ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

এমপি আনারের দেহাংশের খোঁজে দিনরাত তল্লাশি

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ২৫ মে ২০২৪, ১১:৪৪ এএম
এমপি আনারের দেহাংশের খোঁজে দিনরাত তল্লাশি
এমপি আনারের দেহাংশের খোঁজে তল্লাশি

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িতদের নাম উঠে এসেছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক কিছু নেতার নাম আসছে। হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিন আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আসামিদের রিমান্ডে চেয়ে পুলিশের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে শুক্রবার (২৪ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত তাদের আট দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।

এদিকে খুন করার পর যে ‘কসাই’ তার দেহ টুকরো করেছিল বলে অভিযোগ, তাকে কলকাতায় গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। শুক্রবার জিহাদ হাওলাদার নামের ওই আসামির ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন কলকাতার বারাসাতের আদালত। তার বাড়ি খুলনায়। রিমান্ড মঞ্জুরের পর শুক্রবার দুপুর থেকে জিহাদ হাওলাদারকে নিয়ে পুলিশ নিহত এমপির দেহাংশের খোঁজে কলকাতার পোলেরহাট থানার জিরানগাছা এলাকার বিভিন্ন স্পটে তল্লাশি চালায়। শনিবার (২৫ মে) সকালে তা আবার শুরু হবে। এ ছাড়া কলকাতার অন্যান্য এলাকায়ও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তল্লাশিতে ড্রোনও ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের পুলিশ ও কলকাতা পুলিশ বলছে, তিনি একটি পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে খুন হয়েছেন। খুন হওয়ার আগে ২০০ কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। তার কিছু তথ্য ভারতের পুলিশ ও দেশি পুলিশ পেয়েছে। সূত্র বলছে, এই চক্রের সঙ্গে মোট আটজন জড়িত বলে ধারণা করছেন তারা। এদের মধ্যে বাংলাদেশি ও ভারতীয় কিলার জড়িত। তাকে খুনের জন্য দুই দেশের কিলারদের ১০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। ৫ কোটি কিলারদের পরিশোধ করা হয়।

এ ছাড়া হত্যার পর কলকাতার ওই ফ্ল্যাটেই রাতভর পার্টির আয়োজন করে আসামিরা আনন্দফুর্তি করে বলে জানান কসাই জিহাদ।

খুনের ছক নিখুঁত করতে গোটা কলকাতা চষে বেড়ায় ঘাতকরা 
এমপি আনারকে হত্যার দিনে খুনিদের গতিবিধির হদিস প্রকাশ্যে এনেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। খুন হয়েছেন কলকাতার পূর্ব প্রান্তে নিউ টাউন অঞ্চলে। কিন্তু খুনের আগে ও পরে আততায়ীরা একাধিকবার মধ্য কলকাতা চষে বেড়িয়েছে।

গত ১৩ মে খুনের দিনে সংসদ সদস্যকে খুনের পর সন্ধ্যায় সদর স্ট্রিটের হোটেলে ফিরে আসে খুনিরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে চেক আউট করে সংসদ সদস্যের দেহাংশভর্তি ট্রলি নিয়ে তারা চলে যায় বনগাঁ সীমান্তে। ১৭ মে ফের শহরে ফিরে নিউ মার্কেটেরই একটি শপিংমল থেকে নতুন ট্রলি কেনে দুই খুনি। ১৯ মে তারা ফিরে যায় বাংলাদেশে। চিকিৎসা করানোর নাম করে কলকাতায় আসার কারণে রীতিমতো একটি হুইলচেয়ারও কেনে তারা। পুলিশের ধারণা, প্রথমে খুনের পর দেহটি হুইলচেয়ারে বসিয়ে পাচার করার ছক করেছিল তারা। পরে ছক পাল্টে দেহ টুকরো টুকরো করে পাচার করে। দুই খুনির সিসিটিভি ফুটেজ সিআইডি সংগ্রহ করেছে।

সিআইডির মতে, গত ৩০ এপ্রিল এই খুনের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহিন কলকাতায় আসেন। সঙ্গে ছিলেন বান্ধবী শিলাস্তি রহমান। তারা ছিলেন ভিআইপি রোডের কাছে একটি হোটেলে।

