![এমপি আনারের দেহাংশের খোঁজে দিনরাত তল্লাশি](uploads/2024/05/25/anar-1716615862.jpg)
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িতদের নাম উঠে এসেছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক কিছু নেতার নাম আসছে। হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিন আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আসামিদের রিমান্ডে চেয়ে পুলিশের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে শুক্রবার (২৪ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত তাদের আট দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
এদিকে খুন করার পর যে ‘কসাই’ তার দেহ টুকরো করেছিল বলে অভিযোগ, তাকে কলকাতায় গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। শুক্রবার জিহাদ হাওলাদার নামের ওই আসামির ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন কলকাতার বারাসাতের আদালত। তার বাড়ি খুলনায়। রিমান্ড মঞ্জুরের পর শুক্রবার দুপুর থেকে জিহাদ হাওলাদারকে নিয়ে পুলিশ নিহত এমপির দেহাংশের খোঁজে কলকাতার পোলেরহাট থানার জিরানগাছা এলাকার বিভিন্ন স্পটে তল্লাশি চালায়। শনিবার (২৫ মে) সকালে তা আবার শুরু হবে। এ ছাড়া কলকাতার অন্যান্য এলাকায়ও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তল্লাশিতে ড্রোনও ব্যবহার করা হয় বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের পুলিশ ও কলকাতা পুলিশ বলছে, তিনি একটি পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে খুন হয়েছেন। খুন হওয়ার আগে ২০০ কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। তার কিছু তথ্য ভারতের পুলিশ ও দেশি পুলিশ পেয়েছে। সূত্র বলছে, এই চক্রের সঙ্গে মোট আটজন জড়িত বলে ধারণা করছেন তারা। এদের মধ্যে বাংলাদেশি ও ভারতীয় কিলার জড়িত। তাকে খুনের জন্য দুই দেশের কিলারদের ১০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। ৫ কোটি কিলারদের পরিশোধ করা হয়।
এ ছাড়া হত্যার পর কলকাতার ওই ফ্ল্যাটেই রাতভর পার্টির আয়োজন করে আসামিরা আনন্দফুর্তি করে বলে জানান কসাই জিহাদ।
খুনের ছক নিখুঁত করতে গোটা কলকাতা চষে বেড়ায় ঘাতকরা
এমপি আনারকে হত্যার দিনে খুনিদের গতিবিধির হদিস প্রকাশ্যে এনেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। খুন হয়েছেন কলকাতার পূর্ব প্রান্তে নিউ টাউন অঞ্চলে। কিন্তু খুনের আগে ও পরে আততায়ীরা একাধিকবার মধ্য কলকাতা চষে বেড়িয়েছে।
গত ১৩ মে খুনের দিনে সংসদ সদস্যকে খুনের পর সন্ধ্যায় সদর স্ট্রিটের হোটেলে ফিরে আসে খুনিরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে চেক আউট করে সংসদ সদস্যের দেহাংশভর্তি ট্রলি নিয়ে তারা চলে যায় বনগাঁ সীমান্তে। ১৭ মে ফের শহরে ফিরে নিউ মার্কেটেরই একটি শপিংমল থেকে নতুন ট্রলি কেনে দুই খুনি। ১৯ মে তারা ফিরে যায় বাংলাদেশে। চিকিৎসা করানোর নাম করে কলকাতায় আসার কারণে রীতিমতো একটি হুইলচেয়ারও কেনে তারা। পুলিশের ধারণা, প্রথমে খুনের পর দেহটি হুইলচেয়ারে বসিয়ে পাচার করার ছক করেছিল তারা। পরে ছক পাল্টে দেহ টুকরো টুকরো করে পাচার করে। দুই খুনির সিসিটিভি ফুটেজ সিআইডি সংগ্রহ করেছে।
সিআইডির মতে, গত ৩০ এপ্রিল এই খুনের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহিন কলকাতায় আসেন। সঙ্গে ছিলেন বান্ধবী শিলাস্তি রহমান। তারা ছিলেন ভিআইপি রোডের কাছে একটি হোটেলে।
গত ১৩ মে খুনের দিন সকালে হোটেলের এক কর্মীকে বলেন গাড়ি বুক করতে। সিআইডি জেনেছে, ওই গাড়ি নিয়ে ফয়সল বরাকনগরে গোপাল বিশ্বাসের বাড়ির কাছে যান। গোপালবাবুর বাড়ি থেকে বেলা ১টা ৪০ নাগাদ এমপি আনার বের হন। তাকে নিয়ে ফয়সল নিউ টাউনে একটি মলের সামনে যান। সেখানে বাংলাদেশের কিলার আমানুল্লাহ একটি গাড়ি নিয়ে আসেন। সেই গাড়ি করেই আমানুল্লাহ, ফয়সল ও শিলাস্তি এমপি আনারকে নিয়ে নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে যান। আগেই ফ্ল্যাটে ছিলেন মোস্তাফিজুররা। খুনের পর সন্ধ্যায় ফয়সল ফের সদর স্ট্রিটের হোটেলে ফিরে আসেন।
১২ দিনের সিআইডি হেফাজতে জিহাদ, শিগগিরই জট খুলবে, আশা তদন্তকারীদের
