বাংলাদেশ অটোকারসের তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ । খবরের কাগজ
ঢাকা ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

বাংলাদেশ অটোকারসের তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৬ পিএম
বাংলাদেশ অটোকারসের তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ
ছবি : সংগৃহীত

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ অটোকারস লিমিটেড গত ৩১ মার্চ সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়।

কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি’২৪-মার্চ’২৪) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১১ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছিল ৪৭ পয়সা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ০৭ টাকা ২৭ পয়সা।

নূর/সালমান/

একনেকে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৩:৫৯ পিএম
একনেকে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন
ছবি : সংগৃহীত

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় দুই হাজার কোটি টাকা বেশি। 

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার। এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম ও প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার উপস্থিত ছিলেন। 

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এবারের এডিপিতে রয়েছে ১ হাজার ৩২১টি প্রকল্প। এতে সরকারি ব্যয় হবে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান থেকে আসবে ১ লাখ কোটি টাকা।

সালমান/ 

পুঁজিবাজার উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ চায় ডিএসই

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০১:০২ পিএম
পুঁজিবাজার উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ চায় ডিএসই
মার্চেন্ট ব্যাংক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে ডিএসই চেয়ারম্যান

একটি উন্নত দেশের পুঁজিবাজার সে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্যান্য দেশে দেখা যায়, সে দেশের মানি মার্কেট যতটা সাপোর্ট দেয় পুঁজিবাজারও ততটুকুও সাপোর্ট দেয়। আমরা সব সময় বলে আসছি যে পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ না করলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল হবে না‌। । আপনারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কথা বলেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও কিন্তু বলে থাকেন বাজারে উত্থান পতন থাকবে। কিন্তু আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখানে এসে পরের দিনই লাভ তুলতে চান। আর এ কারণেই বড় পতন হয়। সে জায়গাতে আমাদের সকলের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। 

গতকাল বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাজেদা খাতুনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের কমিটির সঙ্গে বৈঠককালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান, সিপিএ, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারের অন্যতম স্টেকহোল্ডার হলো মার্চেন্ট ব্যাংক। 

শেয়ারবাজারের টেকসই উন্নয়নে ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানো, সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মধ্যে সমন্বয় এবং বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বাড়ানো মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর অন্যতম প্রধান কাজ। দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি অনুকূলে নয়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে বোঝা যায়, বাজারে অর্থের জোগান কম ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার নির্দেশ দিয়েছেন, যা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যা ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ ও সাহস জোগাচ্ছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ভূমিকা পালনের মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব। 

ড. হাসান বাবু আরও বলেন, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করের উল্লেখযোগ্য ব্যবধান না করা গেলে ভালো কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত করা যাবে না। বাংলাদেশে যেসব গ্রিন ফ্যাক্টরি রয়েছে সেগুলো তালিকাভুক্তিতে কাজ করতে হবে।

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি তথা ভালো কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা। যা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে  আকৃষ্ট করে। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে কথা বলতে হবে। নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। বাজার উন্নয়নে যদি ডিএসই, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ডিবিএ একসঙ্গে কাজ করে তাহলে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান, আমরা বিগত ২৫ বছর ধরে এ কাজটি করার চেষ্টা করছি। আমরা গত ৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে একটি চিঠি দিয়ে সরকারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করতে চেয়েছি, যাতে তারা সহজে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারে। এর কিছুদিন পর প্রধানমন্ত্রী এই যুগান্তকারী নির্দেশনাটি দিয়েছেন। আশা করছি আগামী জুন মাসের মধ্যে আমরা সচেতনতামূলক কর্মসূচিটি করতে পারব। আর এই বিষয়ে আপনাদের আমরা সহযোগী হিসেবে চাই।

তার আগে মার্চেন্ট ব্যাংকের সভাপতি মাজেদা খাতুন ও অন্য বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই চিন্তা করছেন কীভাবে মার্কেটের উন্নয়ন করা যায়। এতে আমরা মার্চেন্ট ব্যাংকার্সরা উৎসাহিত হয়েছি। আমাদের মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে দীর্ঘদিনের একটি দাবিছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসুক। কারণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো অনেক বড় সাইজের কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলো মার্কেটে এলে মার্কেটের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হবে, যা আমরা দেখতে পারব। যে জটিলতায় হোক বা যে কারণেই হোক বিষয়টি এতদিন আটকে ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাটা যেহেতু চলে এসেছে, আশা করছি এই বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব শিগগির কাজ শুরু করতে পারব।