গত ১৩ মে খুনের দিন সকালে হোটেলের এক কর্মীকে বলেন গাড়ি বুক করতে। সিআইডি জেনেছে, ওই গাড়ি নিয়ে ফয়সল বরাকনগরে গোপাল বিশ্বাসের বাড়ির কাছে যান। গোপালবাবুর বাড়ি থেকে বেলা ১টা ৪০ নাগাদ এমপি আনার বের হন। তাকে নিয়ে ফয়সল নিউ টাউনে একটি মলের সামনে যান। সেখানে বাংলাদেশের কিলার আমানুল্লাহ একটি গাড়ি নিয়ে আসেন। সেই গাড়ি করেই আমানুল্লাহ, ফয়সল ও শিলাস্তি এমপি আনারকে নিয়ে নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে যান। আগেই ফ্ল্যাটে ছিলেন মোস্তাফিজুররা। খুনের পর সন্ধ্যায় ফয়সল ফের সদর স্ট্রিটের হোটেলে ফিরে আসেন।

১২ দিনের সিআইডি হেফাজতে জিহাদ, শিগগিরই জট খুলবে, আশা তদন্তকারীদের 
কসাই জিহাদ হাওলাদারকে ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বারাসত আদালত। গতকাল মুখ ঢাকা অবস্থায় সিআইডির গোয়েন্দারা তাকে পেশ করেন বারাসত আদালতে। বৃহস্পতিবার রাতেই সীমান্ত এলাকার বনগাঁ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তবে খুনের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনো কথাই বলেননি যুবক। 

ক্লোরোফর্ম দিয়ে সংজ্ঞাহীন করে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে খুন, মৃত্যু নিশ্চিত করতে ভারী বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত
এবার সামনে এল আরও শিউরে ওঠার মতো তথ্য। তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির দাবি, দেহ লোপাটের আগে দেহ থেকে চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এরপর মাংস, হাড় ছোট ছোট টুকরো করে তিনটি প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে সম্ভবত ভাঙড়ের পোলেরহাট এলাকায় গিয়ে খালে ফেলে দেওয়া হয়।

এই কাজে মুম্বাই থেকে জিহাদ নামে এক কসাইকে প্রায় দুই মাস আগে ভাড়া করে আনা হয়েছিল। ঘটনার দিন আগে থেকেই ওই ফ্ল্যাটে লুকিয়ে ছিল আততায়ীরা। এমপি আনার ফ্ল্যাটে ঢুকে বাথরুম থেকে বের হওয়ার পরই প্রথমে ক্লোরোফর্ম দিয়ে তাকে বেহুঁশ করা হয়। এর পরই বালিশ চাপা দিয়ে তাকে খুন করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে প্রথমে ভারী বস্তু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে তারা। তারপর রান্নাঘরে নিয়ে শুরু হয় দেহ লোপাটের প্রস্তুতি।

তদন্তকারীদের দাবি, এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস আগে অবৈধভাবে মুম্বাইয়ের বাসিন্দা পেশায় কসাই জিহাদকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। চিনার পার্কের কাছে একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয় তাকে। এমপি আনার খুনের পর তার দেহ টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। এরপর চামড়া ছাড়িয়ে মাংস, হাড় টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরা হয়। রাস্তায় দেহাংশ কোনোভাবে পড়ে গেলে যাতে কারও সন্দেহ না হয় তাই মাংসে হলুদও মাখানো হয় বলে সূত্রের খবর। এরপর ট্রলি ব্যাগে ভরে সংসদ সদস্যের দেহাংশ নিয়ে আবাসন ছেড়ে বেরিয়ে যায় আততায়ীরা। সেই ছবি সিসিটিভি ফুটেজে ধরাও পড়েছে।

সিআইডির তদন্তকারীরা মনে করছেন, জিহাদকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করলে অনেক মিসিং তথ্য মিলতে পারে। তাতে তদন্তের অগ্রগতি হতে পারে বলেই ধারণা গোয়েন্দাদের। 

এরপর ভবানী ভবনে ধৃত বাংলাদেশি নাগরিক জিহাদ হাওলাদারকে রাতভর জেরা করা হয়। সিআইডির দাবি, জেরায় তিনি স্বীকার করেছেন যে ঘটনার দিন তিনিসহ চারজন বাংলাদেশি নাগরিক নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনসের বি-ইউ ব্লকের চারতলার ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আগে থেকেই খুনের সবকিছু পরিকল্পনা তৈরি ছিল। এমপি আনার সেখানে পৌঁছাতেই তাকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করার পর শ্বাসরোধে খুন করা হয়। খুনের পর তার নিথর দেহ ফ্ল্যাটেই টুকরো টুকরো করে কেটে তা সরিয়ে দেওয়া হয় অন্যত্র। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ট্রলি এবং প্লাস্টিকের ব্যাগও ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

