![চট্টগ্রামে প্রসাধনীর বাজার চড়া](uploads/2024/04/04/1712214815.ctgt.jpg)
দেশজুড়ে ভোগ্যপণ্যের দামে চলছে অস্থিরতা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার বেড়েছে সাবান, শ্যাম্পু, বডি স্প্রে, লিপস্টিক, ফেসওয়াশসহ বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীর দাম। কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ব্যবসায়ীরা জানান, ডলার রেট বৃদ্ধি ও পরিবহন খরচ বাড়ার কারণেই এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি রোজার শেষ দশক চলে এলেও কেনাবেচা এখনো জমে ওঠেনি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম শহরের নিউমার্কেট, রিয়াজউদ্দীন বাজার, সেন্ট্রাল প্লাজা, ভিআইপি টাওয়ার, ফিনলে স্কয়ারসহ বেশকিছু মার্কেট ও শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে বডি স্প্রে, লিপস্টিক, ফেসওয়াশ, অলিভ অয়েল, সুগন্ধি সাবান, পাউডার ও হেয়ার কালারের দাম বেড়েছে। রোজা ও ঈদকে ঘিরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্যের জোগান থাকলেও গত বছরের তুলনায় বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রীতে ৩০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
লিপস্টিকে ১২০ টাকা বেড়ে মানভেদে ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, বডি লোশনে ১০০ টাকা বেড়ে ২৮০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, হেয়ার কালারে ১০০ টাকা বেড়ে ২২০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, ফেসওয়াশে ১০০ টাকা বেড়ে ৩০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, ফেস পাউডারে ১০০ টাকা বেড়ে ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, আইব্রাউতে ৮০ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ৪৫০ টাকা, বিভিন্ন সুগন্ধি সাবানে ৩০ টাকা বেড়ে ৯০ থেকে ২৫০ টাকা এবং বডি স্প্রেতে ৫০ টাকা বেড়ে মানভেদে ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরের সেন্ট্রাল প্লাজার প্রসাধনী দোকান ভেনাসের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রসাধন পণ্য কিনি। ডলার রেট বাড়ার কারণে আমদানিকারকরা বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। তাই খুচরা পর্যায়েও দাম বেড়েছে।’
নিউমার্কেট এলাকার প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রির প্রতিষ্ঠান নুর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ দিদার হোসেন বলেন, ‘সব ধরনের প্রসাধন পণ্যের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি এ সময় ক্রেতারা বিশেষ করে নারীদের সমাগম বেশি থাকার কথা। আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রেতা নেই। আশা করছি শুক্রবার বন্ধের দিন থেকে আমরা ভালো ব্যবসা করতে পারব।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, গত বছর যে বডি স্প্রে ২৫০ টাকায় কিনেছি, এখন তা ৫০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ডলার সংকটের অজুহাত দিয়ে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।’
বাড়তি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসাধনী ব্র্যান্ড ওয়েট এন ওয়াইল্ড বিউটির প্রতিনিধি মোহাম্মদ দিদার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির নির্ধারিত দরেই আমরা পণ্য বিক্রি করি। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না।’
সেন্ট্রাল প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হিরন খবরের কাগজকে বলেন, এখন শুধু প্রসাধন সামগ্রী নয়, সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। ভালো প্রসাধনী আমদানি করতে হয়। ডলার রেট বাড়ার কারণে এসব পণ্যের দামও বেড়েছে।’
তবে অভিযোগ আছে কিছু অসাধু বিক্রেতা অনেক সময় নকল প্রসাধনী বিক্রি করে থাকেন। এ ছাড়া আমদানিকারকরা পণ্যের যে মূল্য নির্ধারণ করে দেন, তা পরিবর্তন করে বেশি মূল্যে বিক্রি করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ফলে বেশি দাম দিয়ে নকল প্রসাধনী কিনে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক ক্রেতা।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে এক প্রতিবেদনে প্রসাধন পণ্যের বিষয়ে নানা অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, খুচরা ব্যবসায়ীরা আমদানিকারকদের প্রাইসট্যাগ ফেলে দিয়ে প্রাইসগান মেশিনের সাহায্যে ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রসাধন পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের তথ্য, উপাদান, পরিমাণ, ব্যবহারবিধি, উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকে না। ফলে নকল প্রসাধনী কিনে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, আমদানি করা প্রসাধনীতে আমাদানিকারকের স্টিকার থাকবে, পণ্যের মূল্য, মেয়াদ ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে। ক্রেতাদের এসব যাচাই করে পণ্যগুলো কিনতে হবে। পাশাপাশি আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা আবার অভিযান পরিচালনা করে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। কোনো প্রকার নকল প্রসাধনী বা অনিয়ম পেলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, শীতকালে প্রসাধনীর চাহিদা বেশি থাকে। পাশাপাশি ঈদের সময় এসব পণ্যের চাহিদা কিছুটা বাড়ে। তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা নামিদামি ব্র্যান্ড নকল করে বাজারাজাত করেন। আর এসব নকল পণ্য কিনে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। ঈদ ঘনিয়ে আসছে। বিভিন্ন শপিংমল বা মার্কেটে ক্রেতা সমাগম বাড়বে। তাই এখন থেকেই সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।