কসাই জিহাদ হাওলাদারকে ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বারাসত আদালত। গতকাল মুখ ঢাকা অবস্থায় সিআইডির গোয়েন্দারা তাকে পেশ করেন বারাসত আদালতে। বৃহস্পতিবার রাতেই সীমান্ত এলাকার বনগাঁ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তবে খুনের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনো কথাই বলেননি যুবক।
ক্লোরোফর্ম দিয়ে সংজ্ঞাহীন করে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে খুন, মৃত্যু নিশ্চিত করতে ভারী বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত
এবার সামনে এল আরও শিউরে ওঠার মতো তথ্য। তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির দাবি, দেহ লোপাটের আগে দেহ থেকে চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এরপর মাংস, হাড় ছোট ছোট টুকরো করে তিনটি প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে সম্ভবত ভাঙড়ের পোলেরহাট এলাকায় গিয়ে খালে ফেলে দেওয়া হয়।
এই কাজে মুম্বাই থেকে জিহাদ নামে এক কসাইকে প্রায় দুই মাস আগে ভাড়া করে আনা হয়েছিল। ঘটনার দিন আগে থেকেই ওই ফ্ল্যাটে লুকিয়ে ছিল আততায়ীরা। এমপি আনার ফ্ল্যাটে ঢুকে বাথরুম থেকে বের হওয়ার পরই প্রথমে ক্লোরোফর্ম দিয়ে তাকে বেহুঁশ করা হয়। এর পরই বালিশ চাপা দিয়ে তাকে খুন করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে প্রথমে ভারী বস্তু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে তারা। তারপর রান্নাঘরে নিয়ে শুরু হয় দেহ লোপাটের প্রস্তুতি।
তদন্তকারীদের দাবি, এ ঘটনার প্রায় আড়াই মাস আগে অবৈধভাবে মুম্বাইয়ের বাসিন্দা পেশায় কসাই জিহাদকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। চিনার পার্কের কাছে একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয় তাকে। এমপি আনার খুনের পর তার দেহ টুকরো টুকরো করে কাটা হয়। এরপর চামড়া ছাড়িয়ে মাংস, হাড় টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরা হয়। রাস্তায় দেহাংশ কোনোভাবে পড়ে গেলে যাতে কারও সন্দেহ না হয় তাই মাংসে হলুদও মাখানো হয় বলে সূত্রের খবর। এরপর ট্রলি ব্যাগে ভরে সংসদ সদস্যের দেহাংশ নিয়ে আবাসন ছেড়ে বেরিয়ে যায় আততায়ীরা। সেই ছবি সিসিটিভি ফুটেজে ধরাও পড়েছে।
সিআইডির তদন্তকারীরা মনে করছেন, জিহাদকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করলে অনেক মিসিং তথ্য মিলতে পারে। তাতে তদন্তের অগ্রগতি হতে পারে বলেই ধারণা গোয়েন্দাদের।
এরপর ভবানী ভবনে ধৃত বাংলাদেশি নাগরিক জিহাদ হাওলাদারকে রাতভর জেরা করা হয়। সিআইডির দাবি, জেরায় তিনি স্বীকার করেছেন যে ঘটনার দিন তিনিসহ চারজন বাংলাদেশি নাগরিক নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনসের বি-ইউ ব্লকের চারতলার ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আগে থেকেই খুনের সবকিছু পরিকল্পনা তৈরি ছিল। এমপি আনার সেখানে পৌঁছাতেই তাকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করার পর শ্বাসরোধে খুন করা হয়। খুনের পর তার নিথর দেহ ফ্ল্যাটেই টুকরো টুকরো করে কেটে তা সরিয়ে দেওয়া হয় অন্যত্র। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ট্রলি এবং প্লাস্টিকের ব্যাগও ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
তবে সিআইডি সেই দেহাংশের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালালেও এখন পর্যন্ত দেহের কোনো টুকরোই উদ্ধার করতে পারেনি। যার ফলে তদন্ত করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে সিআইডিকে।
নিউ টাউনের যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজীমকে খুন করা হয়েছে বলে শনাক্ত করা হয়েছে, সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, কয়েকজন ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বেরোচ্ছেন। তাদের মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে ঢাকায় ধরা পড়েছে। কলকাতা পুলিশ মনে করছে, ওই ট্রলিতে ভরে এমপির দেহ সরানো হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছে সেই ফুটেজ।
এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, আজীম হত্যার ঘটনায় দরকার হলে খুব শিগগির তদন্তের জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে পুলিশের একটি প্রতিনিধিদল যাবে।