তবে সিআইডি সেই দেহাংশের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালালেও এখন পর্যন্ত দেহের কোনো টুকরোই উদ্ধার করতে পারেনি। যার ফলে তদন্ত করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে সিআইডিকে।

নিউ টাউনের যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজীমকে খুন করা হয়েছে বলে শনাক্ত করা হয়েছে, সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, কয়েকজন ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বেরোচ্ছেন। তাদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে ঢাকায় ধরা পড়েছে। কলকাতা পুলিশ মনে করছে, ওই ট্রলিতে ভরে এমপির দেহ সরানো হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছে সেই ফুটেজ।

এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, আজীম হত্যার ঘটনায় দরকার হলে খুব শিগগির তদন্তের জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে পুলিশের একটি প্রতিনিধিদল যাবে। 

সূত্র বলছে, আজীম খুনের পরিকল্পনায় সাবেক কয়েকজন এমপি ও কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী জড়িত। আজীমের জন্য কেউ স্বর্ণ ব্যবসায় স্থির হতে পারতেন না। তিনি কয়েকজন ব্যবসায়ীর মধ্যে এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। যে কারণে অন্য ব্যবসায়ীরা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। আজীম নিজেই স্বর্ণ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ করতেন, কাউকে ভাগ দিতেন না।

পুলিশ বলছে, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন। যদিও শাহীনের সঙ্গে ওই বৈঠকে বৃহত্তর যশোরের সাবেক এমপি ও দুজন বড় ব্যবসায়ীও ছিলেন। ২০১৪ সালে আজীম এমপি হওয়ার পর থেকে স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ একাই নিয়ে নেন। বেশ কিছুদিন আজীম একাই পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করতেন। ভাগ দিতেন না কাউকে। শত শত কোটি টাকার এই চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বন্ধু আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। ভারতের যে ফ্ল্যাটে আজীমকে হত্যা করা হয়েছে, সেটিও আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করা।

আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে এমপি আজীমকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া লাশ গুমের রোমহর্ষক বর্ণনাও দিয়েছে খুনিরা। 

আসামি আমানুল্লাহ পুলিশকে বলেছেন, আজীমকে খুন করতে চুক্তি করা হয়। পরে আমানুল্লাহই ভাড়া করেন খুলনার দুই কিলারকে। পরে এদের দুজনের মাধ্যমে জিহাদ ও সিয়াম নামের আরও দুজন যুক্ত হন। এদের মধ্যে সিয়ামের দায়িত্ব ছিল লাশ গুম করা। আর আজীমকে ওই ফ্ল্যাটে আনতে ব্যবহার করা হয় নারী শিলাস্তি রহমানকে। 

এদিকে শিলাস্তি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থেকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। তার বাবা থাকেন পুরান ঢাকায়। বাবার নাম আরিফুর রহমান। মায়ের নাম রোমানা রহমান। শিলাস্তি একাই উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়িতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতেন। সেখানে শাহীনসহ অনেকেরই যাতায়াত ছিল। শিলাস্তি পুলিশকে জানান, খুনের সময় সে ওই ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে ছিলেন। দোতলার ফ্ল্যাটে আজীম খুন হয়েছেন। খুনিরা আগেই সেখানে অবস্থান করছিল বলে পুলিশকে জানান। শিলাস্তির ভাষ্যমতে, আজীম ফ্ল্যাটে ঢোকামাত্রই খুনিরা তার ওপর আক্রমণ করে। 

সূত্র জানায়, যে ফ্ল্যাটে আজীমকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে ৩০ এপ্রিল শাহীনের সঙ্গে উঠেছিলেন আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি। ঘটনার ছক কষে আক্তারুজ্জামান ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন। অন্যরা ফ্ল্যাটে থেকে যান। খুনের পর ১৫ মে শিলাস্তি ও আমানুল্লাহ আকাশপথে ঢাকায় চলে আসেন। ১৭ মে ঢাকায় আসেন মোস্তাফিজুর, পরদিন ফেরেন ফয়সাল। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘এমপি আজীমের হত্যাকাণ্ডটি পারিবারিক, আর্থিক নাকি অন্য কোনো কারণে, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ডিবি নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ভারতের দুজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার তদন্তে বাংলাদেশে এসেছেন। তারা গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আমরা সবকিছু মাথায় রেখে তদন্ত করছি।’

