েছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ওয়াকিল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, কাদামিশ্রিত মাটি ফেলার কোনো সুযোগ নেই। যিনি ফেলেছেন তার সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। এসব মাটি সরিয়ে বালু ফেলা হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে এমএইচ করপোরেশনের মালিক মো. ওয়াকিল বলেন, ‘সড়কে বালুর পরিবর্তে কাদামিশ্রিত মাটি ব্যবহারের বিষয়টি আমি জানতাম না। যিনি ফেলেছেন তাকে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তিনি কীসের ভিত্তিতে কীভাবে মাটি ফেললেন তা বুঝতে পারছি না। যা-ই হোক, মাটিগুলো সরিয়ে নতুন করে বালু ফেলা হবে। আমি বরাবরই স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে আসছি। এ কাজও ভালো হবে।’
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রকৌশলী রমজান আলী বলেন, ‘আমরা কাজ দেখে বিল দিয়ে থাকি। যতটুকু জানি, যিনি মাটি ফেলেছেন তিনি ঠিকাদার কর্তৃপক্ষের কেউ নন। ঠিকাদারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা বিষয়টি সমাধান করে দ্রুত কাজ শুরু করবেন। রাস্তার কাজে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। সঠিকভাবে বালু ফিলিং করে রাস্তা তৈরি করতে হবে।’