ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচনে আনসারের সহযোগিতায় ভোট দিলেন ৯৫ বছরের বৃদ্ধা বালা মনি। তার সঙ্গে ভোট দিতে আসেন তারই ছোট বোন ৯০ বছর বয়সী কিরণ মনি। বালা মনি ও কিরণ মনি জেলার সদর উপজেলার হরিহরপুর গ্রামের দেবেন্দ্রনাথের মেয়ে।
বালা মনির মেয়ে শীলা মনির সহযোগিতায় তারা অনেক কষ্টে ভ্যানে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত আসেন। তাদের দেখে আনসার সদস্যরা ছুটে যান তাদের কাছে। এরপর তাদের ভোটকক্ষে নিয়ে যান তারা। পরে কোনো রকমে কক্ষে গিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন তারা। আবারও ওই আনসার সদস্যরা দুই বোনকে ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভ্যানে তুলে দেন।
ভোট দেওয়া শেষে বৃদ্ধা বালা মনি বলেন, ‘শরীর খুব অসুস্থ, অনেক বয়স হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে আসতে শরীরটা সায় দিচ্ছিল না। কিন্তু মন মানছিল না। তাই কষ্ট হলেও কোনো রকমে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত এসেছি। ভোট দিয়ে খুব ভালো লাগল। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলাম। জীবনে অনেকবার ভোট দিয়েছি। আর হয়তো ভোট দিতে পারব না। এটাই আমার শেষ ভোট।’
বোন কিরণ মনি বলেন, ‘দুই বোন মিলে ভোট দিলাম, খুব ভালো লাগছে। আনসার সদস্যদের ব্যবহার অনেক ভালো। তারা আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। কোনো গ্যাঞ্জাম নাই, মারামারি নাই, হট্টগোলও নাই। সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে।’
ঠাকুরগাঁও রোড বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা যখন দেখতে পাই দুই বৃদ্ধা ভ্যানে করে ভোট দিতে এসেছেন, ওই সময় আমরা তাদের ভোটকক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য এগিয়ে যাই। এত বয়স হওয়ার পরেও তারা ভোট দিতে এসেছেন।’
ওই কেন্দ্রের দায়িত্বের প্রিসাইডিং অফিসার স্বপন কুমার কর্মকার বলেন, “ওই দুই বোন বালা মনি ও কিরণ মনিকে দেখতে পেয়ে আনসার সদস্যরা এগিয়ে যায়। পরে আমরা তাদের দুজনের সুন্দরভাবে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে তারা। তারপরও দেশের প্রতি তাদের এত ভালোবাসা দেখে খুব ভালো লাগল। তারা অত্যন্ত দায়িত্বশীল। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার বেশ ভালো লেগেছে। তারা বলেছিলেন, ‘ভোট দেওয়া আমাদের অধিকার এবং নাগরিক দায়িত্ব।’ তাদের দেখে আমি আসলেই মুগ্ধ।’’
গতকাল মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ও রাণীশংকৈল উপজেলায় দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট চলে। বড় কোনো সংঘাতের ঘটনা ছাড়াই সুন্দর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এই দুটি উপজেলায় ২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
অন্যদিকে রাণীশংকৈল উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন।