![আলুর রপ্তানি কমেছে চার গুণ](uploads/2024/02/27/1709019081.Pic-Ctg(25.2.24)-(2).jpg)
ডলারের মূল্যের তারতম্যের কারণে বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তানমুখী হচ্ছেন বিদেশি আমদানিকারকরা। ফলে সংকুচিত হয়ে আসছে বিদেশে আলু রপ্তানির বাজার। গত ছয় মাসের ব্যবধানে আলু রপ্তানি কমেছে চার গুণ।
রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমাদের দেশে উৎপাদিত আলু বিদেশে চাহিদা রয়েছে। কিন্তু কৃষকরা যে দামে আলু বিক্রি করছেন, সে দামে আমদানিকারকরা আলু কিনতে চান না। পাশাপাশি ডলারের দামের তারতম্যও আলু রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেমন, পাকিস্তানে একজন রপ্তানিকারক প্রতি ডলারের মূল্য পায় ২২৮ রুপি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা সরকারি হিসাবে ডলারপ্রতি পান ১০৯ টাকা। ফলে রপ্তানিকারকরাও বিদেশে আলু পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। সবমিলিয়ে আমাদের দেশে আলুর রপ্তানি কমে গেছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশে ৫১ হাজার ৪৪৫ টন আলু রপ্তানি করা হয়েছে। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৯ হাজার ৫৬০ টন আলু রপ্তানি হয়েছে। অপরদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৮১৩ টন আলু। সে হিসেবে রপ্তানির মৌসুমে আলুর রপ্তানি কমেছে ৪ গুণ।
সূত্র জানায়, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে সবচেয়ে বেশি আলু রপ্তানি হয়। অন্য বছর এ সময়টাতে দিনে প্রায় ২০০ কন্টেইনার আলু রপ্তানি হতো। তবে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৮৪ টন আলু রপ্তানি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দিনে কখনো এক কনটেইনার, আবার কখনো দুই কনটেইনার আলু রপ্তানি হচ্ছে। আবার এমনও দিন আছে এক কনটেইনারও আলু রপ্তানি হয়নি।
আলুর রপ্তানিকারক মোহাম্মদ এমদাদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের দেশে পাইকারি দরে প্রতি কেজি আলু ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে আমরা প্রতি টন আলু বর্তমানে ২৮০ থেকে ৩০০ ডলারে রপ্তানি করতে হবে। কিন্তু আমদানিকারক ১৬০ থেকে ১৮০ ডলারে প্রতি টন আলু কিনতে চায়। ভারত পাকিস্তানে আলুর দাম কম। ওই সব দেশের দিকে ঝুঁকছেন আমদানিকারকরা। তবে আগামী মাস থেকে রপ্তানি কিছুটা বাড়বে আশা করি।’
আরেক রপ্তানিকারক আরিফ আজাদ প্রিন্স খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাকিস্তানের চাইতে আমাদের দেশে উৎপাদিত আলুর কোয়ালিটি ভালো। কিন্তু ডলার তারতম্যের কারণে আমরা আলু রপ্তানি করে যথাযথ লাভবান হতে পারছি না। তাই আলু রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
তবে কৃষি সম্প্রসারণ ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, আমাদের দেশে উৎপাদিত আলুর রপ্তানি গুণাগুণ ভালো। মূলত মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, আরব আমিরাত, মালদ্বীপ, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন, ভিয়েতনাম ও ব্রুনাইয়ে বেশি আলু রপ্তানি হয়। রপ্তানি করার মতো আলু পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। তবে কৃষকরা যে দাম চান, বিদেশি আমদানিকারকরা ওই দামে আলু কিনতে চান না। এতে বিপাকে পড়ছেন রপ্তানিকারকরা। তাই রপ্তানি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের হাতে এখনো সময় আছে। আশা করছি আলুর রপ্তানি সামনে আরও বাড়বে। গত অর্থবছরে আমরা ২৯ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়েছিল। আশা করছি এবারও আমরা ওই সমপরিমাণ আলু রপ্তানি করতে পারব।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সারা দেশে ১ কোটি ৪৩ লাখ ১ হাজার ৭০০ টন আলু উৎপাদন হয়। অপরদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সারা দেশে ১ কোটি ১৬ লাখ ২ হাজার টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।