পুলিশ জানায়, কোটচাঁদপুরের একটি রিসোর্টের ভেতর সুইমিং পুল, চা-বাগান, গরু-ছাগলের ফার্ম, জার্মান শেফার্ড কুকুর, গলফ কোর্স ও বিভিন্ন ফলের বাগান রয়েছে। আছে কঠোর নিরাপত্তা, সিসিটিভি ক্যামরাসহ তারকাঁটা বেষ্টনী। শাহীন দেশে অবস্থানকালে এই রিসোর্টে সুন্দরী নারীদের আনাগোনা দেখা যায়। এ সময় রিসোর্টে ভিআইপিরা সময় কাটাতে আসেন। এই রিসোর্টে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছেন, গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে শাহীনসহ আরও কয়েকজনকে এই বাড়িতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই রিসোর্টে বসেই হত্যার ছক কষে থাকতে পারে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীরা। বিমানবন্দর থেকে সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ পাচার করার সঙ্গে কাস্টমস, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণির কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা সেখানে যাতায়াত করতেন। তাদের জন্য সেখানে মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা থাকত। কারা কারা সেখানে যাতায়াত করতেন এবং স্বর্ণ চোরাচালানের নেপথ্যে কারা জড়িত তাদের শনাক্তকরণে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অনুসন্ধান চালাচ্ছে। 

সূত্র জানায়, এমপি আজীম হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন ‘ক্লু’ এরই মধ্যে সামনে এনেছে দুই দেশের তদন্তকারী সংস্থা। জড়িত সন্দেহে উঠে এসেছে বেশ কয়েকজনের নাম। তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখালেও পুলিশের হাতে আটক রয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে খুনের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনসহ দেশের ১০ থেকে ১২ জন কিলারের সম্পর্কে জানা গেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যেটা নিয়ে কাজ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

আনারকে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ২০০ কোটি টাকা লেনদেনের বিরোধ ছিল
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আজীমকে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ২০০ কোটি টাকা লেনদেনের বিরোধ ছিল বলে জানা গেছে। এমপির সঙ্গে স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসা করতেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। শাহীন এই অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন। আর এমপি আজীম সেই অর্থ দিয়ে দুবাই থেকে বিশেষ কৌশলে ও অবৈধভাবে স্বর্ণের বার এনে ভারতে পাচার করতেন। পুলিশ বলছে, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা আনোয়ারুল আজীমের পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাস সেসব স্বর্ণের বার কিনে নিতেন। গোয়েন্দারা এসব তথ্য জানতে পেরেছেন। সেগুলো নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।

ওয়ারী বিভাগ ও একাধিক গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ঘটনায় জানানোর মতো কিছু হয়নি। মূল আসামি শাহীনকে গ্রেপ্তার করতে পারলে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ স্পষ্ট হবে। এখন পর্যন্ত এমপি আজীম ও শাহীনের বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও আসামিদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২০০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এটি নিয়ে ঢাকার (ডিবি) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কলকাতায় গিয়ে এমপি আনারের বন্ধু গোপাল বিশ্বাসকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, আজীমকে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা দীর্ঘদিন আগের। কয়েকবার ব্যর্থ হয় অপরাধীরা।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘এমপি আজীমের খুনের বিষয়টি পরিকল্পিত, সেটা নিশ্চিত। এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জড়িত সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

তিন আসামি রিমান্ডে
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (আদালতে দায়িত্বরত) এসআই জালাল উদ্দিন জানান, রিমান্ড শুনানিতে কোনো আইনজীবী আসামিদের পক্ষে দাঁড়াননি। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সাত্তার দুলাল বলেন, এই ঘটনাটি নৃশংস। কাউকে এভাবে হত্যা করা যায় ভাবলে গা শিউরে ওঠে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অবশ্যই এ মামলায় রিমান্ড পাওয়া উচিত। আর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো শিলাস্তি রহমান আদালতের কাছে দাবি করেন, এসব ঘটনার কিছুই তিনি জানেন না।

পুলিশের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত আসামিদের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া তিন আসামি হলেন শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ সাইদ, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান।

আদালতে স্বীকারোক্তি বাস ডিপোতে আগুন দিতে ৪ লাখে চুক্তি

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৪০ এএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৪০ এএম
বাস ডিপোতে আগুন দিতে ৪ লাখে চুক্তি
চট্টগ্রামের নতুনপাড়ায় বিআরটিসি বাস ডিপোতে আগুন দেওয়ার জন্য দুই শ্রমিক লীগ নেতার মধ্যে ৪ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছিল বলে স্বীকারোক্তি দেন শ্রমিক লীগ নেতা মো. সোহেল। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়া এলাকায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস ডিপোতে আগুন দেওয়ার জন্য দুই শ্রমিক লীগ নেতার মধ্যে ৪ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছিল। 

বুধবার (২৪ জুলাই) চট্টগ্রামে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তি দেন শ্রমিক লীগ নেতা মো. সোহেল। ৪ লাখ টাকার চুক্তিতে সোহেলকে এই কাজে নিয়োগ দিয়েছিলেন আরেক শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল আলম। চুক্তি অনুসারে বাস ডিপোতে আগুন দেওয়ায় চারটি বাস পুড়ে যায়। এই কাজের জন্য সোহেল অগ্রিম হিসেবে পান মাত্র ৫০০ টাকা।

গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন মোহাম্মদ জুনায়েদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সোহেল। আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে সোহেল বলেছেন, নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা শ্রমিক লীগ সভাপতি দিদারুল আলমের নির্দেশেই অক্সিজেনের বিআরটিসি বাস ডিপোতে আগুন দেন তিনি। এর আগে গত সোমবার বিআরটিসি বাস ডিপোর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সোহেলকে গ্রেপ্তার করে হাটহাজারী থানা পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরের দিন গ্রেপ্তার করা হয় শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল আলমকে।

বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়কের নতুনপাড়ার বিআরটিসি ডিপোতে ৯৬টি সরকারি বাস রয়েছে। গত শনিবার (২১ জুলাই) রাত ১২টার দিকে ডিপোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শেডসংলগ্ন চারটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে একটি বিআরটিসি বাসের ১৬টি আসন এবং আরেকটির ৮টি পুড়ে যায়। বাকি দুটি বাসের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় রবিবার চট্টগ্রাম বিআরটিসি ডিপোর ম্যানেজার মো. জুলফিকার বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডিপোর সিসি ক্যামেরা পর্যালোচনা করে কালো শার্ট ও লুঙ্গি পরিহিত এক যুবকের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। সেই বাসে আগুন দিয়েছে। পরে অভিযান চালিয়ে আমরা তাকে নগরের বায়েজীদ বোস্তামী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করি। তার বাসস্থান থেকে একটি কালো শার্ট ও লুঙ্গিও জব্দ করা হয়। এগুলো মামলার আলামত হিসেবে কাজে আসবে।’

ওসি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল স্বীকার করেছেন, গত শুক্রবার বিকেলে নতুনপাড়া সিএনজি স্টেশনের সামনে দিদারুল আলম তার সঙ্গে দেখা করেন। একপর্যায়ে তাকে আগুন দেওয়ার চুক্তি করে অগ্রিম ৫০০ টাকা দেন এবং বাকি টাকা অর্থাৎ ৪ লাখ টাকা কাজের পর দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। 

জানা যায়, গ্রেপ্তার দুই শ্রমিক লীগ নেতা দিদারুল ও সোহেলকে গত মঙ্গলবার আদালতে পাঠায় পুলিশ। দিদারুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, দিদারুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা আছে। ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীর নতুনপাড়া এলাকায় আবদুল হালিম ওরফে রুবেল নামের একজনকে ছুরিকাঘাতে খুন করার অভিযোগে দিদারুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে আছে। বিআরটিসি বাসে সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়ার দ্বন্দ্বে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ এবং সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। সারা দেশে নির্বিচারে বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। অথচ বিআরটিসি বাস ডিপোতে আগুন দিয়েছে শ্রমিক লীগের নেতা। যার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।

পুলিশের বেশে পণ্যবাহী গাড়িতে ডাকাতি করত তারা

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪৯ পিএম
আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪৯ পিএম
পুলিশের বেশে পণ্যবাহী গাড়িতে ডাকাতি করত তারা
ছবি : খবরের কাগজ

দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে পুলিশের বেশে পণ্যবাহী গাড়ি ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ডাকাতির পৃথক ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রবিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

সম্প্রতি নারয়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি ডিমের গাড়ি ডাকাতির ঘটনায় পাঁচজনকে ও সাভারের চান্দিনায় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেরার পথে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ডাকাতির ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলো- আসলামুল হক আসলাম ওরফে বেলাল (৩৭), রমজান শেখ ওরফে কালু (৪০), মেহেদী শেখ হিরা (৩৩), জমির খান (৩৬) ও মো. জহিরুল ইসলাম চকিদার (৫০)। অপর দলটি হলো- জাহাঙ্গীর আলম (৪২), মো. মিরন ওরফে সুজন (৫০), মো. মেহেদী হাসান রাজীব (৩০), আব্দুল মতিন (৪২), বাদল মুন্সী (৪৫) ও সাগর ইসলাম (২৪)।

তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন মডেলের পাঁচটি গাড়ি, পুলিশের ওয়্যারলেস, জ্যাকেট জব্দ করা হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘তারা মহাসড়কে ডিবি পুলিশের পোশাক পরে লেজার লাইটের সংকেত দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি থামিয়ে চালক ও হেল্পরের হাত-পা বেঁধে গাড়িসহ পণ্য ডাকাতি করত। এই চক্রটি ধারাবাহিকভাবে মূল্যবান যেকোনো পণ্যবাহী গাড়ি দেখলেই সংকেত দিত। সম্প্রতি রূপগঞ্জে ডিমবাহী গাড়ি থামিয়ে চালকের হাত-পা বেঁধে ডাকাতির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই চক্রটি ডাকাতি করা পণ্য বিক্রি করত। পাশাপাশি ডাকতি করে নেওয়া গাড়ি দিয়ে তারা আবার ডাকাতি করত।’

হারুন আরও বলেন, ‘আমাদের ধারাবাহিক অভিযানে সাভারের চান্দিনায় এক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে ডাকাতির শিকার হন। এই ঘটনায় করা মামলার তদন্তে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সকল মামলা তদন্ত করতে গিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনা বেশ কয়েকটি মামলা শনাক্ত করা হয়েছে। সে সকল ঘটনায় এই দুই ডাকাত দলের সদস্যরা জড়িত।’

ভুক্তভোগীদের করা মামলায় দেখা গেছে, এই ডাকাত দলের সদস্যরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি ডাকাতি করত।

অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, আমরা বলতে চাই দেশের কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটলে অবশ্যই মামলা করবেন। কারণ মামলা হলে তখন এই সব চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করতে পারবে। গ্রেপ্তার হওয়া ডাকাত দলের প্রত্যেক সদস্যের বিরুদ্ধে পাঁচ থেকে ১২টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে। তারা সবাই পেশাদার ডাকাত দলের সদস্য।

অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মতিঝিল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তাররা নিজেদের আড়াল করতে অত্যন্ত কৌশলী। তারা নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করত। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

খাজা/জোবাইদা/অমিয়/

এক প্রক্সিপ্রার্থীর খোঁজে এসে ধরা আরেক প্রক্সিপ্রার্থী

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৮ এএম
আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১১:১৮ এএম
এক প্রক্সিপ্রার্থীর খোঁজে এসে ধরা আরেক প্রক্সিপ্রার্থী
অভিযুক্ত কাউসার আলী। ছবি: খবরের কাগজ

নিজেই অন্তত তিনটি সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অন্যের হয়ে প্রক্সি দিয়েছেন। বেশিরভাগ সময়ে দক্ষ প্রক্সিপ্রার্থীও খুঁজে দিয়েছেন জয়পুরহাট জেলার কাউসার আলী। গেল ১০ বছর থেকে সরকারি বিভিন্ন গ্রেডের চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত এই কাউসার। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রক্সিপ্রার্থী খুঁজতে এসে শিক্ষার্থীদের হাতে ধরা পড়ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফলিত পুষ্টি ও খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী দাবি করা এই অভিযুক্ত। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল টিম তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

জানা যায়, শিক্ষক নিবন্ধন লিখিত পরীক্ষার জন্য জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক রেজার জন্য ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ‘প্রক্সি’ পরীক্ষার্থী খুঁজে দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন কাউসার। সবই ঠিক ছিল কিন্তু প্রক্সিদাতার সঙ্গে দেনদরবারে না মেলায় তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে আনা হয় বলে দাবি অভিযুক্ত কাউসার আলীর।

তিনি বলেন, ‘শনিবার এনটিআরটিসির লিখিত পরীক্ষা ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে এক প্রক্সিপ্রার্থীর খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। সোলায়মান রবিন নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাও হয়। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু এখানে আসার পর তারা আগে টাকার দাবি করে। আমি বলেছি পরীক্ষা শেষে টাকা দেব। কিন্তু আগে দেওয়ার জন্য জোর করে। পরে দাবিতে রাজি না হলে, শিক্ষার্থীদের কাছে আমাকে তুলে দিয়ে সটকে পড়ে।’

সাংবাদিক সমিতিতে কাউসারকে আনেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছিলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের কর্মসংস্থান সম্পাদক পল্লব রানা পারভেজ।

পল্লব বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় আমার বন্ধু বিজয় একাত্তর হল ও যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়ার সাকিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে বলে এবং সে বলে সেখানে এক প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যকে ধরা হয়েছে। কয়েকজনকে নিয়ে যেন সেখানে যাই। পরে সেখানে গিয়ে কাউসার নামে ওই লোকের ফোনে ৫০০-এর বেশি চাকরি পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাই। পরে আর বোঝার বাকি নেই সে প্রক্সি বা প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য। পরে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সাংবাদিক সমিতিতে তাকে নিয়ে আসি।’

জড়িত থাকার অভিযোগ ঢাবি-জবিসহ ৯ শিক্ষার্থীর
সাংবাদিকদের সঙ্গে অভিযুক্ত কাউসারের আলাপচারিতায় উঠে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বগুড়ার সরকারি আজিজুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নাম। যারা কি না এই প্রক্সিচক্রে বেশ সক্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী আলী আব্বাস ও ইফরাত হোসাইন, বিজয় একাত্তর হলের সোলাইমান রবিন ও ইকবাল হোসাইন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর রাকিব হাসান।

এ ছাড়া আজিজুল হক কলেজের বাংলা বিভাগের আজিজুল, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের রায়হান, ভুগোল বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শিমুল, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আবুজর গিফারির নামের কথা জানান কাউসার। 

প্রাথমিক চুক্তি ২০ হাজার, টিকলে লাখ টাকা
কাউসারের হোয়াটসঅ্যাপে শত শত চাকরির প্রবেশপত্র মিলেছে। কাউসার জানায়, প্রক্সির এই চুক্তিতে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। যেটিকে টিএ/ডিএ বলছেন তিনি। এ সময়ে পরীক্ষার প্রবেশপত্রও জমা রাখা হয়। টিকলে প্রক্সিপ্রার্থী পাবেন এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা।

জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবির কুয়াতপুরের বাসিন্দা কাউসার বলেন, ‘রেলওয়ের পয়েন্টসম্যান, খালাসি ও ময়মনসিংহ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার পদে ভিন্ন তিনজনের পরীক্ষায় প্রক্সিপ্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলাম। গত ২৮ জুন রেলওয়ের পয়েন্টসম্যান পদের পরীক্ষায় ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে অংশ নিয়েছিলাম। এ ছাড়া গত ৪ মে অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার পদের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রিলিমিনারিতে বগুড়া আজিজুল হক কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আমিনুলের মাধ্যমে মুহাম্মদ বুলবুল ইসলাম নামের একজন প্রার্থীর পরীক্ষায় বসিয়েছিলাম। ওই পরীক্ষায় প্রিলিতে পাস হয়েছিল।’

ফোনে প্রশ্ন চেয়ে কাউসারকে একাধিক কল, পুলিশে সোপর্দ
ঢাবি সাংবাদিক সমিতিতে অবস্থানকালে কাউসারের কাছে একাধিক জায়গা থেকে ফোনকল আসে এবং যে কলগুলোতে এনটিআরসিএর বিভিন্ন পরীক্ষার নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় গণিত পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়ার কথা বলা হয়। পরে প্রক্টরিয়াল টিমকে পুরো বিষয়টি জানানো হলে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার রাতেই আমরা অভিযুক্তকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করি। সে এখন পুলিশ হেফাজতে আছে। তার দেওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তা ছাড়া আটক ওই ব্যক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীর নাম বলেছে, সেসবেরও খোঁজ নিয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওইসব হলের প্রাধ্যক্ষদের কাছে নাম পাঠানো হয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হয় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমানের সঙ্গে। মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে ফোনকল ও বার্তা পাঠানো হলে তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