সূত্র বলছে, আজীম খুনের পরিকল্পনায় সাবেক কয়েকজন এমপি ও কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী জড়িত। আজীমের জন্য কেউ স্বর্ণ ব্যবসায় স্থির হতে পারতেন না। তিনি কয়েকজন ব্যবসায়ীর মধ্যে এটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। যে কারণে অন্য ব্যবসায়ীরা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। আজীম নিজেই স্বর্ণ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ করতেন, কাউকে ভাগ দিতেন না।
পুলিশ বলছে, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন। যদিও শাহীনের সঙ্গে ওই বৈঠকে বৃহত্তর যশোরের সাবেক এমপি ও দুজন বড় ব্যবসায়ীও ছিলেন। ২০১৪ সালে আজীম এমপি হওয়ার পর থেকে স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ একাই নিয়ে নেন। বেশ কিছুদিন আজীম একাই পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করতেন। ভাগ দিতেন না কাউকে। শত শত কোটি টাকার এই চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বন্ধু আজীমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। ভারতের যে ফ্ল্যাটে আজীমকে হত্যা করা হয়েছে, সেটিও আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করা।
আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে নিয়ে এমপি আজীমকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া লাশ গুমের রোমহর্ষক বর্ণনাও দিয়েছে খুনিরা।
আসামি আমানুল্লাহ পুলিশকে বলেছেন, আজীমকে খুন করতে চুক্তি করা হয়। পরে আমানুল্লাহই ভাড়া করেন খুলনার দুই কিলারকে। পরে এদের দুজনের মাধ্যমে জিহাদ ও সিয়াম নামের আরও দুজন যুক্ত হন। এদের মধ্যে সিয়ামের দায়িত্ব ছিল লাশ গুম করা। আর আজীমকে ওই ফ্ল্যাটে আনতে ব্যবহার করা হয় নারী শিলাস্তি রহমানকে।
এদিকে শিলাস্তি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থেকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুরে। তার বাবা থাকেন পুরান ঢাকায়। বাবার নাম আরিফুর রহমান। মায়ের নাম রোমানা রহমান। শিলাস্তি একাই উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়িতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতেন। সেখানে শাহীনসহ অনেকেরই যাতায়াত ছিল। শিলাস্তি পুলিশকে জানান, খুনের সময় সে ওই ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে ছিলেন। দোতলার ফ্ল্যাটে আজীম খুন হয়েছেন। খুনিরা আগেই সেখানে অবস্থান করছিল বলে পুলিশকে জানান। শিলাস্তির ভাষ্যমতে, আজীম ফ্ল্যাটে ঢোকামাত্রই খুনিরা তার ওপর আক্রমণ করে।
সূত্র জানায়, যে ফ্ল্যাটে আজীমকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে ৩০ এপ্রিল শাহীনের সঙ্গে উঠেছিলেন আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি। ঘটনার ছক কষে আক্তারুজ্জামান ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন। অন্যরা ফ্ল্যাটে থেকে যান। খুনের পর ১৫ মে শিলাস্তি ও আমানুল্লাহ আকাশপথে ঢাকায় চলে আসেন। ১৭ মে ঢাকায় আসেন মোস্তাফিজুর, পরদিন ফেরেন ফয়সাল।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘এমপি আজীমের হত্যাকাণ্ডটি পারিবারিক, আর্থিক নাকি অন্য কোনো কারণে, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ডিবি নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ভারতের দুজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার তদন্তে বাংলাদেশে এসেছেন। তারা গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আমরা সবকিছু মাথায় রেখে তদন্ত করছি।’
পুলিশ জানায়, কোটচাঁদপুরের একটি রিসোর্টের ভেতর সুইমিং পুল, চা-বাগান, গরু-ছাগলের ফার্ম, জার্মান শেফার্ড কুকুর, গলফ কোর্স ও বিভিন্ন ফলের বাগান রয়েছে। আছে কঠোর নিরাপত্তা, সিসিটিভি ক্যামরাসহ তারকাঁটা বেষ্টনী। শাহীন দেশে অবস্থানকালে এই রিসোর্টে সুন্দরী নারীদের আনাগোনা দেখা যায়। এ সময় রিসোর্টে ভিআইপিরা সময় কাটাতে আসেন। এই রিসোর্টে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছেন, গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে শাহীনসহ আরও কয়েকজনকে এই বাড়িতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই রিসোর্টে বসেই হত্যার ছক কষে থাকতে পারে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারীরা। বিমানবন্দর থেকে সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ পাচার করার সঙ্গে কাস্টমস, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণির কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা সেখানে যাতায়াত করতেন। তাদের জন্য সেখানে মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা থাকত। কারা কারা সেখানে যাতায়াত করতেন এবং স্বর্ণ চোরাচালানের নেপথ্যে কারা জড়িত তাদের শনাক্তকরণে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
