রাজশাহীতে সোমবার (২৯ এপ্রিল) মৌসুমের সর্বোচ্চ ও দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। দুপুর ৩টায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এতে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। রাজশাহী অঞ্চলে অব্যাহত তীব্র তাপপ্রবাহে প্রাণীকুলেও দেখা দিয়েছে নাভিশ্বাস। শুধু তাই নয়, প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে সড়কের বিটুমিন গলে যাচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সোমবার দুপুর ৩টার দিকে রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আদ্রতা ছিল ১২ শতাংশ। গত বছরের ১৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াম। এছাড়াও ২০১৪ সালের ২১ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত ১০ বছরের মধ্যে এই তিনদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়।
তিনি আরও বলেন, ভারীবর্ষণ ছাড়া এই তীব্র তাপপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দুই একদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতেরও কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাই আপাতত বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
এদিকে তীব্র তাপদাহের কারণে দিনমজুর থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে তেমন কেউ বের হচ্ছেন না। কিন্তু অতিরিক্ত গরমে ডায়েরিয়াসহ মৌসুমি বিভিন্ন রোগে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এতে হাসপাতালে রোগীর অতিরিক্ত চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. লুৎফর রহমান জানান, তীব্র এই গরমে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই বাড়ছে। এছাড়া হিট স্ট্রোকসহ অন্যান্য অসুখবিসুখ দেখা দিয়েছে। তাই ভয়াবহ এই গরমে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শিশু ও বৃদ্ধরা বাইরে বের না হওয়াই ভালো। বাইরে বের হলে কিছুক্ষণ পরপর ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করতে হবে।
অন্যদিকে, অব্যাহত দাবদাহ, প্রচণ্ড খরায় রাজশাহীতে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি। যত্ন করেও খুব একটা সমাধান না পেয়ে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় পড়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে এমনিতেই রাজশাহীতে গাছে ফলন এসেছে কম। যা আছে, তা অব্যাহত দাবদাহ, প্রচণ্ড খরায় ঝরে যাচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক বাগানের অন্তত ৫০ শতাংশ গুটি ঝরে গেছে। আম রক্ষায় অনুমোদিত মাত্রায় ওষুধ ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। বিরূপ এই আবহাওয়ার পরিবর্তন না হলে গাছে পাতা ছাড়া কিছুই থাকবে না।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) শারমিন সুলতানা বলেন, রাজশাহীতে বৃষ্টির অভাবে ও প্রচণ্ড খরার কারণে আমের মুকুল ঝরে পড়ছে। খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় খুবই সতর্কতার সঙ্গে গাছ পরিচর্যা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাছের গোড়ায় অল্প পরিমাণ পানি ও পরবর্তীতে ইউরিয়া ও পটাশ সার দিতে হবে। এছাড়া, আমের গুটি রক্ষায় বরিক এসিডও স্প্রে করতে হবে।
এনায়েত করিম/এমএ/