সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে দেশি হাঁসের খামার দিয়ে নিজের ভাগ্য বদলেছেন আকবর আলী নাজিম। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন আরও ছয়জন যুবকের। খরচ বাদ দিয়ে হাঁসের খামার থেকে মাসে আয় করেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।
আকবর আলী নাজিম অষ্টগ্রাম উপজেলার মধ্য অষ্টগ্রামের হাটখোলা গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। উপজেলার কাস্তল ইউনিয়নের ভাতশালা এলাকায় এ হাঁসের খামারটি দিয়েছেন তিনি। বিস্তীর্ণ হাওরের মধ্য দিয়ে তৈরি অলওয়েদার সড়কের পাশেই তার খামার।
স্থানীয়ভাবে দেশি হাঁসের মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। হাঁসের খামার দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন আকবর। প্রায় ৪০ বছর ধরে বাবার হাঁসের খামারের ব্যবসা ছিল। তবে একটা সময় সে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৮ সালের পর তিনি নতুন করে আবার সে ব্যবসা শুরু করেন। বাবার ব্যবসা ধরে রাখতেই হাঁসের খামার দিয়েছেন বলে জানান এই উদ্যোক্তা। বর্তমানে খুচরা এক হালি হাঁসের ডিম কিনতে হলে গুনতে হয় ৮০ টাকা। আকবর আলীর সফলতা দেখে বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে এলাকার অনেকেই উৎসাহিত হয়ে ছোট-বড় খামার গড়ে তুলছেন। তাদের সফলতা দেখে খুশি আকবর আলীও।
বর্তমানে আকবর আলীর দুটি হাঁসের খামার আছে। একটি খামারে ২ হাজার ৬০০টি হাঁস এবং অন্যটিতে ১ হাজার ৪০০টি হাঁস রয়েছে। খামার দুটি থেকে প্রতিদিন ৩ হাজার ৩০০ ডিম বিক্রি করেন। প্রতিদিন ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকার ডিম বিক্রি হয়। খামারের কর্মচারীর বেতন ও হাঁসের খাদ্য ধান, ফিড কেনা বাবদ প্রতিদিন ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়।
ভাতশালা হাওরে হাঁসের খামারে কাজ করেন ছয়জন কর্মচারী। খামারের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব সময় হাঁসের যত্ন নিতে হয়। সঠিক সময়ে খাবার দিতে হয়। শামুক, ধান, ফিড এসব খাবার দিতে হয়।
ময়মনসিংহের তাড়াইলের দামিহা থেকে খামারের ডিম কিনতে এসেছেন মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে প্রতি পিস ডিম ১৭ টাকা দরে কিনি। আমাদের হ্যাচারিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিমগুলো নেওয়া হয়। আকবর আলীর খামারে নিয়মিত ডিম কিনতে আসি।’
আকবর আলীর সঙ্গে খামারের অংশীদারিতে ব্যবসা করছেন তার বন্ধু আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমি আলাদাভাবে হাঁসের খামার দিতে চেয়েছিলাম। আমার বন্ধু আমাকে সহযোগিতা করেছে। তার অংশীদার হয়ে কিছু টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছি। আমি আমার পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক ভালো আছি।’
আকবর আলী বলেন, ‘ফাজিল পাস করে চাকরির জন্য চেষ্টা করেছি। সরকারি চাকরির জন্য অনেক আবেদন করেছি, পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু চাকরি পাইনি। সবশেষে হাঁসের খামার দিয়েছি। ছাত্রজীবনে যুব উন্নয়ন থেকে ৭৫ দিনের একটি প্রশিক্ষণ নেই। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করি। যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ নিয়ে আমি ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করেছি। তরুণ বেকারদের উদ্দেশে বলব, বেকার না থেকে হাঁস পালন করুন। আর্থিক অভাব অনটন দূর হয়ে যাবে। উদ্যোগ নিয়ে শুরু করলে অবশ্যই সফলতা আসবে।’
এ বিষয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল খবরের কাগজকে বলেন, ‘অষ্টগ্রাম উপজেলায় মোট ৮৭টি হাঁসের খামার রয়েছে। অনেকেই হাওরের বিস্তৃত অনাবাদি জমিতে হাঁসের খামার দিচ্ছেন। উন্মুক্তভাবে হাঁসের খামার দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন অনেক খামারি। এ সপ্তাহে হাঁস পালন পদ্ধতির ওপর প্রাণিসম্পদ অফিসে তিন দিনের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। ছয়টি ব্যাচে ২৫ জন করে মোট ১৫০ জনকে হাঁস পালন পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া নিয়মিত উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে হাঁসের খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। হাঁসের টিকা, চিকিৎসা ও যত্নের জন্য আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি।’