নাজমিনের খাবার যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । খবরের কাগজ
ঢাকা ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

নাজমিনের খাবার যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৪, ১১:২২ এএম
নাজমিনের খাবার যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে
নাজমিন শিলা নিজের বানানো খাবার অনলাইনে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন। ছবি : খবরের কাগজ

সাংসারিক কাজের পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চেষ্টা করছেন নাজমিন শিলা। নিজের বানানো খাবার বিক্রি করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। নিজ জেলার বাইরেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তার বাড়ির তৈরি খাবার ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। স্বামী আহসান আলমের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় সংসারে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে ফেসবুকে ‘স্বপ্ন সিঁড়ি’ নামে একটি পেজ খুলে খাবারের অর্ডার নিয়ে থাকেন। এখান থেকে নাজমিন প্রতি মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার খাবার বিক্রি করছেন। সাংসারিক আয়ে স্বামীর সঙ্গে অংশীদার হচ্ছেন। 

নাজমিন শিলা চুয়াডাঙ্গা শহরের সদর হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের হালুয়া, মাংসের আচার, নারকেলের নাড়ু তৈরি করছেন। এ ছাড়া তার তৈরি খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে, সিরিঞ্জ পিঠা, ছোলার ডালের বরফি, হালুয়া, পিঠা, পায়েস, রসুনের আচার, আমের আচারসহ বিভিন্ন ধরনের আচার, ফ্রোজেন করা সমুচা, চিকেন রোল, ভেজিটেবল রোল, চিকেন মোমো, পটেটো চিপস।

নাজমিন শিলা বলেন, ‘ইউটিউবে খাবার বানানোর ভিডিও দেখে আগ্রহ হয়। প্রথমে খাবার বানিয়ে অনলাইনে পেজ খুলে বিক্রি শুরু করি। ক্রেতাদের চাহিদা ও প্রশংসা দেখে আমার মনোবল এবং কাজ করার আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর ১৫ থেকে ২০ পদের খাবার বানিয়ে অর্ডার নিতে শুরু করি। এখন গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার অর্ডার পাচ্ছি। নারকেলের নাড়ু, মাংসের আচার ও ছোলার হালুয়ার চাহিদা বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অর্ডারের খাবার নিখুঁতভাবে তৈরি করি এবং সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিই। এতে আমার পরিচিতি বাড়তে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার এবং ব্যবসার প্রসার আরও বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা অর্ডার করেন। তাদের সঠিক সময়ের মধ্যেই কুরিয়ারে খাবার পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আশপাশে কেউ অর্ডার করলে আমার স্বামী নিজেই ডেলিভারি দিয়ে আসেন। সাংসারিক কাজের পাশাপাশি নারীরাও যে স্বাবলম্বী হতে পারেন তা আমি দেখিয়ে দিয়েছি।’

নাজমিনের স্বামী আহসান আলম বলেন, ‘সংসারের যাবতীয় কাজ আমার স্ত্রী একাই করে। সংসার চালানোর ক্ষেত্রেও সে সহযোগিতা করছে। তাই আমি বলতে চাই অসচ্ছল নারী যারা রয়েছেন তারা হোমমেড খাবার তৈরি করে পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারেন।’ 

চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বাড়ছে। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি নারীদের এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে তারা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশে বেকারত্ব দূর হবে। 

কমছে না স্বল্প আয়ের মানুষ

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
কমছে না স্বল্প আয়ের মানুষ
সিরডাপ মিলনায়তনে বুধবার বাংলাদেশ দারিদ্র পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২৩ প্রকাশনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবিক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ছবি: সংগৃহীত

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, সময়ের ব্যবধানে দারিদ্র্যের হার কমেছে। এটা ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু স্বল্প আয়ের মানুষের সংখ্যা কমছে না। যারা ধনী তারা কর দেয় না। কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ছে না।

বুধবার (৮ মে) সিরডাপ মিলনায়নে বাংলাদেশ দারিদ্র্য পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২৩ প্রকাশনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ এসব কথা বলেন। ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লিউসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইএনএম) ও সেন্টার ফর ইনক্লিউসিভ ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগ (সিআইডিডি) যৌথভাবে এই প্রকাশনার আয়োজন করে। ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

পল্লি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সাবেক সভাপতি ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যার যত সম্পদ তার সম্পদ আরও বাড়ছে। করোনাকালে ধনীরা আরও ধনী হয়েছে। যার বেশি সম্পদ সে আরও অর্জন করছে।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, জাতীয় আয়ের ২ শতাংশ খরচ করলে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা চলে আসবে। সারা বিশ্বে বৈশ্বিক সমস্যা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ। যারা দরিদ্র তারা আরও দরিদ্র হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলের লোকেরা বেশি অভিঘাতে পড়েছে। সমন্বয়ের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ২৬টি নীতি পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়েরও কাজ রয়েছে।

ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘যারা ধনী তারা কর দেয় না। এ জন্য আমাদের দেশে কর-জিডিপির অনুপাত খুবই কম। মাত্র ৮ শতাংশ। তবে ঋণের বোঝা অনেকে বেশি বললেও আমি বলব এটা ঠিক না। আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঋণ জিডিপির মাত্র ৪২ শতাংশ। যেখানে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের ১২৯ শতাংশ, জাপানে ২৬৩ শতাংশ। কিন্তু সমস্যা হলো ঋণের সঠিক ব্যবহার হয় না। চুরি চামারি হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। কিন্তু এখনো আমাদের দেশে পিছিয়ে থাকারা বের হতে পারছে না। পিছিয়ে পড়ারাও বের হতে পারছে না। আবার ক্ষমতাবানরা পিছিয়ে রাখতে অন্যদের ঠেলে দিচ্ছে।’

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘দারিদ্র্য পরিচিত বিষয়। এটা সব সময় মানুষের আলোচনায় থাকে। দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্য ভালো। কিন্তু আমরা অনেকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে জিইয়ে রাখি। সরকারের নির্বাচনের ইশতেহারে দারিদ্র্য বিমোচনের কথা বলা হয়েছে। উপোস না থেকে যাতে মানুষ পানি খেতে পারে সরকার সেই ব্যবস্থা করছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরে না থাকলেও বারান্দায় থেকে এটা দেখেছি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সারা দেশে ৩০০টি খানার তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তিনটি প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য, দারিদ্র্যের গতিশীলতা এবং সামাজিক বর্জনের বহুমাত্রিক বঞ্চনার চিত্র উদঘাটন করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী ১৭টি সমতল ভূমির জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, নদীতে বসবাসকারী যাযাবর (বেদে) ও যৌনকর্মীদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলোর মৌলিক সমস্যা মূলত স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত।

টিসিবির জন্য ৪৬৮ কোটি টাকার তেল-ডাল কিনবে সরকার

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
টিসিবির জন্য ৪৬৮ কোটি টাকার তেল-ডাল কিনবে সরকার
ছবি: সংগৃহীত

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত ও সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও রাইস ব্রান তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য ৪৬৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

টিসিবির জন্য যেসব পণ্য ক্রয় করা হবে এর মধ্যে ২২ হাজার টন মসুর ডাল, ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল এবং ৪০ লাখ লিটার রাইস ব্রান তেল কেনা হবে। মসুর ডাল ও রাইস ব্রান তেল কেনা হবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে। আর সয়াবিন তেল কেনা হচ্ছে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে।

বুধবার (৮ মে) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তেল-ডাল কেনার এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে নাবিল নাবা ফুডস প্রোডাক্টস লিমিটেডের কাছ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৬১ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০৩ টাকা ২৪ পয়সা, যা আগে ছিলও ১০৩ টাকা ৭৫ পয়সা। মসুর ডাল কেনার এ প্রস্তাব নিয়ে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে ১০ হাজার টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১০৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০৩ টাকা ৭৫ পয়সা।

এ ছাড়া অন্য এক প্রস্তাবে টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে ৬ হাজার টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর মেসার্স সালমান খুরশীদের কাছ থেকে ৩ হাজার টন মসুর ডাল এবং খুলনার শেখ অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে ৩ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৬০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রতি কেজির ডালের দাম পড়বে ১০১ টাকা ৪০ পয়সা।

সচিব জানান, টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে ও সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৫২ টাকা।

এ ছাড়া টিসিবির জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং মজুমদার ব্রান অয়েল মিলস লিমিটেডের কাছ থেকে ৪০ লাখ লিটার রাইস ব্রান তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতি লিটার রাইস ব্রান তেলের দাম পড়বে ১৪৮ দশমিক ৭৫ টাকা, যা আগে ছিল ১৫২ টাকা।

আইএমইডির প্রতিবেদন: পায়রা বন্দর প্রকল্পে আর্থিক অনিয়ম

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১২:০৮ পিএম
আইএমইডির প্রতিবেদন: পায়রা বন্দর প্রকল্পে আর্থিক অনিয়ম
ছবি: সংগৃহীত