সূত্র জানায়, এমপি আজীম হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন ‘ক্লু’ এরই মধ্যে সামনে এনেছে দুই দেশের তদন্তকারী সংস্থা। জড়িত সন্দেহে উঠে এসেছে বেশ কয়েকজনের নাম। তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখালেও পুলিশের হাতে আটক রয়েছেন পাঁচজন। এর মধ্যে খুনের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনসহ দেশের ১০ থেকে ১২ জন কিলারের সম্পর্কে জানা গেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যেটা নিয়ে কাজ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
আনারকে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ২০০ কোটি টাকা লেনদেনের বিরোধ ছিল
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আজীমকে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ২০০ কোটি টাকা লেনদেনের বিরোধ ছিল বলে জানা গেছে। এমপির সঙ্গে স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসা করতেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। শাহীন এই অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন। আর এমপি আজীম সেই অর্থ দিয়ে দুবাই থেকে বিশেষ কৌশলে ও অবৈধভাবে স্বর্ণের বার এনে ভারতে পাচার করতেন। পুলিশ বলছে, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা আনোয়ারুল আজীমের পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাস সেসব স্বর্ণের বার কিনে নিতেন। গোয়েন্দারা এসব তথ্য জানতে পেরেছেন। সেগুলো নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।
ওয়ারী বিভাগ ও একাধিক গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ঘটনায় জানানোর মতো কিছু হয়নি। মূল আসামি শাহীনকে গ্রেপ্তার করতে পারলে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ স্পষ্ট হবে। এখন পর্যন্ত এমপি আজীম ও শাহীনের বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও আসামিদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২০০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এটি নিয়ে ঢাকার (ডিবি) গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কলকাতায় গিয়ে এমপি আনারের বন্ধু গোপাল বিশ্বাসকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, আজীমকে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা দীর্ঘদিন আগের। কয়েকবার ব্যর্থ হয় অপরাধীরা।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘এমপি আজীমের খুনের বিষয়টি পরিকল্পিত, সেটা নিশ্চিত। এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জড়িত সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
তিন আসামি রিমান্ডে
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (আদালতে দায়িত্বরত) এসআই জালাল উদ্দিন জানান, রিমান্ড শুনানিতে কোনো আইনজীবী আসামিদের পক্ষে দাঁড়াননি। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি আব্দুস সাত্তার দুলাল বলেন, এই ঘটনাটি নৃশংস। কাউকে এভাবে হত্যা করা যায় ভাবলে গা শিউরে ওঠে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অবশ্যই এ মামলায় রিমান্ড পাওয়া উচিত। আর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো শিলাস্তি রহমান আদালতের কাছে দাবি করেন, এসব ঘটনার কিছুই তিনি জানেন না।
পুলিশের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত আসামিদের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া তিন আসামি হলেন শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ সাইদ, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান।