রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় খুন হয়েছেন আরিফুল ইসলাম (২৮) নামে এক জাপানপ্রবাসী। আরিফুলের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরার কালিকুরপাড়ায়। তিনি ওই এলাকার শাজাহান শিকদারের ছেলে।
শনিবার (১ জুন) রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি-ব্লকের ২ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে আরিফুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। অর্ধগলিত লাশ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে একটি চিরকুট ও নোটারি করা বিয়ের হলফনামা উদ্ধার করছে পুলিশ। ওই নোটারিতে দেখা যায়, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিজ জেলা নরসিংদীতে আরিফ ও পারভীন নামে একজন বিয়ে করেছেন। জানা যায়, পারভীন কানাডাপ্রবাসী।
পুলিশের এক সূত্র বলছে, পারভীন কৌশলে তাকে বাংলাদেশ এনে খুন করে ফের কানাডা চলে যান। কানাডায় স্বামী নিয়ে থাকেন পারভীন আক্তার। পারভীন দম্পতি এবং আরিফুল তিনজনেরই বাড়ি নরসিংদীতে।
এদিকে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ১৭ মে বিকেল ৪টার দিকে পারভীন ও আরিফুল ইসলাম একত্রে এই ফ্ল্যাটে ওঠেন। ১৮ মে সকাল সাড়ে ৬টায় পারভীন আক্তার একাই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান। তার মোবাইল নম্বরের সর্বশেষ অবস্থান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
লাশের পাশ থেকে হাতে লেখা একটি চিরকুট ও স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে দেখা যায়, আরিফুল ও পারভীনের নোটারি করা বিয়ের হলফনামা। ওই চিরকুটে লেখা, ‘আমার জীবনের শান্তি নষ্ট করে দিছে এই রেপিস্ট। ব্লাকমেইলার সে। তার নিজের ইচ্ছায় আমার হাতে ধরা দিছে। নিজের হাতে এই রেপিস্ট ব্লাকমেইলারকে মেরে শাস্তি দিলাম।’ ধারণা করা হচ্ছে, এটি পারভীন আক্তারের লেখা।
আরিফুলের দেশে আসার বিষয়টি পরিবার জানত না। রবিবার (২ জুন) সকালে জাপান থেকে আরিফুলের স্ত্রী আয়েশা ফোন করে (আরিফুলের) দেশে আসার কথা জানিয়েছেন। এরপর থেকে পরিবার আরিফুলের সন্ধান শুরু করে। রাতে পুলিশের কাছ থেকে আরিফুলের খুন হওয়ার খবর পান তারা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, পারভীন ১৭ মে কানাডা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে নামেন। পরদিন সর্বশেষ তার ফোনের অবস্থান ছিল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এতেই ধারণা করা হচ্ছে, আরিফুলকে হত্যার পর পারভীন কানাডায় ফিরে গেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি-ব্লকের ২ নম্বর রোডের এক নম্বর ভবনটি মাটি প্রপার্টিজের। সেখানে দেশি-বিদেশি নাগরিকরা অল্প দিনের জন্য অনলাইনে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেন। গত ১৭ মে আরিফুল ও পারভীন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে অনলাইনের মাধ্যমে দোতলা ভাড়া নেন। রবিবার বিকেলে ভবনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ঝাড়ু দেওয়ার জন্য দরজা ধাক্কা দেন। ভেতর থেকে সাড়া না পেয়ে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খোলেন। এরপরই দুর্গন্ধ পান এবং দরজার সামনে দাঁড়িয়ে খাটে একজনকে শোয়া অবস্থায় দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ছাড়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট হত্যাকাণ্ডের আলামত সংগ্রহ করে। লাশের বুক ও গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেছে পুলিশ।
তাতে দেখা গেছে, ১৭ মে বিকেল ৪টা ৯ মিনিটে আরিফুল ও পারভীন অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করছেন। দুজনের মুখেই মাস্ক। আরিফুলের হাতে একটি লাগেজ। ১৮ মে সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে পারভীন আক্তার বাসা থেকে একা বেরিয়ে যাচ্ছেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, বাসায় ওঠার পর ওই রাতেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
গত মাসের ১৭ তারিখে আরিফুল ইসলাম ও পারভীন আক্তার স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে দোতলায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে অনলাইনে সাত দিনের জন্য বুকিং দিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন। মাটি প্রপার্টিজ থেকে ফোন করে জানায়, দোতলার অ্যাপার্টমেন্টে একজনের লাশ পাওয়া গেছে।
এদিকে ভাটারা থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, আরিফুলকে হত্যা করে তার স্ত্রী কানাডা ফিরে গেছেন। ক্ষোভ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হত্যাকারী পারভীনকে কানাডা থেকে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ডিএমপির গুলশান বিভাগের এসি (বাড্ডা জোন) রাজন কুমার সাহা বলেন, ‘আরিফের পরিবারের ভাষ্য, পারভীন আক্তার কানাডাপ্রবাসী। কানাডায় তার স্বামী আছেন। তার নাম বাবু। পারভীনের সঙ্গে বিয়ে হলেও আরিফের পরিবার তা জানত না।’ তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। আসামিকে দেশে আনার কথা চলছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আরিফের বোন জানান, জাপান থেকে তার ভাবি ১ জুন ফোন করে বলেন, আরিফুল দেশে গেছে। কিন্তু তার কোনো খোঁজখবর পাচ্ছি না। ফোনে কয়েক দিন ধরে কথা বলতে পারছি না।