![টাঙ্গাইলে বাঁশ-বেতের হস্তশিল্প আর্থিক উন্নতিতে অবদান রাখছে](uploads/2024/04/04/1712216073.bas.jpg)
একটা সময় যেসব মানুষ বাড়িতে বেকার বসে থাকতেন এখন তারাই বাঁশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী তৈরি করে সংসারের হাল ধরছেন। গৃহিণীরা নিজের বাড়িতে বসেই কাজ করতে পারছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার ফাঁকে বাঁশ বেতের কাজ করে আয় করতে পারছেন। বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্প টাঙ্গাইলের কয়েকটি গ্রামের মানুষের আর্থিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পেশায় আসছে পরিবর্তন। আগে যেসব মানুষ বাইরে দিন মজুরের কাজ করতেন, তারা এখন নিজের বাড়ি বসেই কাজ করতে পারছেন। আর এসবেই সম্ভব হয়েছে বাঁশ ও হস্তশিল্পের সম্প্রসারণের জন্য।
সম্প্রতি সরেজমিনে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার বর্ণী, প্রয়াগজানী ও কোপাখী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে নারী-পুরুষরা বাঁশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দেখে মনে হবে পুরো গ্রামই যেন কুটির শিল্পের কারখানা। এসব গ্রামের প্রায় সব বাড়ির বেশির ভাগ লোক বাঁশ-বেত দিয়ে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী তৈরি করেন। অনেকেই প্রধান পেশা হিসেবে নিয়েছেন আবার কেউবা অতিরিক্ত আয়ের আশায় অবসর সময়ে তৈরি করছেন বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন পণ্য।
তাদের মূল উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন বারপাখিয়া গ্রামের আন্তর্জাতিক কারু শিল্পী নূরুন্নবী। তিনি বর্ণী দক্ষিণ পাড়ায় নূরুন্নবী ব্যাম্বো ক্রাফট নামে একটি কারখানা গড়ে তুলেছেন। সেখানে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন নারী-পুরুষ প্রতিদিন কাজ করেন। এ ছাড়াও প্রায় শতাধিক পরিবার বাড়িতে বসে কাজ করেন। তাদের তৈরি করা পণ্য নূরুন্নবীর কারখানায় বিক্রি করেন।
কারুশিল্পী নূরুন্নবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯০ সাল থেকে তিনি হস্তশিল্পের কাজ করছেন। ২০০৪ সালে তিনি কারখানাটি গড়ে তুলেন। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের বাস্কেট, টেবিল ল্যাম্প, প্লেস ম্যাট, বিভিন্ন ধরনে ট্রে, মোড়া, ফলের ঝুড়ি, টিস্যু বক্স, গয়নার বক্স, জানালার পর্দা, ঝুড়িসহ নানা ধরনের সৌখিন পণ্য তৈরি করছেন। রাজধানী ঢাকার বড় বড় শপিং মলের দোকানিরা তার প্রধান ক্রেতা। এ ছাড়াও বিভিন্ন রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে প্রায় ১০ থেকে ১২টি দেশে তার বাঁশ-বেতের তৈরি হস্তশিল্প রপ্তানি হচ্ছে।
কারুশিল্পী নূরুন্নবী খবরের কাগজকে বলেন, ‘গ্রামের অনেক মানুষ বেকার থাকত। কিন্তু এখন অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। এখানকার কোনো মানুষ এখন আর বেকার বসে থাকেন না। প্রায় সবাই এখন বাঁশ-বেতের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অনেকের সংসারের ব্যয় মিঠানোর জন্য এখন আর বাইরের কাজে যেতে হয় না। এখানে কাজ করেই তাদের সংসার চালাতে পারছেন।’
নুরুন্নবী ব্যাম্বো ক্রাফটে কাজ করা ইমরান হোসেন বলেন, ‘এখানে কাজ করে পরিবার নিয়ে ভালোভাবে সংসার চালাতে পারছি। এখন আর আর্থিক অনটনে পড়তে হয় না। লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করে সংসার চালাই। লেখাপড়াও চলে, ভালোভাবে সংসারও চলে।’
রাজিয়া বেগম নামে একজন বলেন, ‘আগে মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম। এখানে এসে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করি। সপ্তাহ শেষে মজুরি পেয়ে সুন্দরভাবে সংসার চালাতে পারছি। সংসারে এখন কোনো অভাব নেই। এ কাজে অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম করতে হয় না।’
টাঙ্গাইল শহর থেকে বাঁশের জিনিসপত্র কিনতে আসা রিমি রহমান বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর কাছে শুনলাম, দেলদুয়ারে বাঁশের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। আমি কয়েকটা পণ্য কিনলাম অনেক সুন্দর।’
রাহাত সরকার নামে একজন বলেন, ‘আসলে সচরাচর এই ধরনের বাঁশের তৈরি জিনিস পাওয়া যায় না। আমরা চাই সরকার প্রণোদনার মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করুক।’
অলক কুমার নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘আমাদের এলাকায় অনেক বেকার যুবক ছিল। কিন্তু এখন এই বাঁশ-বেতের কাজ করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমাদের এলাকাকে অনেকটা বেকার মুক্ত ঘোষণা করা যায়। আর এসবেই সম্ভব হয়েছে বাঁশ ও বেতের হস্ত শিল্পের সম্প্রসারণের জন্য।’
জেলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জামিল হুসাইন বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেতের শিল্পের আরও সম্প্রসারণ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমি এ বিষয়ে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই তাদের পাশে থাকব। বিসিক সব সময় ক্ষুদ্র শিল্পের পাশে আছে।’