এ ছাড়া অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাজার উন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে দ্বৈত কর পরিহার,  গুণগত মানসম্পন্ন আইপিও আনা, আইপিও প্রাইসিং সিস্টেম, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, মার্জার একুইজেশন, পলিসিগত প্রতিবন্ধকতা, ঘন ঘন আইন-কানুন পরিবর্তন না করা, কাট-অফ মূল্যের অধিক মূল্যে বিডকারীদের প্রোরাটার ভিত্তিতে সিকিউরিটিজ প্রদান, আইপিওর কোটা ও লক-ইন পিরিডের কিছু সংশোধনী আনা, সিকিউরিটিজ ভ্যালুয়েশনের ক্ষেত্রে মার্কেট অ্যাপ্রোচ ও ইনকাম অ্যাপ্রোচ মেথড অনুসরণ করা, বিডিংয়ের সম্মতি পাওয়ার পরই রোডশোর আয়োজন করা, মার্জিন ঋণের আইনে কিছু পরিবর্তন আনা, গবেষণায় জোর দেওয়া ইত্যাদি বিষয় অন্যতম।  আমরা আশা করি, বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সব রেগুলেটর এ সকল সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করবে।

বাজারে উঠবে দেড় শ কেজির পাঙাশ!

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১২:৪৭ পিএম
বাজারে উঠবে দেড় শ কেজির পাঙাশ!
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের গবেষণা পুকুরে পাঙাশ হাতে চার ব্যক্তি। খবরের কাগজ

বাংলাদেশের বাজারে সাধারণত এক থেকে চার কেজি ওজনের পাঙাশ মাছ বেশি পাওয়া যায়। তবে মাঝেমধ্যে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ওজনের পাঙাশ পাওয়া গেলেই ক্রেতাদের মধ্যে হৈচৈ পড়ে যায়, দেখতে ভিড় জমান তারা। বিক্রেতারাও একটু বেশি দামে বিক্রির জন্য খুশি মনে দামাদামি করতে থাকেন। তবে এবার একটু বেশি ওজনের নয়, প্রতিনিয়তই বাজারে উঠবে দেড় শ কেজির পাঙাশ। দামও থাকবে হাতের নাগালে। এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। মাছগুলো থেকে প্রজনন করে এদের বংশ বিস্তারের চেষ্টা করছেন গবেষকরা।

সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের গবেষণা পুকুরে দৈত্যাকৃতির পাঙাশ মাছ রয়েছে। এগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতের পাঙাশ, যা ‘মেকং জায়ান্ট ক্যাটফিশ’ নামে পরিচিত। এদের একেকটির ওজন ১২০ থেকে ১৬০ কেজি।  

মহাবিপন্নের তালিকায় থাকা মেকং নদীর এসব মাছ ৩০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি দুটি নয় বর্তমানে বিএফআরআইয়ের গবেষণা পুকুরে রয়েছে রুপালি ধূসর রঙের বৃহদাকার অর্ধশত মেকং জায়ান্ট পাঙাশ। এই পাঙাশ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, এর প্রজননে সফলতা অর্জিত হলে দেশে পাঙাশ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে।

বিএফআরআই সূত্রে জানা গেছে, মাছটির প্রাকৃতিক আবাসস্থল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেকং নদী অববাহিকায়।  ২০০৫ সালে বিশ্বের অন্যতম স্বাদুপানির বৃহত্তম মাছ হিসেবে এই মাছের নাম গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে ওঠে। অতিরিক্ত আহরণ এবং বাসস্থানের ক্ষতির কারণে বর্তমানে এটি তার জন্মস্থানে বিপন্ন প্রায়। বিএফআরআইয়ের গবেষণা পুকুরে থাকা  এই মাছের বংশবিস্তারের চেষ্টা করছেন গবেষকরা।

