উত্তরবঙ্গের অন্যতম শিল্প সমৃদ্ধ শহর সৈয়দপুরে রয়েছে রেলওয়ে কারখানা, বিসিক শিল্পনগরী, ইপিজেডসহ কয়েক শ ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব জায়গায় কর্মরত আছেন প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক। এই শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করার কথা উপজেলা শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, নানাসংকটে ভুগতে থাকা সরকারি এই সংস্থাটি থেকে শ্রমিকরা কোনো সেবা পান না।
শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ পদই রয়েছে শূন্য। এখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গল্পগুজব করেই সময় কাটান। যেখানে শ্রমিকদের সেবা দেওয়ার কথা সেই ভবনটির অবস্থা আরও নাজুক। শ্যাওলাপড়া ভবন দেখে যে কেউ এটাকে পরিত্যক্ত বাড়ি মনে করতে পারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রমিকের চিকিৎসাসেবা ও বিনোদনের কথা চিন্তা করে ১৯৭৮ সালে উপজেলা পরিষদসংলগ্ন শহরের নিচু কলোনি এলাকায় ৫৪ শতক জমির ওপর গড়ে ওঠে শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র। শুরুতে এই কেন্দ্র শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করলেও বর্তমানে এর কোনো কার্যক্রম নেই। সৈয়দপুরে শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রে প্রায় এক যুগ ধরে ১২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ছয়জন। চিকিৎসকসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। এতে করে কেন্দ্রটি শ্রমিকদের কল্যাণে কোনো কাজে আসছে না। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় ভবনের দেয়াল ও ছাদে আগাছা জন্মেছে। অধিকাংশ কক্ষই তালাবদ্ধ। যে কয়জন অফিস স্টাফ রয়েছেন, তারা গল্পগুজব করে সময় কাটান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিকিৎসাসেবা, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে এসবের কোনো কার্যক্রমই এখানে নেই। জরাজীর্ণ ভবনের বেশির ভাগ রুমে তালা ঝুলে আছে। বিনোদনের জন্য কয়েকটি ক্যারাম, লুডু, দাবা, হারমোনিয়াম, তবলা ও আলমারিতে কিছু বই থাকলেও এগুলোর ব্যবহার নেই একেবারেই। সারা বছরে প্রশিক্ষণ হয়েছে মাত্র একটি!
সৈয়দপুর শহরে থাকা এই শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রটির প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলার ৯০ শতাংশ শ্রমিকই জানেন না। অথচ প্রতিবছর এ কেন্দ্রের জন্য চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও বিনোদন বাবদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ট্রাকচালক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চাওয়া হয় শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র সম্পর্কে। তিনি প্রথমবার এর নাম শুনেছেন জানিয়ে খবরের কাগজকে বলেন, ‘কেউ কখনো আমাকে এমন সংস্থার কথা জানাননি। আপনার কাছ থেকে প্রথমবার শুনলাম।’
সৈয়দপুর শহরে রিকশা চালান আক্তার আলী। তিনি ও তার পরিবারের কেউ রোগাক্রান্ত হলেই হাসপাতালে যান। তাদের চিকিৎসার জন্য আর কোনো কেন্দ্র আছে বলে তিনি জানতেন না। বলেন, আমাকে এই কেন্দ্রের কথা কেউ কখনো বলেননি।
লুৎফর রহমান নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা দিনমজুর। একদিন কাজ না করলে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যায়। যা মজুরি পাই তাতে কোনো রকমে সংসার চালাই। বিনোদনের জন্য এখানে এলে সংসারের খরচ দেবে কে?’
নীলফামারী জেলা ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ন রশিদ বলেন, সৈয়দপুর শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রটি বাস্তবে শ্রমিকদের জন্য কোনো কাজ করছে না। কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হলে আমরা ওখানে কোনো চিকিৎসাসেবা পাই না। চিকিৎসার জন্য আমাদের সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের ওপর ভরসা করতে হয়। অথচ সরকার প্রতিবছর এই কেন্দ্রে কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে।’
সৈয়দপুর শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের শ্রমকল্যাণ সংগঠক আব্দুল খালেক জানান, শ্রমিক সংগঠনসহ কারখানার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। শ্রমিকদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তাদের একাধিক সভা সেমিনারের মাধ্যমে শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র সম্পর্কে জানানো হলেও তারা কেউ কেন্দ্রে আসেন না।
শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ইসতেখার বলেন, আমাদের এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। আমরা শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। ছয়টি পদে জনবল না থাকার বিষয়টি শ্রম মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে।