ঝালকাঠির বাসিন্দা মোস্তফা হাওলাদারের পেশা অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা সংগ্রহ করে বিক্রি করা। অন্যদিকে ঢাকার বাসিন্দা ঠিকাদার খোকন হাজিও দীর্ঘদিন ধরে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রা কিনে ভারতে পাচার করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি মোস্তফার কাছ থেকে প্রায় ৯৫ লাখ টাকায় মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা কিনে প্রতারিত হন খোকন। তাই মোস্তফাকে খুঁজছেন তিনি।
এদিকে নকল মূর্তি ও মুদ্রা বিক্রি করার পর আত্মগোপনে চলে যান মোস্তফা। পরে তার এক সহযোগীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে মোস্তফার ভায়রা-ভাই আনোয়ার হোসেন খানকে (৪৪) অপহরণ করেন খোকন হাজি ও তার চক্রের সদস্যরা।
শুক্রবার (৩ মে) র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। এর আগে অভিযোগ পেয়ে অপহরণকারী এই চক্রের মূল হোতা খোকন হাজিসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত বৃহস্পতিবার রাতে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় অপহৃত আনোয়ারসহ রিভলবার, ৮ রাউন্ড গুলি ও শটগান জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন চক্রের মূল হোতা হাজি ওয়াজী উল্লাহ খোকন (৬৫), মো. আরিফ হোসেন (৫৫), সাইফ উদ্দিন আহমেদ মিলন (৬২), সিরাতুল মোস্তাকিম (৫৮), মো. রুহুল আমিন (৬০), মো. জাকির হোসেন (৩০) এবং মো. স্বাধীন (৫২)।
তিনি জানান, গত ১ মে রাত ৮টার দিকে ফতুল্লা থানার তুষারধারা এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে খোকন হাজির নেতৃত্বে ৮ থেকে ৯ জনের একটি অপহরণকারী চক্র দোকান কর্মচারী আনোয়ারের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে চুনকুটিয়া এলাকায় খোকন হাজির মালিকানাধীন ‘চুনকুটিয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ অফিসে আটকে রাখে।
এ সময় অপহরণকারীরা আনোয়ারের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের কাছে ৯৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আনোয়ারের জীবন বাঁচাতে তার পরিবার ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা অপহরণকারী চক্রের দেওয়া ব্যাংক হিসাব নম্বরে পাঠায়। সাড়ে ১৭ লাখ টাকা পাওয়ার পরও আরও টাকার দাবিতে নির্যাতন চালাতে থাকে। বাকি টাকা না দিলে তাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
পরে আনোয়ারের পরিবারের কাছ থেকে এই অভিযোগ পেয়ে র্যাব-৩-এর গোয়েন্দা দল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অপহরণকারী চক্র ও অপহৃতের অবস্থান শনাক্ত করে। খোকনের অফিসে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের সাতজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, খোকন হাজি ২০১৫ সাল থেকে মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রা ভারতে পাচার করতেন। তার এই অপকর্মের সহযোগী ও ক্রেতা ছিল ভারতীয় নাগরিক মিলন চক্রবর্তী। যিনি নিজেকে একটি বিখ্যাত ভারতীয় কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিতেন। খোকন ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রার সাতটি চালান ভারতে পাচার করেন।