খুলনার ডুমুরিয়ায় শহিদ স্মৃতি মহিলা কলেজের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে অবৈধভাবে দুটি কাঁচাবাজার গড়ে উঠেছে। নতুন বাজার স্থাপনের ক্ষেত্রে ‘হাট ও বাজার আইন’ না মেনেই এখানে ‘আল্লার দান কাঁচামাল পাইকারি বাজার’ ও ‘বিশ্বাস পাইকারি সবজি বাজার’ গড়ে তুলে ১১০টি আড়তঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঘর বাবদ এক থেকে দুই লাখ টাকা অগ্রিম ও প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ টাকা হারে ঘর ভাড়া বাবদ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। ব্যক্তি ব্যবস্থাপনায় বাজার দুটি পরিচালিত হওয়ায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
এদিকে খুলনা-সাতক্ষীরার ব্যস্ততম সড়কের পাশে সবজিবাহী ট্রাক, পিকআপ, নসিমন, করিমন ও ইজিবাইকের চাপে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। সেই সঙ্গে গাড়ির হর্ন, কোলাহল ও রাস্তাঘাটে উচ্ছৃঙ্খল তরুণদের আনাগোনা বেড়েছে। জনভোগান্তি কমাতে অবৈধ কাঁচাবাজার দুটি উচ্ছেদের দাবিতে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গণস্বাক্ষরসহ আবেদন করেছেন এলাকাবাসী।
অন্যদিকে ডুমুরিয়ার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ট্রাক বা ইঞ্জিনভ্যানে সবজি নিয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গা কেসিসি কাঁচাবাজারে আসার পথে ব্যবসায়ীদের বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘আল্লার দান কাঁচামাল পাইকারি বাজার’ ও ‘বিশ্বাস পাইকারি সবজি বাজার’ আড়ত মালিক ও কর্মচারীরা পথে পথে ব্যবসায়ীদের আটকে দিয়ে ওই সবজি নিজেদের বাজারে নিয়ে যেতে বাধ্য করছেন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে ‘বিশ্বাস পাইকারি সবজি বাজার’ মালিক আনিসুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সবজির বাজার থেকে কিছুটা দূরে একটি বৈধ বাজার ছিল। তবে সড়ক থেকে দূর হওয়ায় সেখানে সবজি ব্যবসায়ীরা যেতে চাইতেন না। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা মিলে আমরা এই পাইকারি বাজারটি গড়ে তুলেছি।’
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, আদালতের নির্দেশনার পর বিগত আট মাসেও অবৈধ বাজার দুটি উচ্ছেদ করা হয়নি। ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি বশির উল্লাহের যৌথ বেঞ্চ তিন মাসের মধ্যে বাজার দুটির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।
ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী হুমায়ুন কবির লিখিত অভিযোগে জানান, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে অবৈধ বাজার গড়ে ওঠায় বৈধ বাজারগুলোতে পণ্য আমদানি-বিক্রি কমেছে। অবৈধ বাজার থেকে জমির মালিকরা ঘর ভাড়া বাবদ অর্থ আদায় করছেন। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
জানা যায়, হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০২৩ এর বিধি-৩ এর ১ ও ২ উপধারায় বলা হয়, ‘সরকার ও স্থানীয় জেলা প্রশাসক বিধি অনুযায়ী নতুন হাট ও বাজার স্থাপন করতে পারবেন। তবে স্থাপিত হাট ও বাজারের মালিকানা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত থাকবে। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে বাজার তৈরি করা যাবে না। আইনের বিধান লঙ্ঘন করে হাট ও বাজার স্থাপন করলে ভূমিসহ সমস্ত স্থাপনা সরকার বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।’
অবৈধ বাজার দুটির বিষয়ে ২০২৩ সালের ১৬ আগস্ট খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়া চিঠিতে বলেন, ডুমুরিয়ায় ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় অবৈধ কাঁচাবাজার তৈরি করা হয়েছে। এতে শহরের একমাত্র পাইকারি কাঁচাবাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিচ্ছে। কৃষক ও ব্যাপারীরা সোনাডাঙ্গা ট্রাক স্ট্যান্ডের কেসিসি কাঁচাবাজারে না এসে ডুমুরিয়ায় গিয়ে পণ্য বেচাকেনা করছেন। ফলে সিটি করপোরেশন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এরই মধ্যে কেসিসি পাইকারি কাঁচাবাজারের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম উচ্চ আদালতে ডুমুরিয়ার অবৈধ বাজার দুটি উচ্ছেদে রিট করেন। এতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে সচিব, বাজার মালিকসহ সাতজনকে বিবাদী করা হয়। বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহ যৌথ বেঞ্চ নির্দেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে বাজার দুটির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু বাজার দুটি উচ্ছেদ না হওয়ায় আবারও আদালতে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
সোনাডাঙ্গা কেসিসি কাঁচাবাজারের সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম নাসির জানান, ব্যক্তিগত জায়গায় বাজার হয় না। এর আগে হাইকোর্ট ২০০৬ সালে নিরালা হাজী রাহেজ উদ্দিন পাইকারি কাঁচা বাজারটি অবৈধ ঘোষণা করে। পরে ২০০৮ সালে বাজারের ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়। আমরাই তার ভুক্তভোগী ছিলাম।’
জানা যায়, শহিদ স্মৃতি মহিলা কলেজের পাশে লুৎফর রহমান গাজীর ছেলে আনিসুর রহমান গাজী তার বরফ কলের সামনে ব্যক্তি জমিতে আল্লার দান কাঁচামাল পাইকারি বাজার স্থাপন করে ৪৮টি আড়ত বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রতিটি ঘরে ন্যূনতম এক লাখ টাকা অগ্রিম ও প্রতিদিন ১০০ টাকা হারে আদায় করা হয়।
অপরদিকে স্থানীয় মো. শামসুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে আনিসুর রহমান বিশ্বাস তার জমিতে বিশ্বাস পাইকারি সবজি বাজার স্থাপন করে ৬২টি আড়ত ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। সেখানে আড়তদারদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৯০ টাকা হারে অর্থ আদায় করা হয়।