![ব্যাংক একীভূতকরণে পিসিএ অনুসৃত হবে](uploads/2024/04/17/1713370170.Bangladesh_Bank.jpg)
সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকের সালভেশন বা মুক্তি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে চারটি দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করে সেগুলোর অ্যাকুজিশন বা মার্জারের আলোচনা এগিয়ে গেছে। দুটি ব্যাংকের একীভূতকরণের উদ্দেশ্যে চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। তবে এ তালিকায় নেই ইসলামি ধারার কোনো ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিতকরণে প্রম্প্ট কারেক্টিভ অ্যাকশন বা পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী মার্চের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকের সূচকসমূহ ধরা পড়বে ও পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে মূলধারা বা ইসলামি ব্যাংকিংয়ের বিভেদ করার সুযোগ নেই। দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ীই হবে। স্বেচ্ছায় না হলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে একটি সুযোগ্য শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একটি বা একাধিক দুর্বল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত করে দেবে।
দেশের ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ধারার ব্যাংকিং কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকটিও ইতোপূর্বে মার্জার বা একীভূতকরণের মাধ্যমে নতুন নামকরণ হয়েছিল। ব্যাংকটির আর্থিক সূচকে উন্নতি নেই। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি দেশের বৃহত্তম শক্তিশালী ব্যাংক। তৃতীয় ও নতুন প্রজন্মের ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর কয়েকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণে কিছুটা অস্বাভাবিক স্থিতি থাকলেও পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে সেগুলোর উন্নতি ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে এ ব্যাপারে দেওয়া ব্যাখ্যায় বলা হয়, ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর তারল্য সুবিধা নিয়ম-নীতি মেনেই দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকিং কোম্পানি আইন ও ইসলামি ব্যাংকিং গাইডলাইন অনুযায়ী তারল্য সুবিধা দেওয়ার বিধান রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যাংক মার্জার বা একীভূতকরণের ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিকমানের পদ্ধতি অনুসরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী ব্যাংক মার্জার বা একীভূতকরণের ক্ষেত্রে এ পিসিএ পদ্ধতিই অনুসৃত হবে।’
তিনি বলেন, পিসিএ ফ্রেমওয়ার্কে অসত্য আর্থিক সূচক দেওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং দুর্বল সূচক ধরা পড়বেই। এজন্যই ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে স্বেচ্ছায় একীভূতকরণের সুযোগ নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার পর বেসরকারি এক্সিম ব্যাংক গত ১৭ মার্চ পদ্মা ব্যাংককে অধিগ্রহণের ঘোষণা দেয়। সেই সূত্র ধরে গত ২৫ মার্চ দুই ব্যাংকের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। একীভূতকরণের লক্ষ্যে বর্তমানে ব্যাংক দুটির আর্থিক নিরীক্ষা কার্য চলমান।
এরপর ক্রমেই আলোচনায় আসে সরকারি খাতের চার ব্যাংক। কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে যাচ্ছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। পর্যায়ক্রমে আরও আলোচনায় আসে সরকারি বেসিক ব্যাংক যাচ্ছে বেসরকারি খাতের সবল ব্যাংক সিটি ব্যাংকের সঙ্গে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলেনি। তবে, আপাতত নতুন আর কোনো ব্যাংক একীভূতকরণ নয় বলেও জানিয়েছেন মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। তিনি বলেন, মার্জার বা একীভূতকরণের ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যাংকটি অস্তিত্ব হারালেও এর কোনো আমানতকারীর স্বার্থ ব্যাংক মার্জার বা একীভূত হোক অথবা বৃহৎ বা বড় ব্যাংক কর্তৃক আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংক অধিগ্রহণই হোক- এটি উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব নীতি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
গুরুতর কোনো অপরাধ বা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ না থাকলে কেউ চাকরি হারাবে না। তবে, সবল ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর হতে যাওয়া দুর্বল ব্যাংকটির পর্ষদের কোনো সদস্য বা শেয়ারধারী অন্তত পাঁচ বছর পরিচালক পদে নিয়োগ পাবেন না।