![ঈশ্বরদীতে কেঁচো সারে আগ্রহ বাড়ছে](uploads/2024/02/28/1709098966.issordi.jpg)
ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষকরা। প্রতিমণে প্রায় ৩৫০ টাকার করছেন এখানকার সার উৎপাদনকারীরা।
২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের একটি প্রশিক্ষণের অংশ নেওয়ার পর সিআইজি (কমন ইন্টারেস্ট গ্রাউন্ড) সদস্য হন এমিলি নাসরিন। সেখানে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরি সম্পর্কে জানতে পারেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনব্যবস্থা গড়ে তোলে। ২০১৭ সালের শুরুতে কেঁচো সার উৎপাদনে সফলতা পান এমিলি নাসরিন। কেঁচো সার উৎপাদন করে সংসারে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। কেঁচো সার বিক্রি করে এমিলি নাসরিনের সামনে এগিয়ে যাওয়া দেখে গ্রামের অন্য নারীরাও এ কাজে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
কেঁচো সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা বাড়ে, যথাসময়ে ফসল উৎপন্ন হয়। সব ধরনের ফসলি জমিতে এই সার ব্যবহার করা যায়।
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের বড়ইচারা হাটের ঈদগাহ পাড়ায় এমিলি নাসরিনের বাড়ি। বাড়ির চারপাশে সিমেন্টের তৈরি রিং বসিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন তিনি। স্বামী, দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার। স্বামী আহমেদুর রহমান একটি কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা করতেন। তবে বর্তমানে কৃষিকাজের পাশাপাশি স্ত্রীকে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে সহযোগিতা করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এমিলি নাসরিন তার বাড়ির সামনে টিনের ছাউনি দেওয়া গোয়ালঘরের মতো ঘরে সারিবদ্ধভাবে সিমেন্টের তৈরি রিং বসিয়ে কেঁচো সার তৈরি করছেন। এমন সময় কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে।
এমিলি নাসরিন বলেন, ‘গোবর, কেঁচো দিয়ে সার তৈরি করার কথা মনে করে প্রথমে খারাপ লেগেছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে খারাপ লাগাটা দূর হতে থাকে। দৃঢ় মনোবলে একটি থেকে ৬৫টি রিং বসিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক ট্রলি গোবরের দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা। এক ট্রলি গোবর ২০টি রিংয়ে রাখা হয়। ১৫ থেকে ২০ দিন পর প্রতি রিং থেকে ১ মণ কেঁচো সার উৎপন্ন হয়। প্রতিমণ সার উৎপন্নে খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বিক্রি করা হয় এক মণ ৪০০ টাকায়। প্রতিমণে লাভ হয় ৩৫০ টাকা।
ঈশ্বরদী উপজেলার কৃষক ছাড়া আশেপাশের এলাকার কৃষকরা এসে কেঁচো সার কিনে নিয়ে যান। এ ছাড়া ঈশ্বরদীতে যেসব কৃষক বিশেষায়িতভাবে রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ানদের জন্য সবজি উৎপাদন করেন তারাও এই সার কিনে নিয়ে যান।
এমিলি নাসরিন জানান, এই সার উৎপন্নে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। গোবর ভরে এরপর কেঁচো রেখে রিং ঢেকে রাখা হয়। মাঝে মাঝে শুধু রিংয়ের ঢাকনি সরিয়ে কেঁচো ঠিকমতো আছে কি না, দেখা হয়। এভাবে ১৫ থেকে ২০ দিন যাওয়ার পর রিং থেকে সার বের করে তা চালনিতে ছেঁকে পরিষ্কার করে বস্তায় ভরা হয়।
এই নারী উদ্যোক্তা আরও জানান, তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এলাকার ১০ নারী। এ ছাড়া গ্রামের আরও ১৫ থেকে ২০ নারী ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করে অর্থ উপার্জন করছেন। ঈদগাহ পাড়ায় সবমিলিয়ে ২০০-এর বেশি রিংয়ে এই সার উৎপন্ন করা হয়। স্থানীয় কৃষি বিভাগ ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে তাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান এমিলি নাসরিন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ‘জমির উর্বরতা শক্তি ধরে রাখতে ভার্মি কম্পোস্ট সার খুবই দরকার। এ সার ব্যবহারে কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ জন্য উৎপাদনেও অনেকে এগিয়ে আসছেন। ঈশ্বরদী কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এমিলি নাসরিন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন। তিনি সফলতা পেয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় তার সার সরবরাহ করেন। তার সার উৎপাদন কারখানা পরিদর্শন করেছি। কিছু সমস্যা রয়েছে। এগুলো সমাধানে কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হবে।’