আরিফ জাওয়াদ/সাদিয়া নাহার/অমিয়/

গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৫

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম
গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৫
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (মতিঝিল) বিভাগ।

শুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুরে ডিবি মতিঝিল বিভাগের অবৈধ অস্ত্র জব্দ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. এরশাদুর রহমান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মতিঝিল থানার এজিবি কলোনি এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ ডাকাত সদস্যকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি ডিবির জ্যাকেট, দুটি চাকু, দুটি ডিবি পুলিশ লেখা স্টিকার, একটি প্লাস্টিকের খেলনা পিস্তল, একটি লেজার লাইট, দুটি মোবাইল এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার ডাকাত সদস্যরা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন মহাসড়কের নির্জন স্থানে টার্গেট ব্যক্তি ও পণ্যবাহী গাড়ি আটকে ডাকাতি করে আসছিল। অভিযুক্ত সবাইকে মতিঝিল থানায় ডাকাতির মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।

পাটখেতে মিলল প্রবাসীর স্ত্রীর গলাকাটা মরদেহ

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১০:২৭ এএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১১:১৪ এএম
পাটখেতে মিলল প্রবাসীর স্ত্রীর গলাকাটা মরদেহ
স্মৃতি আক্তার

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলায় পাটখেত থেকে কাতার প্রবাসীর স্ত্রীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

শুক্রবার (১২ জুলাই) সকালে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের হালুয়াপাড়া এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

নিহতের নাম স্মৃতি আক্তার (২৪)। তিনি একই এলাকার মানিক মিয়ার মেয়ে এবং উপজেলার মসূয়া এলাকার কাতার প্রবাসী আমিন ভূইয়ার স্ত্রী।

এলাকাবাসী জানান, পাঁচ বছর আগে আমিন ভূইয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় স্মৃতির। পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে দেশে ফিরে স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে কাতার চলে যান আমিন। এরপর থেকে স্মৃতি বাবার বাড়িতেই থাকতেন। তাদের কোনো সন্তান নেই। শুক্রবার সকালে পাটখেতে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবরে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ স্মৃতির মরদেহ উদ্ধার করে।

স্মৃতি আক্তারের পরিবার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাত ৮টা থেকে ৯টার দিকে আমিনের সঙ্গে কথা হয় স্মৃতির। এ সময় স্মৃতিকে আমিনের বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা বলেন। শুক্রবার সকালে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল স্মৃতির। সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়।’

নিহতের বাবা মানিক মিয়া বলেন, “আমার মেয়েকে একই এলাকার মুজিবুরের ছেলে মেহেদী বিরক্ত করত। আমার মেয়েরে জোর কইরা নিয়া যাইতে চাইত। তার সঙ্গে না গেলে আমার মেয়ে ও আমারে মাইরা ফেলার হুমকি দেয় মেহেদী। আমারে মারধরও করতে আসত। মেহেদী বলত, ‘হয়তো ছেরি শেষ হইব, নাহয় বাপ শেষ হইব।’ আমারে মারতে পারে নাই, আমার মেয়েরে মাইরা ফেলছে মেহেদী ও মুজিবুর। এরা একা মারে নাই, এদের সঙ্গে আরও পার্টি ছিল। আমার ছেরির রগ কাটছে, বুক ফারছে, গলা কাটছে।”

নিহতের মা ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ‘মেহেদী এই কাজ করছে। আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইত। আমার মেয়ে রাজি হয় নাই। আমার মেয়েকে বিয়ে না করতে পারায় মেরে ফেলছে।’

কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ বলেন, ‘৯৯৯ এ ফোন দিয়ে নিহতের চাচা আমাদের জানায় স্মৃতি আক্তারের মরদেহ পাটখেতে পড়ে আছে। খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে। শিগগিরই এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারব। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’

মিতু/পপি/অমিয়/