বিএফআরআইয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রিজভী আহমেদ বলেন, ‘মেকং জায়ান্ট পাঙাশ মহাবিপন্ন তালিকায় থাকা একটি মাছ। যার সংরক্ষণ ও প্রজনন শুধু দেশের জন্য না, সারা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই মাছের জীবনকাল ১৭ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত। বর্তমানে পাঙাশের উৎপাদন সাড়ে ৪ লাখ টন। তবে এই মাছ থেকে পোনা মিললে মাছে নতুন বিপ্লবের সূচনা হবে।’

ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আসফ উদ দৌলাহ বলেন, ‘পাঙাশ মাছের এই প্রজাতিটির চোয়াল ও দাঁত নেই। এটি তৃণভোজী কিন্তু রাক্ষুসী নয়। ১০ মিটারের বেশি গভীর জলাশয় এদের বসবাসের আদর্শ জায়গা। মাছটি পানির নিচে পাথর কিংবা নুড়ি স্তরে থাকতে পছন্দ করে। একটি পরিপক্ব মা মাছ থেকে প্রজননকালে প্রায় ৬০ থেকে ৮০ লাখ ডিম পাওয়া যায়। আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে মাছটির প্রজনন সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন সম্ভব হলে, এগুলো মাত্র ১ বছরে ৯ থেকে ১২ কেজি ওজনের হবে। যা দেশি পাঙাশের তুলনায় ছয়গুণ বেশি।’

বিএফআরআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘মেকং জায়ান্ট পাঙাশ মেকং নদীর একটা মাছ। মেকং নদীর চীন, লাউস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম হয়ে ইয়োলো সাগরে পড়েছে। সেই নদী থেকে ২০০৬ সালে এই মাছটি নিয়ে এসেছিলেন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রেনি ফিশারিজের কর্ণধার রেজা আলী। উনি ২০১৫ সালে আমাকে ৫০টি মাছ দিয়েছিলেন। বর্তমানে এই মাছগুলোর একেকটির ওজন ১২০ থেকে ১৬০ কেজি। যার সর্বোচ্চ ওজন হতে পারে ৩০০ কেজি পর্যন্ত।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. জুলফিকার আলী বলেন, ‘কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে চাষি পর্যায়ে মাছটি পৌঁছানো গেলে বাংলাদেশে পাঙাশ চাষে বিপ্লব ঘটবে। চাষিরা অল্প খরচে অনেক লাভবান হবেন। ক্রেতারাও ন্যায্য দামে মাছটি কিনতে পারবেন। এটি দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিশ্বের বাজারেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।’  

লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের বাম্পার ফলন

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১২:৪২ পিএম
লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের বাম্পার ফলন
লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরের হায়দারগঞ্জে খেত থেকে সয়াবিন তুলছেন কৃষক

লক্ষ্মীপুর জেলায় এবার সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো বীজ বপন ও পরিচর্যা করতে পারায় সয়াবিনের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। মাঠ থেকে সয়াবিন তুলে মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তবে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ কৃষকরা।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে লক্ষ্মীপুর জেলায় ৪২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের চাষ হয়েছে। দেশের মোট উৎপাদিত সয়াবিনের মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলায় ৭০ শতাংশ উৎপাদিত হয়। সয়াবিন উৎপাদনে লক্ষ্মীপুরের পরের অবস্থানে রয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা নোয়াখালী। জেলায় এবার উচ্চফলনশীল নতুন জাতের বিইউ-১, বিইউ-২, বারি-৫ ও ৬, বিনা-৫ ও ৬ জাতের সয়াবিন চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষকরা। এ বছর সয়াবিন থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৫ হাজার ৪০ মেট্রিক টন। তবে ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও উৎপাদন বেশি হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের হায়দারগঞ্জ, চরবংশী, সদরের চররমনী মোহন, চরউভুতি, কুশাখালীসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে সয়াবিনের খেত। সয়াবিন চাষাবাদে উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন এটির চাষাবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। অনুকূল আবহাওয়া, উন্নত জাতের বীজ বপন ও সময়মতো সার-কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারায় এবার সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে।

সয়াবিন চাষিরা জানিয়েছেন, মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়া ও তীব্র দাবদাহে সয়াবিনের ফলন নিয়ে শুরুতে শঙ্কা থাকলেও মাঠে রোগবালাইয়ের আক্রমণ না থাকায় ফলনে কোনো ক্ষতি হয়নি। গত বছরের চেয়েও ফলন বেশি হওয়ায় খুশি তারা। তবে দামে হতাশ চাষিরা। গত বছর প্রতি মণ গোটা সয়াবিন মৌসুমে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার তারা বিক্রি করছেন ২ হাজার ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায়। শ্রমিকের মজুরি, সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে এ দামের কোনো হিসাব মেলাতে পারছেন না চাষিরা। 

