‘জীবনের শেষ ভোট দিলাম আজকে মনে হচ্ছে, আর ভোট দিতে পারব কি না জানি না, বয়স তো কম হলো না। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছি। কোথাও বের হতে পারি না। আজকে উপজেলায় ভোট হচ্ছে। তাই ভোট দিলাম স্ত্রীর সহযোগিতা নিয়ে। ভোট দিয়ে খুবই শান্তি পেলাম। অনেক দিন পর সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে।’ কথাগুলো বলছিলেন, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার কাকরাইদ আখালিয়া গ্রামের মৃত সামাদ আলীর ছেলে ৬৫ বছর বয়সের তারা মিয়া।
তারা মিয়া আরও বলেন, ‘অসুস্থ থাকার কারণে সংসারে অভাব অনটন। কোনো মেম্বার বা চেয়ারম্যান আমাকে সহযোগিতা করে নাই। আজকে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে শুনলাম। তাই মনের মতো একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছে। তাই নিজের স্ত্রীকে বললাম যে, আমাকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাও, ভোট দিব। তারপর স্ত্রী রহিমা আমাকে নিয়ে এসেছে ভোটকেন্দ্রে।’
তারা মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম খবরের কাগজকে বলেন, ‘হুইল চেয়ারের জীবন আমাদের। ছেলে সন্তান যা সহযোগিতা করে, তা দিয়ে সংসার চালাই। দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামী অসুস্থ। কিন্তু কোনো সহযোগিতা পাই না কোথাও থেকে। এবার আমাদের পরিচিত ও কাছের মানুষ নির্বাচন করছে, যার কারণে হুইল চেয়ারে করে স্বামীকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে এসেছি ভোট দেওয়ার জন্য।’
কাকরাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মেহেদী হাসান বলেন, ‘কাকরাইদ কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজারের ওপরে। আনসার সদস্যরা তারা মিয়াকে সহযোগিতা করেছেন ভোট প্রয়োগ করতে। এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।’
জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মতিয়ুর রহমান বলেন, ‘প্রথম ধাপে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি শেষে টাঙ্গাইলের দুটি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ইতোমধ্যে ৭ প্লাটুন বিজিবি, ২ প্লাটুন র্যাব, প্রতিটি কেন্দ্রে ৪ জন পুলিশ, ১৫ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি উপজেলায় একজন করে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।’
প্রথম ধাপে টাঙ্গাইলের তিনটি উপজেলা ধনবাড়ী, মধুপুর ও গোপালপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গোপালপুর উপজেলায় নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মরিয়ম আখতার মুক্তা গত শুক্রবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে গত রবিবার নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে গোপালপুর উপজেলা পরিষদের সব পদের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন।