![কফি চাষে সম্ভাবনার হাতছানি](uploads/2024/02/22/1708584834.IMG_20240217_160607.jpg)
চায়ের চেয়ে কফি জনপ্রিয় হলেও উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি কফি। বাংলাদেশে একসময় কফি চাষ কম হলেও এখন পাহাড়ি টিলা ভূমিতে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে এই ফসলটি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের আকবরপুরের পাহাড়ি টিলার অনাবাদি আর আবাদি জমিতে চায়ের মতোই গড়ে উঠেছে কফি এলাকা। মৌলভীবাজার চায়ের জন্য বিখ্যাত হলেও একটি কফি বাগান গড়ে তুলেছেন আবদুল মান্নান ও হুমায়ুন কবির।
জানা গেছে, এ জেলায় প্রথমে শখের বশে কয়েকজন কফির চারা রোপণ করলেও এখন অন্য সাথী ফসলের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার মাটি ও জলবায়ু কফি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ বাড়লে দেশে কফির আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি আকবরপুরে আবদুল মান্নানের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, কফি গাছ ছাড়াও টিলাজুড়ে দেশি-বিদেশি নানান জাতের গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ তার বাগান।
দুটি পাহাড়ি টিলা মিলে ৫ একর ৪৪ শতাংশ জায়গা জুড়ে ২০১৯ সাল থেকে তিনি কফির চারা রোপণ শুরু করেন। আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে ১০ টাকা দরে ৫০০ চারা এনে রোপণ করেন। পরে সরকারিভাবে তাকে আরও ৩০০ চারা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রায় ১০০ চারা মারা যায়। এখন অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের প্রায় ৭০০ কফি গাছ আছে।
আবদুল মান্নান বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কেজি ফল তুলেছি, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আরও ২০ কেজি ফল তুলব। তবে স্থানীয়ভাবে কফি প্রক্রিয়াজাত করার সুযোগ নেই। এ ছাড়া বাজারজাতের সমস্যা রয়েছে। কৃষি বিভাগের কাছে একটি প্রক্রিয়াজাত যন্ত্র চেয়েছি। যন্ত্র পেলে আরও কফির গাছ বাড়ানোর ইচ্ছে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাগানে ফলের গাছ লাগানোসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। ৮ হাজার টাকা মাসিক বেতনের দুজন নিয়মিত শ্রমিক আছেন। এ ছাড়া বছরে সার ও কীটনাশকের খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।’
তিনি আরও জানান, তার এই বাগানে বেড়ে ওঠা ফল গাছের মধ্যে আছে রামবুটান, মালয়েশিয়ান-কোরিয়ানসহ দেশি কাঁঠাল, বোম্বেসহ তিন জাতের লিচু, আপেল, ব্রুনাই কিং, ব্ল্যাকস্টোন, চায়না ড্রপ, গুড়পতি, গোপালভোগ, মল্লিকা, রেড আইভরি, কাটিমন, পোনাই, কিউজাই, নাগ, বোম্বে, আমলক্ষ্মী, পাকিস্তানিসহ দেশি জাতের স্থানীয় আম, থাই আমড়া, বলসুন্দরী বরই, গোলাপজাম, বিলম্বিসহ ১০৬ জাতের ফলের গাছ।
কফি চাষ করা সদর উপজেলার বোরতলা গ্রামের হুমায়ুন কবির বলেন, ‘কফির ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে কৃষি গবেষণা থেকে চারা এনে কফি চাষ শুরু করেছি। অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের গাছে ফলন আসা শুরু হয়েছে।’
কফি বাগানে কাজ করেন শ্রমিক শাহজাহান মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি এই বাগানে কয়েক বছর ধরে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।’
কফি ফল দেখে আগামীতে কফি চাষে আগ্রহী স্থানীয় কৃষক মুজাহিদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘সরকারি সহযোগিতা পেলে অন্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে কফি চাষ করব। এতে মূল ফসলের কোনো ক্ষতি হয় না বরং সহজে কফি চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।’
মৌলভীবাজার আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সূত্রে জানা গেছে, কফি আবাদ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প মাঠে বাস্তবায়িত হচ্ছে। চারা রোপণের ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই কফি গাছে ফল আসা শুরু হয়। এটি অন্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। কফিগাছ ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত অনায়াসে বেঁচে থাকে। যার কারণে কৃষকেরা কফি চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক নীলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, ‘আবদুল মান্নানের বাগানে বিদেশি অনেক ফল আছে। তিনি খুবই উদ্যোগী ও কর্মঠ কৃষক। নতুন ফল ফসল, প্রযুক্তিতে আগ্রহী। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা তাকে সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ জানান, পতিত, অনুর্বর ও টিলার জমিতে কফি চাষ ব্যাপকভাবে করা সম্ভব। চারা রোপণের ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই কফি গাছে ফল আসা শুরু হয়। এটি অন্যান্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে ব্যাপক সমাদর লাভ করেছে।