কমলনগরের চরলরেঞ্চ এলাকার সয়াবিন চাষি জসিম উদ্দিন, ভবানীগঞ্জের মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন চাষি জানান, এবার সয়াবিনের মণ ন্যূনতম আড়াই হাজার টাকা হলে চাষিরা উৎপাদন খরচ ওঠাতে সক্ষম হতেন। এ অঞ্চলে সয়াবিনভিত্তিক প্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে তোলা গেলে সয়াবিনের বাজারদর আরও ভালো পেতেন তারা। 

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহজাহান বলেন, ‘আমাদের দেশে উৎপাদিত সয়াবিন থেকে তেল উৎপাদন করা হয় না। দেশে উৎপাদিত সয়াবিন পোলট্রি খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।’ 

নুরনবী নামে কুশাখালী এলাকার এক কৃষক চার একর জমিতে সয়াবিনের চাষ করেছেন। তার চাষ  এক একর জমিতে ৩০ মণ সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে। বাকি তিন একর খেত থেকে সয়াবিন তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তবে বৃষ্টিপাত না থাকায় এবার সয়াবিনের ভালো ফলন হওয়ায় বেশ খুশি এ কৃষক। কিন্তু আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় কিছুটা হতাশাও প্রকাশ করেছেন তিনি।

চররমনীর কামরুল সরকার জানান, বিভিন্ন দুর্যোগের ফলে বিগত মৌসুমগুলোতে সয়াবিন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হতো। গত বছর সয়াবিন খেতের একরপ্রতি ২৮-২৯ মণ উৎপাদন হলেও চলতি খরিপ মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় কানিপ্রতি ৩০ মণেরও বেশি ফলন হয়েছে। উৎপাদিত সয়াবিনের গুণগত মানও ভালো। বর্তমান বাজারে মণপ্রতি ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৩৫০ টাকা ধরে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘ফলন ভালো হলেও দাম বাড়ে না। প্রতিবছর সার-কীটনাশকের দামসহ শ্রমিক খরচও বৃদ্ধি পায়। সে হারে সয়াবিনের বাজারদর বৃদ্ধি পাচ্ছে না। যার ফলে আশানুরূপ দাম পাওয়া যায় না।  দাম পাওয়া গেলে কৃষকরা সয়াবিন চাষে আরও বেশি আগ্রহী হতেন।’

রায়পুর উপজেলার মোল্লারহাট এলাকার স্থানীয় কৃষক মনির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘এবার বৃষ্টি না থাকায় সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ অঞ্চলে সয়াবিনভিত্তিক কোনো ইন্ডস্ট্রিজ বা শিল্প-কলকারখানা না থাকায় কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সয়াবিনভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন করা হলে কৃষকদের ন্যায্য দাম পাওয়ার পাশাপাশি লাঘব হবে এ অঞ্চলের বেকার সমস্যা।’

এদিকে সয়াবিন চাষাবাদকে লাভজনক উল্লেখ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ জানান, চাষিরা উন্নত জাতের বীজ বপন ও সুষম সার ব্যবহারের ফলে এবার লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে সয়াবিনের ভালো জাত কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করায় আগের চেয়ে ফলন অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে হেক্টরপ্রতি দুই টন সয়াবিন উৎপাদন হলেও ভবিষ্যতে উৎপাদন আরও বাড়বে। উৎপাদিত সয়াবিন শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা গেলে আমদানি-নির্ভরতা কমার পাশাপাশি সাশ্রয় হবে সরকারের অর্থ। 

চট্টগ্রামে বোরোর মৌসুমেও চড়া চালের বাজার

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১২:৩৯ পিএম
চট্টগ্রামে বোরোর মৌসুমেও চড়া চালের বাজার
চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে চালের পাইকারি বাজার। খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে আমনের ভরা মৌসুমে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। বোরো মৌসুমে চালের দাম কমবে এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলার ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বোরোর ভরা মৌসুম চলছে। চট্টগ্রাম বিভাগের ধান কাটাও প্রায় শেষ। কমেছে ধানের দামও। তবুও পাইকারি বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চাল।

জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে চালের দাম বাড়ানো হয়েছিল। গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আমনের মৌসুম শেষ ও ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে বস্তাপ্রতি চালে নতুন করে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বর্তমানে ধানের দাম কমলেও মিলের মালিকরা কম চাল সরবরাহ করছে- তাই দাম কমেনি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

এক মাস আগে মোটা সেদ্ধ চালের বস্তায় নতুন করে ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ২০০ টাকা, স্বর্ণা চালে ১৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪৫০ টাকা, নুরজাহান চালে ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬০০ টাকা, মিনিকেট চালে ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬৫০ টাকা, জিরাশাইল সেদ্ধ চালে ১৬০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৪৬০ টাকা ও নাজিরশাইল সেদ্ধ চালের বস্তায় ১০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

অপরদিকে মিনিকেট আতপ চালে ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৮৫০ টাকা, পাইজামে ১৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬৫০ টাকা, বেতি ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৭০০ টাকা ও কাটারি আতপ চাল ২০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ধানের ভরা মৌসুমেও আগের ওই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চালের বস্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাহাড়তলীর এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, ধানের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে চালের বাজার বাড়িয়ে রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এবার তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা এসব কিছুই হয়নি। ধানের দামটাও কমেছে। দেশের সব জায়গায় অধিকাংশ বোরো ধান মাঠ থেকে উঠে গেছে। তারপরও চড়া চালের বাজার। মিলের মালিকরা ইচ্ছে করেই চালের বাজার অস্থির করে রেখেছেন। তার ওপর বড় বড় শিল্পগ্রুপগুলো ধান জমিতে থাকা অবস্থায় কিনে ফেলেছে। সব মিলিয়ে মিলার ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।’

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বোরোর মৌসুমে চালের দাম কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু সে হিসেবে তো দাম এখনো কমে নাই। অথচ ধানের দামও কমেছে। বস্তাপ্রতি ৪০০ টাকা কমে এখন মণপ্রতি ধান ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সরকার ধানের বস্তায় ছয় ধরনের তথ্য দিতে বলেছে। এটা বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক মিলার এটা এখনো বাস্তবায়ন করতে না পারায় চাল বাজারজাত করছে না। ফলে সরবরাহ কম থাকায় চালের দাম কমছে না।’ 

চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৮ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ

চট্টগ্রাম বিভাগে এবার ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ২৯ হাজার ২৩ হেক্টর জমির ফসল কাটা শেষ হয়েছে। এসব জমি থেকে এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৫১৩ টন ধান পাওয়া গেছে। চলতি মাসের মধ্যেই শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলায় ৬৮ হাজার ৭৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ হাজার ৭৮৩ হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় ৫৫ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমির মধ্যে ৩৬ হাজার ২ হেক্টর, নোয়াখালী জেলায় ৯৯ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির মধ্যে সবগুলো জমির ধান কাটা হয়েছে। এ ছাড়া ফেনী জেলায় ৩১ হাজার ২৭৭ হেক্টর জমির মধ্যে ২০ হাজার ৩৩০ হেক্টর এবং লক্ষ্মীপুর জেলায় ৩৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমির মধ্যে ২৬ হাজার ১৭৮ হেক্টর জমির ধান কেটেছেন কৃষকরা। 

এখন পর্যন্ত কাটা ফসল থেকে চট্টগ্রাম জেলার কৃষকরা ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৪১ টন, কক্সবাজার জেলার কৃষকরা ১ লাখ ৫০ হাজার ৬৭৫ টন, নোয়াখালী জেলার কৃষকরা ৪ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৭ টন, ফেনী জেলার কৃষকরা ৭৯ হাজার ৮৭১ টন ও লক্ষ্মীপুর জেলার কৃষকরা ১ লাখ ১১ হাজার ৫৯ টন ধান পেয়েছেন।

ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমনের মতো বোরোর মৌসুমেও চালের বাজার চড়া। এটা খুব দুঃখজনক। এটা তো হতে পারে না। আমাদের পরামর্শ হলো কৃষক থেকে শুরু করে খুচরা সব পর্যায়ে সমান নজরদারি রাখতে হবে। বাজারে অভিযান জোরদার করতে হবে। কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তাহলে চালসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে।’