পায়রা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এর বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৫ সালে। এই প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় পর খরচ বেড়ে ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকায় ঠেকেছে। বেড়েছে ৩ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা বা ২৮৭ শতাংশ। প্রকল্পের শুরুতে বাস্তবায়নের সময় ধরা হয় তিন বছর। পরে ছয়বার সংশোধন করে ৯ বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে সরকারি অর্থ সঠিকভাবে খরচ হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখে পরিবহন অডিট অধিদপ্তর।

অডিটে প্রকল্পের শুরু থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ১৩টি আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। আপত্তিগুলোর অধিকাংশই গুরুতর আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এই অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, পায়রা বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি ‘ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত’।

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ক্যাপ্টেন মনিরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, অনেকে বলছেন, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে ৯৩ শতাংশ। বাকি ৭ শতাংশ কাজের মধ্যে ৮০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ নাও হতে পারে।

কারণ এখনো সুবিধাভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। তারা খাস জমিতে বসবাস করায় কাজে সমস্যা হচ্ছে।

অডিট আপত্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিচারাধীন ব্যাপারে কথা বলা ঠিক না। কারণ, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রথমে অনিয়ম হয়েছে বলে অডিটে আপত্তি দেওয়া হয়েছে, পরে খতিয়ে দেখা গেছে যে, সেই অনিয়মের অভিযোগ ঠিক নয়। আমার সঙ্গে কোনো কথা না বলে আইএমইডি থেকে এ ধরনের রিপোর্ট করা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। আলোচ্য প্রকল্পে কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

আইএমইডির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, পায়রা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সীমিত আকারে বন্দরের কার্যক্রম চালুকরণ এবং একটি পূর্ণাঙ্গ বন্দর গড়ে তোলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য একনেকে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর এই প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত অর্থাৎ তিন বছর। কিন্তু তিন বছর কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধন প্রস্তাব করা হলে একনেকে দ্বিতীয় দফায় ২০১৮ সালের ২০ মার্চ অনুমোদন দেয়। তাতে খরচ ধরা হয় ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এক লাফে খরচ বাড়ে ১৯৭ শতাংশ। তৃতীয় দফায় আবার সংশোধন করে সময় বাড়ানো হয় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।

জানা যায়, সময় ও অর্থ খরচ বাড়লেও কাজের অগ্রগতি ভালো হয়নি। তাই আবারও ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর সংশোধন করা হয়। তখন খরচ ধরা হয় ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। খরচ বেড়েছে ২৮৭ শতাংশ। ফলে এই প্রকল্পে মোট ৯ বছর সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

প্রকল্পের প্রধান কাজ ধরা হয় ৬ হাজার ৫৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ। এই ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত আনুমানিক ৩ হাজার ৫০০ পরিবারের পুনর্বাসন ও ৪ হাজার ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া। জাতীয় মহাসড়ক এন-৮-এর সঙ্গে পায়রা বন্দরের যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এবং আউটার বার ও নদীপথে চিহ্নিত বারগুলোর প্রয়োজনীয় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নৌপথে মালামাল ও কন্টেইনার পরিবহন নিশ্চিত করা।

ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প হওয়ায় আইএমইডি থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রকল্পটি তদারকি করা হয়। গত ১৯ আগস্টও পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে তখনো কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পে ৬ হাজার ৫৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ ধরা হলেও দখলপ্রাপ্ত হয়েছে ৫ হাজার ৩৯০ একর। এখনো ৯৪২ একর ভূমি অধিগ্রহণ বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়াধীন। আর ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৪টি প্যাকেজের আওতায় ৩ হাজার ২০০টির মধ্যে নির্মিত ২ হাজার ৬২৬টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট বাড়ি নির্মাণের জটিলতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং দ্রুত নির্মাণ শেষে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে বরাদ্দ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯২ শতাংশ। অবশিষ্ট কাজ শেষ হবে নির্ধারিত সময় ২০২৪ সালের জুনে।

প্রকল্পটির ওপর গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ডিপিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনে আবশ্যিকভাবে সমাপ্ত করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রকল্প পরিচালককে বাস্তব কাজের অগ্রগতি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তৎপরতা বৃদ্ধি এবং তদারকি আরও জোরদার করতে হবে। প্রকল্প সমাপ্তির তিন মাসের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাপ্ত প্রকল্প রিপোর্ট (পিসিআর) আইএমইডিতে জমা দিতে হবে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে ১৩টি অডিট আপত্তি তুলেছে পরিবহন অডিট অধিদপ্তর। উত্থাপিত আপত্তিগুলোর অধিকাংশই আর্থিক অনিয়মের পর্যায়ভুক্ত।

ঋণের সুদহারের করিডর প্রথা প্রত্যাহার

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ০৬:৫৮ পিএম
ঋণের সুদহারের করিডর প্রথা প্রত্যাহার
বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি : সংগৃহীত

ঋণের সুদহারের করিডর প্রথা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৯ মে) থেকে ব্যাংকগুলো নিজেরাই স্বতন্ত্রভাবে সুদহার নির্ধারণ করবে এবং তা নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।

বুধবার (৮ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের কথা ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে।

গত জুলাইয়ে ছয় মাসের ট্রেজারি বিলের গড় হার অর্থাৎ সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেটস অব ট্রেজারি বিল অ্যান্ড বন্ডস বা স্মার্ট রেট করিডর প্রথা চালু করে। এর আওতায় প্রতি মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্মার্ট রেট ঘোষণা করে আসছিল। সর্বশেষ গত মাসে এ স্মার্ট রেট করিডর অনুযায়ী ঋণের সুদহার দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ঋণের এ উচ্চ সুদহারের সমালোচনা করে ব্যবসায়ীরা তা কমানোর দাবি করে আসছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে কাজ চলছে। এ লক্ষ্য সামনে রেখে বাজারে টাকার সরবরাহ কমাতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই সুদহারে আপাতত ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়। এটিকে কন্ট্রাকশনারি বা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বলা হচ্ছে।

নীতি সুদহার বাড়ল

বুধবারই নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি ৫০ পয়েন্ট বেসিস বাড়িয়ে সাড়ে ৯ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছে এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি ৭ শতাংশ থেকে ৫০ পয়েন্ট বেসিস বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোকে তহবিল সংগ্রহে বাংলাদেশ ব্যাংককে বেশি সুদ দিতে হবে। অর্থাৎ তহবিল সংগ্রহে ব্যাংকের ব্যয় বাড়বে।

ডলারের বিনিময় হার ১১৭ টাকা

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ০৫:৩৪ পিএম
ডলারের বিনিময় হার ১১৭ টাকা
ডলার। ছবি : সংগৃহীত

ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে অবশেষে ক্রলিং পেগ মিড রেট (সিপিএমআর) ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সিপিএমআর-এ এক ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা থেকে এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা হয়েছে।

বুধবার (৮ মে) মনিটারি পলিসি কমিটির সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এক বিজ্ঞপ্তিতে ডলারের নতুন হার মেনে চলতে ব্যাংকগুলোকে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয় করা হলো।

বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহে ঘাটতি ও বিনিময় হারে অস্থিরতা কাটাতে গত বছর জুলাই থেকেই দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা বিনিময় হার বাজারমুখী করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে তাগিদ দিচ্ছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, ডলারের বিনিময় হার কম রয়েছে, যা বাজার দরের বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিহীন। এর ফলে রেমিট্যান্স বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে না এসে হুন্ডিতে চলে যেতে থাকে।

ডলার সরবরাহে ঘাটতির শুরু ২০২৩-এর মার্চ মাসের প্রথম দিকে। তখন এক ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ১০৪ টাকা। এ সময় হঠাৎ করেই প্রতি ডলারের দর ৩ টাকা বেড়ে ১০৭ টাকায় লেনদেন হয়। পরে মার্চের ৭ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে বিনিময় হার ১০৫ টাকায় উঠে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকের বাইরে নগদ ডলারের দাম গত বছর ১১০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো তখন দর আরও বাড়ার কথা জানায়। এ আশায় অনেকে ব্যক্তি পর্যায়ে ডলার সঞ্চয় করে ধরে রাখেন। শুরু হয় ডলারের দরে এক ধরনের অস্থিরতা। এ কারণে গত নভেম্বরে খোলা বাজারে ডলারের দর ১২৭ টাকা পর্যন্ত ওঠে। এই দর চলে ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। এ বছর মার্চে এসে নগদ ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১১৯ টাকা। যা ব্যাংকে পাওয়া গেছে ১১৬ টাকা বা আরও কম দরে। এমন অস্থিরতায় কমেছে ব্যক্তি পর্যায়ে বিদেশ ভ্রমণ, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসার প্রয়োজনে কিনতে আসা ডলারের দর।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনই ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ বা দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের এই পদ্ধতিটি ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এক দিনে টাকার সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন এর আগে ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এক দিনে বেড়ে ১১৭ টাকা মূলত ডলারের বিপরীতে টাকার একটি মধ্যবর্তী হার। ব্যাংকগুলো এর চেয়ে কম বা বেশি দাম নিতে পারবে, তবে সেটি খুব বেশি পার্থক্য করা যাবে না। ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন ডলার কেনাবেচার দামের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে।