নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একটি কেন্দ্রের বাইরে অন্তত ১১টি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে৷ পরে কেন্দ্রটির আশেপাশে থাকা বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বুধবার (৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত কিছুক্ষণ পরপর বন্দর ইউনিয়নের কুশিয়ারায় হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে এ বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।
বিস্ফোরণের পর কেন্দ্রটিতে ভোটারের উপস্থিতি কমে যায়। যদিও কেন্দ্রটির আশেপাশে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিতে দেখা গেছে।
খবর পেয়ে কেন্দ্রটি অবস্থান করছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ নিজেও।
এ ঘটনায় কেন্দ্রটিকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও ব়্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেন তিনি।
চিংড়ি প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান মুকুলের অভিযোগ, দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশিদের অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকরা ‘ককটেল’ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ কেন্দ্রের ভোটার আমি। কাছেই আমার বাড়ি। সকালে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছি। এ এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা আছে, ভোট ব্যাংকও বেশি। এ কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভীত হয়ে ভোটারদের মধ্যে ভীতি তৈরি করতে ছাত্রলীগের লোকজনকে দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন৷’
সকাল থেকে এই কেন্দ্রে অবস্থান করে দেখা যায়, ভোট শুরুর এক ঘন্টা ভোটার উপস্থিতি কম থাকলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বেলা ১১টার দিকে এমএ রশিদ কেন্দ্রটি পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তার সমর্থকরা কেন্দ্রের বাইরে দোয়াত-কলমের পক্ষে শ্লোগান দেয়। তিনি কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে চলে গেলে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জুয়েল হোসেনসহ প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান নেন। তাদের অবস্থানকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম বিস্ফোরণের শব্দটি পাওয়া যায়। এ সময় কেন্দ্রের সামনে থাকা ভোটার ও লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে।
তবে, জানতে চাইলে এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাসনাত রহমান বিন্দু বলেন, ‘প্রথম বিস্ফোরণের সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। পরে প্রশাসনের অনুরোধে আমরা চলে এসেছি। আমরা কেউ এ কাজ করিনি। চিংড়ি প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন নিজেরাই এমনটা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন। আমাদের কাছে খবর আছে সবগুলো কেন্দ্রেই মুকুলের লোকজন এমনটা করবে।’
প্রথম বিস্ফোরণের পর নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রসিকিউশন) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা ককটেল কিনা নিশ্চিত নই। কেউ কেউ বলছেন, পটকা বা হাতে তৈরি চকলেট বোমার শব্দ। আবার টায়ারও ফেটে যাবার কথা শুনছি। একেকজন একেক কথা বলছে। তবে, আমরা কেন্দ্রের সামনে অবস্থান করা লোকজনকে অনুরোধ করার পর তারা সেখান থেকে চলে গেছেন।’
এরপর আরও একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। দুপুর দেড়টার দিকে পুনরায় পরপর তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। যদিও ওই সময় কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি সদস্যের অবস্থান ছিল।
জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘কেন্দ্রের সামনে পেছনে কোথাও আমরা কাউকে দাঁড়াতে দিচ্ছি না। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। বিস্ফোরণর উৎস এবং যারা জড়িত এর সঙ্গে তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে৷’
উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ রশীদ (দোয়াত-কলম), সাবেক চেয়ারম্যান মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল (চিংড়ি মাছ), মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান জেলা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মাকসুদ হোসেন (আনারস) এবং তার ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ (হেলিকপ্টার)।
বিল্লাল হোসাইন/জোবাইদা/অমিয়/